পানির নিচে ১৩ মিনিট থাকতে পারার অসাধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন জাতি ‘বাজাউ’
dailybangla
01st Feb 2025 9:35 pm | অনলাইন সংস্করণ
বাজাউ বা সামা-বাজাউ হলো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বসবাসরত একটি অস্ট্রোনেশিয়ান জাতিগোষ্ঠী। তাঁদের প্রকৃত বাসস্থান ফিলিপাইনের দ্বীপপুঞ্জে হলেও অনেকেই ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও ব্রুনাইয়ে বাস করে থাকে। তাঁরা মূলত সমুদ্রের উপর বজরা বা হাউজবোটে চিরস্থায়ী আবাসস্থল তৈরি করেছে।এই উপজাতি তাঁর অনন্যসাধারণ ক্ষমতার জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছে। তাঁরা পানির নিচে ১০ থেকে ১৩ মিনিট পর্যন্ত শ্বাস ধরে রাখতে সক্ষম। অত্যন্ত শান্ত এই উপজাতিটি সম্পূর্ণ সামুদ্রিক খাবারের ওপর নির্ভরশীল। জীবিকা নির্বাহের তাগিদে ৫ থেকে ৮ ঘন্টা সমুদ্রে মাছ স্বীকার করে থাকে। তাঁদের বিচরণ সমুদ্রের প্রায় ৭০ মিটার গভীর পর্যন্ত। গত ১ হাজার বছর ধরে তাঁরা এভাবেই জীবন-যাপন করছে। এই প্রজাতির মানুষের ওপর গবেষণা করে ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষক মেলিসা ইলার্ডো ও রাসমুস নিয়েলসেন । তাঁরা বলেন, “তাঁদের প্লীহা সাধারণ মানুষের চেয়ে ৫০ শতাংশ বড়ো। ফলে রক্তে অস্বাভাবিক মাত্রার অক্সিজেন ধরে রাখতে পারে তাদের দেহ। আর এমন প্লীহার জন্য দায়ী এক ধরণের বিশেষ জিন। এই জিনের নাম পিডিই১০এ” । মূলত, এই জিনের জন্যই তাঁরা এই বিশেষ ক্ষমতা লাভ করেছে। এই জাতিগোষ্ঠীর বাচ্চাদেরকে ছোটবেলা থেকেই পানির নিচে শ্বাস আটকে রাখতে পারার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ফলে, তাঁরা ধীরে ধীরে এই পদ্ধতি রপ্ত করতে সক্ষম হয়।নির্দিষ্ট কোনো ঠিকানা বা বসতি না থাকায় সামা-বাজাউকে কখনও কখনও “সামুদ্রিক জিপসি” বা “সমুদ্র যাযাবর” বলা হয়। বাঁশ ও কাঠ দিয়ে সমুদ্রের তীর থেকে আধ কিলোমিটার দূরে তাঁদের অস্থায়ী গ্রাম তৈরি করে থাকেন তাঁরা।ছোট ছোট ডিঙির মত নৌকা করে চলে এ বাড়ি সে বাড়ি যাওয়া আসা ।কেউ কেউ আবার নৌকাতেই থাকে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত। শুনতে অবাক লাগলেও এটা সত্যি, এই উপজাতির অনেক মানুষ আছে যারা মাটিতে কোনওদিন পা ও রাখেনি! সামা-বাজাউয়ের জনগণ প্রায় দশটি ভাষায় কথা বলে এবং ভাষাগুলি সাধারণত জাভি বর্ণমালায় লেখা হয়। তাঁদের ঐতিহ্য অনেক প্রাচীন এবং সমৃদ্ধশালী। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে , সময়ের সাথে সাথে তাদের এসব ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে। পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাবে এখানকার মানুষেরা তাদের জীবনযাত্রা পাল্টাচ্ছে। অনেকেই উন্নত জীবন- যাপনের খোঁজে পাড়ি জমাচ্ছে ইউরোপীয় দেশসমূহে। বাজাউরা কোনো দেশের নাগরিকত্ব না পাওয়ায় জীবন-যাপনে তাঁরা নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হয়। অসুস্থ হলেও হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নেওয়ার সুযোগ তাঁদের হয় না। এমনকি মৃত্যুর পরও স্থলে ঠায় মিলে না। দূর সমুদ্রে নিয়ে গিয়ে ভাসিয়ে দেওয়া হয় মৃতদেহ।সমুদ্রের সন্তানেরা সামুদ্রিক জীবের খাদ্য হতে হতে সমুদ্রগর্ভেই বিলীন হয়ে যায়।
লেখক: আয়শা আক্তার
বিভাগ: ফরাসি ভাষা ও সংস্কৃতি,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়