পাসপোর্ট করতে পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগবে না: প্রধান উপদেষ্টা
নিজস্ব প্রতিবেদক: পাসপোর্ট করতে পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগবে না এই তথ্যটি গ্রামেগঞ্জে সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, পাসপোর্ট করতে হলে পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগে, কারণটা কী? পাসপোর্ট তো আমার নাগরিক অধিকারের একটা অধিকার। আমি চোর না ডাকাত! সেটা ভিন্নভাবে পুলিশ আমার বিচার করবে। কিন্তু আমাকে যে জন্মসনদ দিয়েছে, সেটাও কোনো পুলিশ ভেরিফিকেশন দিয়ে করে নাই। আমাকে এনআইডি দিয়েছে, সেটার জন্যও কোনো পুলিশ ভেরিফিকেশনের অপেক্ষা করতে হয় নাই। নাগরিক হিসেবে পেয়েছি, এ দেশের নাগরিক। পাসপোর্টও এ দেশের নাগরিকের একটা পরিচয়পত্র, এখানে পুলিশ ভেরিফিকেশন কেন লাগবে? আমরা আইন করে দিয়েছি, এখন থেকে পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগবে না। সে কথা কি গ্রামে-গঞ্জে গিয়েছে? এই কথার পর উপস্থিত সকলে সমস্বরে হাততালি দেন।
হাততালি দেখে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তালি দেখে মনে হলো এই কথা (গ্রামেগঞ্জে) পৌঁছে নাই। পৌঁছলে হ্যাঁ, আমরা জানি, তো এটা আবার বলার দরকার কী? আমার বলার কারণে তালি দেওয়ার অর্থ হলো সুন্দর কাজ হয়েছে তো! তার মানে এ কথা ওখানে পৌঁছে নাই, অথচ আমরা এখানে সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে আছি কিছুদিন আগে। এই যে দূরত্ব, এটাও যেন না থাকে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এগুলোর কোনো কারণ নাই, বিনা কারণে মানুষ হয়রানি করা হয়। হয়রানি করাটাই যেন আমাদের ধর্ম! সরকার মানেই মানুষকে হয়রানি এটার থেকে উল্টে দাও। সরকার ভিন্ন জিনিস, আপনার অধিকার আপনার দরজায় পৌঁছে দেওয়া আমাদের কাজ। এটাই যেন আমরা স্মরণ রাখি।
এর আগে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন নাগরিকের পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিলের সুপারিশ করে। সেই সুপারিশের ভিত্তিতেই সরকার এই নতুন বিধান কার্যকর করলো। নাগরিকরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত নাগরিক সেবার ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে এবং সাধারণ মানুষ পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য যে দীর্ঘসূত্রিতার শিকার হতেন, তা থেকে মুক্তি পাবে।
প্রধান অতিথি বলায় ‘কষ্ট পেলেন’ অধ্যাপক ইউনূস তিনদিনব্যাপী জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন উদ্বোধন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে তাকে প্রধান অতিথি হিসেবে সম্বোধন করা প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, প্রধান অতিথি হিসেবে বলায় কষ্ট পেয়েছি। যেন আমাকে খেলার মাঠ থেকে বাইরে রাখা হলো।
প্রধান অতিথি সম্বোধন করা প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এখানে আমাকে প্রধান অতিথি হিসেবে বলাতে আমি একটু কষ্ট পেলাম। যেন আমাকে বাইরে রাখা হলো এ খেলার মাঠ থেকে। হওয়া উচিত ছিল আমার খেলার ক্যাপ্টেন। কিন্তু আমাকে করলেন অতিথি। আমি অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিতে চাই না। আমি ক্যাপ্টেন হিসেবে বক্তব্য দিতে চাই। আমাদের করণীয় কী।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের কাজ একেবারে হাতে গোনা, মাপা জিনিস। এটা নিত্যনৈমিত্তিক, নতুন কিছু আসছে তা না একই জিনিস বারেবারে আসছে, বিভিন্ন ভঙ্গিতে আসছে। সেগুলো আমরা কে কীভাবে করছি, কী হলে আরও ভালো হতো, কো-অর্ডিনেশনটা কীভাবে হলে ভালো হতো, ক্যাপ্টেনের সিগনালটা কীভাবে ফিল্ডে গেলে ভালো হতো এসব নিয়েই আলোচনা।
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে যা কিছু করণীয়, সেই করণীয়ের দায়িত্বে আমরা সবাই আছি, এমনভাবে যেমন চিন্তা করুন আমরা একটা খেলার ক্রিকেট বা ফুটবল খেলার খেলোয়াড়। আমাদের আজকে এ খেলোয়াড়দের সমাবেশ। প্রস্তুতি নেওয়া, যে আমাদের স্ট্র্যাটেজি কী হবে, অবজেকটিভ কী হবে, আমাদের কার কী করণীয় এসব ঠিক করা।
টিম স্পিরিট এবং নিজ নিজ জায়গায় প্রত্যেককে দায়িত্বশীল হওয়ার তাগিদ দিয়ে ড. ইউনূস বলেন, আমরা টিম হলাম কিনা? যদি এটা বাংলাদেশ সরকার হয়ে থাকে, বাংলাদেশ সরকারকে একটা টিম হতে হবে। এটা টিম ওয়ার্ক। এটা এমন না যে আমি আমার মতো করলাম, ও ওর মতো করলো ওইটা হয় না, কোনো কাজেই হয় না। টিম গঠনের জন্য যখন একত্রিত হয়, তখন টিমের চিন্তা, করণীয় সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়।
তিনি আরও বলেন, কাজেই খেলা হলো একটা সামগ্রিক জিনিস। একজনের ভুল কাজে পুরো টিম তার সাফল্য থেকে বঞ্চিত হয়। কাজেই আমরা কেউ যেন এমন কোনো ভুল কাজ না করি, যাতে পুরো টিমের সাফল্য ব্যাহত হয়, আমাদের গন্তব্যে পৌঁছানো ব্যাহত হয়। এটা নিয়েই আমাদের আলোচনা আমরা কী করছি।
অন্তর্বর্তী সরকার এখন পুরো খেলার জন্য প্রস্তুত মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সরকার গঠনের পর থেকে ছয় মাস চলে গেল। এটা আমাদের প্রথম পর্ব। আয়োজন করার জন্য যে সময় লাগে। অনেক ভুল-ভ্রান্তি হয়েছে এ আয়োজনের সময়। এখন সেগুলো ঠিকঠাক করে আমরা পুরো খেলার জন্য প্রস্তুত। সেই প্রস্তুতিটা আমাদের হলো কি না, না হলে কী কী ঘাটতি আছে, সেগুলো ঠিক করা।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও বাজার নিয়ন্ত্রণ স্বাভাবিক রাখতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) সজাগ থাকার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তিনি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারদর নিয়ন্ত্রণে রাখতে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
বিআলো/শিলি