পুড়িয়ে দেয়া হলো রাঙ্গাবালী প্রেস ক্লাব, এক মাস ধরে এলাকা ছাড়া সাংবাদিকরা
নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রেস ক্লাব, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়ি-ঘরে হামলা এবং মামলার কারণে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে এলাকাছাড়া পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর সংবাদকর্মীরা। সাগর ও নদীবেষ্টিত বিচ্ছিন্ন দ্বীপটিতে সন্ত্রাসীরা ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করায় প্রাণনাশের আশঙ্কায় পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে সাংবাদিকদেরও।
গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ওইদিন বিকালে বিএনপির আনন্দ মিছিল থেকে হামলা চালানো হয় রাঙ্গাবালী প্রেস ক্লাবে। আসবাবপত্র ভাঙচুর ও ল্যাপটপ-কম্পিউটার লুট করে নেয়ার কিছুক্ষণ পর পেট্রোল ঢেলে আগুনও দেয়া হয়। এতে পুড়ে ছারখার হয়ে যায় ঐতিহ্যবাহী রাঙ্গাবালী প্রেস ক্লাব।
এরপর টার্গেট করা হয় সাংবাদিকদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। হামলা চালায় প্রেস ক্লাব সভাপতি সিকদার জোবায়ের হোসেন ও সময় টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার সিকদার জাবির হোসেনের মালিকানাধীন চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান ‘ইউনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে’। ভাঙচুর করা হয় ডায়াগনস্টিকের যন্ত্রপাতি। লুট করে নেয়া হয় ক্যাশের টাকা ও মালামাল। অপরদিকে প্রেস ক্লাব সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান রুবেলের মালিকানাধীন একটি কাপড়ের দোকানে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। এরপর রাতে প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক এনামুল ইসলামের বাড়ি থেকে তার মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নিয়ে যায় বিএনপির কিছু নেতাকর্মী। এসব ঘটনার পর জীবনের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ওই রাতেই এলাকা ছাড়েন অধিকাংশ সাংবাদিক।
এদিকে গত ৮ সেপ্টেম্বর ১৬৯ জনের নামে ৬ বছর আগের একটি সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা করে বিএনপি। ওই মামলার তালিকায় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৭ সাংবাদিকদের নাম দেয়া হয়। পরবর্তীতে প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও নিউজ টুয়েন্টি ফোর টিভির জেলা প্রতিনিধি সিকদার জোবায়ের, সময় টেলিভিনের স্টাফ রিপোর্টার সিকদার জাবির হোসেনসহ ৫ সাংবাদিকের নাম এজাহার থেকে বাদ দেয়া হয়। তবে প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক ভোরের কাগজ প্রতিনিধি কামরুল হাসান রুবেল এবং দৈনিক মানবকণ্ঠের প্রতিনিধি ও প্রেস ক্লাবের দপ্তর সম্পাদক জাওদুল কবির প্রিতমের নাম মামলার এজহারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এদিকে একের পর এক হুমকি দেয়া হচ্ছে সংবাদকর্মীদের। মামলা ও হামলার ভয়ে এলাকায় যেতে পারছেন না সাংবাদিকরা। পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটছে তাদের।
রাঙ্গাবালী প্রেস ক্লাবের সভাপতি সিকদার জোবায়ের হোসেন বলেন, প্রেস ক্লাবে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনা নজিরবিহীন। সন্ত্রাসীদের হামলা থেকে বাদ যায়নি সাংবাদিকদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, এমনকি হাসপাতাল ক্লিনিকও। একজন সংবাদকর্মী অন্যায় করে থাকলে আইনের মাধ্যমে তার বিচার হতে পারে। তাই বলে প্রেস ক্লাবে পুড়িয়ে দেয়া এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও লুট করা এটা কেমন বর্বরতা! এমন স্বাধীনতাতো আমরা চাইনি। যেখানে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা থাকবে না, যেখানে গণমাধ্যমকর্মীরা নিরাপত্তাহীন।
বিআলো/তুরাগ