পরিবেশ বা জলবায়ু নিয়ে কোনো চুক্তি ছাড়াই শেষ হলো সম্মেলন
কাঞ্চন কুমার দে: মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে টানা ১৩ দিন ধরে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৮ গত মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে। তবে বহুল আলোচিত এই সম্মেলন পরিবেশ বা জলবায়ু নিয়ে কোনো চুক্তি ছাড়াই শেষ হয়ে গেছে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বেলা ১১টায় সম্মেলন শেষ হওয়ার কথা ছিল। চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য সময়সীমা বাড়ানো হয়, সেই নির্ধারিত সময়সীমাও পেরিয়ে যায় চুক্তি ছাড়াই।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্মেলনে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পায় জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধের বিষয়টি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঐকমত্যে আসতে পারেননি সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা। এবারের কপ-২৮-এর সভাপতি সংযুক্ত আরব আমিরাতের শিল্প ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রী সুলতান আহমেদ আল-জাবের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মেলন শেষ হওয়ার আগেও চুক্তিতে পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন। ৬ ডিসেম্বরও চুক্তিতে পৌঁছানোর বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন তিনি। কিন্তু সেটি হয়নি।
জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনের ‘কপ-২৮’ আলোচনায় অংশ নেওয়া দেশগুলোর মধ্যে মতবিরোধের কারণে চুক্তি হওয়ার বিষয়ে জটিলতা তৈরি হয়। এর কারণ, বেশ কয়েকটি দেশ জীবাশ্ম জ্বালানি-সম্পর্কিত খসড়া চুক্তিটিকে ‘দুর্বল’ বলে আখ্যা দিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে। এর আগের একটি খসড়া প্রস্তাবে লেখা হয়েছিল, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দেওয়া হবে। কিন্তু সর্বশেষ এই খসড়ায় সে কথা রাখা হয়নি।
সম্মেলনে কোনো চুক্তি হতে হলে অংশগ্রহণকারী ১৯৮টি দেশের প্রত্যেককেই এ বিষয়ে অবশ্যই একমত হতে হতো। কিন্তু তেমনটা না হওয়ায় এবারের কপ-২৮ সম্মেলন কোনো ধরনের ঐকমত্য ছাড়াই শেষ হয়েছে।
ইতিমধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারে বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করেছে এবং লাখ লাখ মানুষের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়েছে। কিন্তু কখন বা কীভাবে এটি ব্যবহার করা হবে, সে বিষয়ে কোনো দেশের সরকার কখনোই একমত হয়নি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক প্রতিনিধি ওই খসড়া ‘গ্রহণযোগ্য নয়’ বলে মন্তব্য করে বলেন, তারা ওই আলোচনা থেকে সরে দাঁড়াতে পারেন।
আয়ারল্যান্ডের পরিবেশমন্ত্রী এবং ইইউর পক্ষে মধ্যস্থতাকারী এমন রায়ান বলেছেন, ‘আমরা খসড়া প্রস্তাবটি সমর্থন করি না।’ তবে তিনি এটাও বলেছেন, এই আলোচনায় সফল হতে না পারা ‘বিশ্বের কাছে কাক্সিক্ষত নয়’।
এর আগে সম্মেলনের সভাপতি শিল্প ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী সুলতান আহমেদ আল-জাবের নিজেই বলেছিলেন, জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধের পক্ষে কোনো বৈজ্ঞানিক আলোচনা নেই। তিনি বলেছিলেন, এমন কোনো বিজ্ঞান নেই, যা নির্দেশ করে যে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হলে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করা প্রয়োজন।
লেখক: সাংবাদিক ও জলবায়ু গবেষক
বিআলো/তুরাগ