ফরহাদাবাদের চাঁদ মাওলানা আমিনুল হক ফরহাদাবাদী (রহ.)
পাহাড় নদী সাগরের অপূর্ব মেলবন্ধন চট্টগ্রাম। এটি বাংলাদেশের অতি প্রাচীন একটি শহর। এ শহরের অদূরে স্বগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অনন্য নিদর্শন। পাহাড়ের কোলে ঘুমানো চবির উত্তর-পশ্চিম পাশে অবস্থিত, ফরহাদাবাদ ইউনিয়ন। এখানে শায়িত আছেন, বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত মুহাক্কিক আলেমে দ্বীন। যিনি মাইজভান্ডার দরবার শরীফের প্রাণপুরুষ হজরতুল আল্লামা শাহ সুফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারি (র.)’র একজন বিশিষ্ট ও সুপ্রসিদ্ধ প্রতিনিধি হিসেবে সমধিক পরিচিত ও সমাদৃত। এ মহান বরেণ্য জ্ঞানতাপসের নাম আল্লামা সৈয়দ আমিনুল হক ফরহাদাবাদী (র.)। একাধারে তিনি একজন ভাষাবিদ, কবি ও শায়ের, সাহিত্যিক ও কলম সম্রাট, যুক্তিতর্কশাস্ত্রবিদ, ইসলামি আইনবিদ, গ্রন্থ প্রণেতা এবং দার্শনিক। সৈয়দ আমিনুল হক ফরহাদাবাদী (র.)- ১৮৬৬ সালে পৃথিবীতে শুভ আগমন করেন। তার বংশধারা হজরত মাওলা আলী (রাদ্বি.) এবং হজরত মা ফাতেমা (রাদ্বি.)- হয়ে নবী মুহাম্মাদুর রাসূল (দ.)- পর্যন্ত পৌঁছেছে। ‘নাজমে দিল কুশা-ফী মিলাদে মুস্তফা’ গ্রন্থ প্রণেতা মাওলানা সৈয়দ আব্দুল করিম ছিলেন,তার শ্রদ্ধেয় পিতা। মাতা সৈয়দা নাছিমা খাতুন একজন মুত্তাকি ও বিদুষী রমণী। পিতার হাত ধরে সহিহ কুরআন পাঠসহ শরিয়তের নানাবিধ মাসআলা-মাসায়েল শিক্ষা নেন এবং স্থানীয় মক্তব ও মাদরাসা থেকে পড়াশুনা শেষ করে চট্টগ্রাম মোহসিনীয়া মাদরাসায় ভর্তি হয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে অধ্যয়ন শেষ করে ‘মুফতি’ উপাধিতে ভূষিত হন। চট্টগ্রাম মাদরাসা বা চট্টগ্রাম সরকারি মাদরাসা বা চট্টগ্রাম মোহসিনীয়া মাদরাসা (১৮৭৪-১৯২৭) বা চট্টগ্রাম ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (১৯২৭-১৯৭৯) এবং সরকারি ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (অংশবিশেষ ১৯৬৭-১৯৭৯) ছিল। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম অঞ্চলের মুসলিমদের জন্য প্রতিষ্ঠিত সর্বপ্রথম সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১৮৭৪ খ্রিষ্টাব্দে মাদরাসাটি মহসিন ফান্ডের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠা করে ব্রিটিশ সরকার। প্রতিষ্ঠাকালীন মাদরাসাটি কলকাতা আলিয়া মাদরাসার অনুকরণে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। এটি ব্রিটিশ সরকারের প্রেসিডেন্সি অব কমিশনারস্ দ্বারা পরিচালিত হতো। পরবর্তী সময়ে মাদরাসাটি থেকে গভ. মুসলিম হাই স্কুল, হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের জন্ম হয়। হজরত ফরহাদাবাদী (র.)-এর অসাধারণ পাণ্ডিত্যের কারণে সমকালীন আলেম সমাজ তাকে- আ’লা হজরত, মুফতিয়ে আ’জম, শায়খুল ইসলাম, ইমামুল মুনাজিরিনসহ নানাবিধ উপাধিতে ভূষিত করেন। ভাষাগত নিপুণতার দিক দিয়ে তিনি ছিলেন অনন্য বহুভাষাবিদ এবং অলঙ্কারশাস্ত্রবিদ। বাংলা, আরবি, ফারসি, উর্দু ভাষায় তিনি একাধিক ধর্মীয় গ্রন্থ রচনা করেছেন। ‘তোহ্ফাতুল আখ্ইয়ারফী দাফ্-ই-শারারাতিল আশ্্রার’ গ্রন্থটি আরবি, ফারসি এবং উর্দু ভাষার সংমিশ্রণে এবং কাব্যিক আকারে রচনা করেন। তার সাহিত্যকর্ম পুঁথি সাহিত্যের অনিন্দ্য নিদর্শন। বহু সাহিত্যিক ও গবেষক তার সাহিত্যকর্মকে পুঁথি সাহিত্য হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। হজরত ফরহাদাবাদী (র.)- সুফি পরিবারে জন্মগ্রহণ করার কারণে আউলিয়ায়ে কেরামের প্রতি তাঁর বিশেষ ভক্তি ও শ্রদ্ধা কাজ করত। এ জন্য ছাত্রাবস্থায়ও বিভিন্ন অলি-দরবেশের সান্নিধ্য লাভ করতেন এবং বিভিন্ন পীর-বুযুর্গের মাজার শরীফ জিয়ারত করতেন। আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের সোহবতের কারণে মানুষের জীবনের আমূল পরিবর্তনসহ যে আত্মিক উন্নতি সাধিত হয় এ ব্যাপারে একটি চমকপদ ঘটনা বর্ণনা করছি। হাটহাজারী থানার মধ্য মাদার্শার মরহুম কাজী ছালেহ আহমদ ছিলেন, ফরহাদাবাদী (র.)-এর একজন শিষ্য। তিনি বর্ণনা করেছেন যে, ‘চট্টগ্রাম মোহসিনীয়া মাদরাসার ফাযিল পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়াকালীন সময়ে ফরহাদাবাদী (র.) রাত্রিবেলায় লালদীঘির পাড় চট্টগ্রাম শহর কুতুব, হজরতুল আল্লামা সুফি সৈয়দ আমানত শাহ (র.)’র মাজার জিয়ারতে যান এবং পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত ও দরুদে মুস্তফা (দ.)- পাঠ পূর্বক অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে মহান মালিকের দরবারে ফরিয়াদ জ্ঞাপন পূর্বক দীর্ঘক্ষণ নীরব থেকে মাজার পার্শ্বস্থ বরই গাছের নিচে তন্দ্রার ভাব চলে আসে এবং স্বপ্নে দেখতে পেলেন যে, তাঁর অন্তর্দৃষ্টি খুলে যায় এবং মাজারের পাদপীঠে (পা রাখার পিঁড়ি বা টুল) একজন নূরানি মানুষ দাঁড়িয়ে বরই গাছ থেকে একটি বরই ছিঁড়ে তার মুখে দিলেন। এরপর স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়, জাগ্রত হয়ে ফরহাদাবাদী (র.)- দেখতে পেলেন একটি বেমৌসুমি বরই ফল তার সামনে টপ করে পড়ল! তৎপর ওজু করে বরইটি বিসমিল্লাহ পাঠ করে খেয়ে ভোর না হওয়া পর্যন্ত শাহ আমানত (র.)-এর মাজারের পাশে অবস্থান করেন। বরইটি খাওয়ার পর থেকে তার আপাদমস্তকে ঐশী প্রেরণার জোয়ার উঠে এবং ক্বলবে খোদায়ি আত্মিক সংযোজনের প্রভাব সঞ্চারিত হতে থাকে। এমন মুহূর্তে তিনি মনে মনে সংকল্প করলেন, রাতে হজরত মোল্লা মিছকিন শাহের মাজারে যাবেন। যাতে খোদা তালাশের ব্যাকুলতার মধ্যে স্থিরতা আসে। গভীর রাতে মোল্লা মিছকিন শাহের মাজারে গিয়ে পৌঁছলেন এবং দেখতে পেলেন, হজরত আজগর শাহ (প্রকাশ-কম্বলী শাহ) লেপ মুড়িয়ে দেয়ালঘেঁষে ঘুমাচ্ছেন। জিয়ারত শেষ করে তিনি- কম্বলী শাহের পা টিপার মানসে পায়ে হাত দিলেন, তৎপর তিনি অনুভব করতে পারলেন তার শরীর বরফের মতো ঠাণ্ডা। এমন পরিস্থিতিতে তিনি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বুঝতে পারলেন কম্বলী শাহ মৃতপ্রায়! এ অবস্থাতে ভয়ে কাঁপতে শুরু করলেন এবং উপায়ান্তর না দেখে কম্বলী শাহের মৃতদেহ মুবারক ভোর পর্যন্ত পাহারা দিলেন। মনস্থির করলেন, সকালে লোকজন ডেকে জানাজা পড়ে দাফনের ব্যবস্থা করবেন। এভাবে রাত কেটে যায়। আর এদিকে, ফজরের আজান শুরু হলে তার মনের ভয়টা একেবারে চলে যায়। মুয়াজ্জিনের আজান শেষ হতেই কম্বলী শাহ হঠাৎ উচ্চস্বরে আল্লাহু আকবর ডাক দিয়ে শুয়া থেকে উঠে বসলেন। হতভম্ব অবস্থায় তিনি কম্বলী শাহের মুখের দিকে চেয়ে থাকলেন এবং মুখের ভাষাও হারিয়ে ফেললেন। কম্বলী শাহ তাকে উদ্দেশ করে বললেন, তুমি আবার এখানে কেন? গতরাতে আমানত শাহ (র.) তোমাকে অনেক দোয়া করেছেন। এভাবে দু’টি নির্ঘুম রাত কাটালেন। তৃতীয় রাতে, বিছানায় পিঠ লাগানোর সঙ্গে সঙ্গে চোখে তন্দ্রা চলে আসে এবং স্বপ্নে দেখতে পেলেন, আমানত শাহ (র.) অনেক কিতাব তার চোখের সামনে ধরে পাতা উল্টাচ্ছেন আর এদিকে তিনি চোখের পলকে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা পড়ে চলেছেন। এভাবে আমানত শাহ তাকে শত সহস্র কিতাব পড়ে দিলেন। এরপর থেকে আল্লাহ পাক তার সিনাকে ইলমের নূর দ্বারা পরিপূর্ণ করে দেন এবং ইলমে খিজরি বা ইলমে লাদুন্নি দান করেন। এ ঘটনার পর থেকে তিনি খোদা ও নবীপ্রেমে বিভোর হয়ে পড়েন। তবে ক্লাসে ওস্তাদগণ প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে সঙ্গে সঙ্গে সদুত্তর দিতেন এবং দরসের কোনো বিষয়ে ত্রুটি দেখলে সঙ্গে সঙ্গে আদবের সঙ্গে ওস্তাদদের সংশোধন করে দিতেন। জটিল মাসআলা-মাসায়েল এবং ফতোয়ার বিষয়ে শিক্ষকগণ তার অভিমত নিতেন এবং তাকে ‘মুফতি আমিন’ বলে ডাকতেন। সংসারজীবনে সন্তানদের নাম সমূহ- ১. সৈয়দা উম্মুল খায়ের, ২. সৈয়দা উম্মুচ্ছফা, সৈয়দ ফয়জুল ইসলাম, সৈয়দা উম্মুত্ তৈয়বা।ফরহাদাবাদী (র.) শরিয়তের পূর্ণ জ্ঞান হাসিল করে ইলমে তাসাউফের দীক্ষা নেন, চট্টগ্রামের সুপ্রসিদ্ধ আলেমে দ্বীন, শায়খুল হাদিস, শায়খুল মাশায়েখ, হজরতুল আল্লামা শাহ সুফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারি (র.)-এর কাছ থেকে। যদিও তিনি প্রথমে মাইজভান্ডার দরবার শরীফের কর্মকাণ্ডকে শরয়ি দৃষ্টিতে অপছন্দ করতেন। কেন তিনি অপছন্দ করতেন? এ বিষয়ে স্বরচিত ‘তাওজিহাতুল বাহিয়্যাহ ফী তারদীদে মা ফিত্তানকি হাতিছ-ছনিয়াহ ফী রদ্দে মুনাজেরাতে ফেনী’ গ্রন্থে সবিস্তার আলোচনা করেছেন। যার বঙ্গানুবাদ হচ্ছে, ‘আমি আমার সম্মানিত মুর্শেদের দরবারে যাওয়ার পূর্বে তার তরিক্বার কর্মকাণ্ডের মুনকের (অস্বীকারকারী) ছিলাম। এজন্য যে, আমার ক্বলবে প্রেমের অর্থ সর্ম্পকে ধারণা ছিল না’। একদা স্বপ্নে মাইজভান্ডারি (র.)-এর সাক্ষাৎ পেয়ে তার ক্বলবে ইশকের জোয়ার ওঠে এবং আম্মাজানের মানতকৃত টাকা নিয়ে মাইজভান্ডার দরবারের দিকে রওনা হন। আর এদিকে, মাইজভান্ডারি (র.)- খাদেমদের বললেন, ‘ফরহাদাবাদের বড় মাওলানা আসতেছে তোমরা তাকে তা’জিম করো এবং তার আম্মার প্রেরিত টাকাগুলো নিয়ে আস। তার আগমনের কথা আর প্রেরিত টাকার অগ্রিম সংবাদের কথা শুনার সঙ্গে সঙ্গে তিনি চিরদিনের জন্য হজরত ক্বেবলা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (র.)-এর কাছে নিজকে সমর্পণ করেন এবং তরিক্বতের বায়’আত নেন। দীর্ঘ রেয়াজতের মাধ্যমে এবং চূড়ান্তভাবে আল্লাহ ও তার প্রিয় রাসূল হজরত মুহাম্মদ (দ.)’র সন্তুষ্টি অর্জন পূর্বক তরিক্বতের খেলাফত লাভে ধন্য হন। এ প্রবন্ধে হজরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারি (র.)- সর্ম্পকে দু’টো কথা বলে রাখা প্রয়োজন, এ কারণে যে বর্তমান সময়ের অনেক মুহাক্কিক আলেমগণ এ মহান আলেমে দ্বীন সম্পর্কে না জেনে মন্তব্য করে বসেন। সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (র.) কলকাতা আলিয়া মাদরাসা থেকে পড়াশুনা শেষ করে ‘ফখরুল মুহাদ্দিসিন’ উপাধিতে ভূষিত হন এবং উক্ত প্রতিষ্ঠানে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কিছু সময় শিক্ষকতা করেন। একদিক দিয়ে তিনি ছিলেন শরিয়তের বিদগ্ধ আলেম। অন্যদিক ছিলেন তরিক্বতের মশহুর আলেম। সর্বোপরি ইলমে বেলায়াতের ধারক ও বাহক। মাইজভান্ডারি (র.) কলকাতা অবস্থানকালে গাজীয়ে বালাকোট, শায়খুল হাদিস, হজরতুল আল্লামা শাহ সুফি নূর মুহাম্মদ নিজামপুরী (র.)এর অভিভাবকত্বে পড়াশুনা শেষ করেন এবং তাসাউফের প্রাথমিক শিক্ষা নেন। তবে চূড়ান্তভাবে তরিক্বতের বায়’আত ও খেলাফত লাভ করেন ঢাকা আজিমপুর দায়রা শরীফের পীর সৈয়দ লাক্বীতুল্লাহ (র.)-এর খলিফা আবু শামা সৈয়দ মুুহাম্মদ ছালেহ লাহোরী (র.)-এর কাছ থেকে। ঢাকা আজিমপুর দায়রা শরীফের প্রতিষ্ঠাতা পীর সুফি সৈয়দ দায়েম (র.)- মোজাদ্দেদিয়া তরিক্বার খেলাফত নেন চট্টগ্রামের শহর কুতুব, সুফি সৈয়দ আমানত শাহ (র.)-এর কাছ থেকে। আর কাদেরিয়া তরিক্বার খেলাফত লাভ করেন, ভারতের সৈয়দ মখদুম মোনেম পাক (র.)-এর কাছ থেকে। সৈয়দ আমিনুল হক ফরহাদাবাদী (র.)Ñএর সাহিত্যকর্মসমূহের নাম- ১. দাফি উশ্ শুবহাত, ২. শাওয়াহিদুল ইবতালাত্ ফি তারদীদে মা-ফী-রাফি-উল ইশ্কালাত, ৩. তোহ্ফাতুল আখ্ইয়ার ফী দাফ্-ই-শারারাতিল আশ্্রার, ৪. আত্ তাওজাতুল বাহিয়্যা ফী তারদীদি মা ফী তানকি হাতিছ-ছনিয়াহ, ৫. রাফিউল গেশাবি ফি তরদীদে মা ফী ইশাআতিল ফতাবী, ৬. গায়তুত্ তাহ্কীক ফী-মা ইয়াতায়াল্লুকু বিহি তালাকুত তা’লীক, ৭. মেরাতুল ফান্নে ফি শরহে মোল্লা হাছান, ৮. আগ্লাতে শামী। যেসব বিষয়ে তিনি পারদর্শী ছিলেন- ১. ইলমে তফসির, ২. ইলমে হাদিস, ৩. ইলমে ফিকাহ, ৪. মানতিক, ৫. বালাগাত, ৫. ফরায়েজ, ৬. ফিলোসফি, ৭. ইলমে তাসাউফ। ভারতের সুপ্রসিদ্ধ আলেমে দ্বীন, মাওলানা আহমদ রেজা খান ব্রেলভী ফরহাদাবাদী (র.)-এর স্বরচিত ‘আগ্লাতে শামী’ গ্রন্থটি পেয়ে পত্র লিখে বলেছিলেন, ‘আপনার মতো এমন বিজ্ঞ জ্ঞানী আমার দরকার’। ইমামে আহলে সুন্নাত শেরে বাংলা, আল্লামা সৈয়দআজিজুল হক আল-কাদেরী তার স্বরচিত ‘দিওয়ানে আজিজ’ গ্রন্থে ফারহাদাবাদী (র.)-এর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। বিশেষত ফরহাদাবাদী (র.) মসলকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের উপর বহু কিতাবাদি রচনা করেছেন। তিনি যথেষ্ট মেধাবী, প্রখর স্মৃতিশক্তি, বিচক্ষণ ও সুক্ষ্মদর্শী এবং কাশ্ফধারী ছিলেন। তার বহু কারামত লোক মুখে এখনো শুনা যায়। আল্লামা ফরহাদাবাদী (র.)-এর কিছুসংখ্যক খলিফাদের নামের তালিকা- শাহ সুফী মুফতি সৈয়দ ফয়জুল ইসলাম ফারহাদাবাদী (প্রধান), মাও. ছৈয়দ আবদুল গফুর, শায়খুল হাদিস ওবাইদুল মুস্তফা নুরুচ্ছফা নঈমী, মাও. আমিনুল্লাহ সুন্দরপুরী, মুফতি রশিদ আহমদ মির্জাপুরী, মাও. সৈয়দ সালেহ আহমদ, মাও. বজলুল করীম মন্দাকিনী, মাও. ওবাইদুল আকবর মন্দাকিনী, অধ্যক্ষ আল্লামা ছৈয়দ আবদুল হালিমপূর্ব ফরহাদাবাদী, মাও. সৈয়দ রুহুল কুদ্দুস প্রমুখসহ আরো অনেক যুগশ্রেষ্ঠ আলেমে দ্বীন ও আউলিয়ায়ে কামেলিন তার ফয়েজসিক্ত হয়ে দ্বীন ও মাজহাব-মিল্লাতের খেদমতে নিয়োজিত ছিলেন। আল্লাহর এ মহান অলিয়ে কামেল ও আধ্যাত্ম জগতের মধ্য আকাশের ধ্রুবতারা ২৭ অগ্রহায়ণ ১৯৪৪ সালে বেছাল লাভ করেন। প্রতিবছর অসংখ্য ভক্তের উপস্থিতিতে ২৭ অগ্রহায়ণ সাজ্জাদানসীন শাহ সুফি মুফতি সৈয়দ মোজাম্মেল হক সাহেবের সদারতে ইসলামি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বার্ষিক ফাতেহা শরীফ পালিত হয়।
লেখক : মাওলানা কায়ছার উদ্দীন মালেকী
কলামিস্ট ও ব্যাংকার
বিআলো/তুরাগ