পাট পণ্যের বিশ্ব বাজার বাংলাদেশের দখলে থাকবে: নানক
নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় পাট পণ্য রফতানি হচ্ছে বলে জানিয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, পাট পণ্য রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে আমাদের উদ্যেক্তারা। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক হস্তশিল্প মেলায় আমাদের পাট পণ্য প্রদর্শিত হচ্ছে এবং প্রচুর ক্রয় আদেশ পাওয়া যাচ্ছে। আগামী দিনগুলোতে পাট পণ্যের বিশ্ব বাজার আমাদের দখলে থাকবে।
৮ জুন, শনিবার ফরিদপুরে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি অডিটোরিয়ামে পাট চাষী, মিল মালিক, ব্যবসায়ী এবং পাটখাত সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ফরিদপুর জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় পাট অধিদফতর এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী এবং ফরিদপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মো. আব্দুর রহমান সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী বলেন, গত ৬ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপনের প্রাক্কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ভ্যানিটি ব্যাগ সঙ্গে নিয়েছেন তা পাটের তৈরি। সেদিন তিনি যে শাড়ি পড়েছেন তা পাটের তৈরি। গত সপ্তাহে জাতীয় চা দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন পাটের কলি থেকে ‘জুট টি’ তৈরি করতে হবে। কাজেই তিনি পাট ও পাট জাত পণ্যকে কতটা গুরুত্ব দেন তা বোঝা যায়। তিনি পোশাক শিল্পকেও এভাবে উৎসাহ দিয়েছিলেন যেটি এখন আমাদের প্রধান রফতানি খাত।
তিনি বলেন, পাট জাগ দেয়ার জন্য অনেক এলাকায় পানি ও পুকুর সহজপ্রাপ্য নয়। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি ছোট একটা জায়গায় পাট জাগ দেয়া যায় কিনা বা ক্যামিকেল ব্যবহার করে সহজে পাট ব্যবহার উপযোগী করা যায় কিনা।
পাট চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে তিনি উঠান বৈঠক আয়োজন করতে এবং তাতে জনপ্রতিনিধিদের অংশ নেয়ার আহ্বান জানান।
মন্ত্রী বলেন, পাটের বীজ আমদানি নির্ভরতা কমাতে হবে। সার, কীটনাশক ও ভালো বীজের জোগান দিতে হবে। ধান, চাল, গমের জন্য পাটের ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে। ফরিদপুর অঞ্চল যেহেতু পাট উৎপাদনে সমৃদ্ধ সেহেতু পাটবীজ উৎপাদনেও এখানকার পাট চাষীদের অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। এজন্য আপনাদের সব সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
সম্মানিত অতিথি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুর রহমান বলেন, পাট একটি চ্যালেঞ্জিং সেক্টর। তবে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এই পাট শিল্পকে সমৃদ্ধ করতে প্রাণান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, পাট শিল্পকে বহুমুখী উৎপাদনের আওতায় আনতে হবে। পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বাড়লে সরবরাহ করার প্রবনতা বাড়বে। আর চাহিদা বাড়ানোর জন্য পাটের বহুমুখী ব্যবহারের দিকে জোর দিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, চাষীরা তখনই পাট চাষের উৎসাহ পাবেন যখন তারা ভালো বীজ পাবেন, সঠিকভাবে পাট জাগ দিতে পারবেন এবং তাদের উৎপাদিত পাটের নিরাপদ বাজারজাত করতে পারবেন ও ন্যায্য দাম পাবেন। তিনি পানি ছাড়াই পাটের আঁশ ছাড়ানোর কোনো পদ্ধতি উদ্ভাবন করা যায় কিনা তা ভেবে দেখার আহ্বান জানান। এছাড়া পাট জাগ দেয়ার বিষয়ে পানি সংকট দূর করতে তিনি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে সমস্যা সমাধানের পরামর্শ দেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে পাট চাষী, ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা বলেন, পাট গাছের জন্য কার্যকর কীটনাশক দরকার। পাট জাগ দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পানির ব্যবস্থা করতে হবে। পলিথিনের বিকল্প সহজলভ্য করতে হবে। পাটের বস্তা, ব্যাগ ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে। পাট চাষীদের প্রণোদনা দেয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদারের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন ফরিদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাহদাব আকবর চৌধুরী লাবু, জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ঝর্ণা হাসান, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুর রউফ, পাট অধিদফতরের মহাপরিচালক জিনাত আরা, ফরিদপুর জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম, ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক আরিফ প্রমুখ।
এছাড়াও চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর প্রতিনিধি ও বিভিন্ন ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, জুট মিল মালিক প্রতিনিধি, পাট চাষীবৃন্দ এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
পরে মন্ত্রী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গনে আয়োজিত বহুমুখী পাট পণ্য মেলার উদ্বোধন করেন।
বিআলো/শিলি