ফেসবুকে বাড়ছে ডিজিটাল প্রতারকদের দৌরাত্ম্য
মো. মনির হোসেন, গাজীপুর: অনলাইনে বেড়েছে ডিজিটাল প্রতারকদের দৌরাত্ম্য। এই প্রতারকদের সবচেয়ে বেশি আনাগোনা ফেসবুকে। কারণ বাংলাদেশে যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। তাদের মধ্যে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। প্রতারকরা নতুন কায়দায় প্রতারণার ফাঁদ পাতে। ফলে ভুক্তভোগীরা কিছু বুঝে উঠার আগেই প্রতারিত হন। বর্তমানে কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে অনেকেই ফেসবুকে আয় করছেন। এর জন্য ফেসবুক পেজের দরকার হয়। প্রতারকরা এসব বড় বড় পেজকে টার্গেট করে হ্যাক করে। এরপর এসব পেজ অন্যত্র চড়া দামে বিক্রি করে দেয়।
সম্প্রতি গাজীপুরের বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী এমন প্রতারণার শিকার হয়েছেন। ভুক্তভোগীদের একজন বলেন, প্রায় ২ লাখ ৯৭ হাজার ফলোয়ার/লাইকের একটি ফেসবুক পেজ আছে আমার। এই পেজটি মনিটাইজেশন হয়নি। অর্থাৎ এর মাধ্যমে কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে আয় শুরু হয়নি। তাছাড়া এই পেজের জন্য কনটেন্ট তৈরি করার মতো যথেষ্ট সময়ও নেই। তাই আমি এই পেজটি বিক্রি করার জন্য ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করি। এরপর অনেকেই পেজটি কেনার জন্য ইনবক্সে মেসেজ দেয়। দামদর না মিলায় বিক্রি করিনি।
গত শুক্রবার (৮ নভেম্বর) দুপুরে একজন ব্যক্তি মেসেজ করে নির্ধারিত দামেই কিনতে রাজি হয় এবং পেজের আভ্যন্তরীণ বিভিন্ন তথ্যের স্ক্রিনশট দিতে বলে। এরপর সে ও তার চক্রের কয়েকজন মিলে এই পেজটি প্রতারণা করে চুরি (হ্যাক) করে। ভুক্তভোগী ব্যক্তি আরো বলেন, প্রতারক ব্যক্তি প্রথমে জানায় এডমিন ডিলের মাধ্যমে সে পেজটি কিনবে। এরপর সে একজন এডমিনের নাম বলেন, যিনি নির্ধারিত সার্ভিস ফি নিয়ে ভার্চুয়াল কেনাবেচার মধ্যস্থতার কাজ করেন। সেই এডমিন অনলাইনে বেশ পরিচিত।
উল্লেখ্য, ভার্চুয়াল কোনো কিছু কেনাবেচায় এডমিন ডিল এটা খুব জনপ্রিয় একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে এডমিন মধ্যস্ততাকারীর ভূমিকায় থেকে প্রথমে ক্রেতার কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করে ভার্চুয়াল পণ্য ক্রেতাকে বুঝিয়ে দিতে বলে। তাই এই ব্যক্তির কথায় রাজি হয়ে যাই। এরপর প্রতারকরা গ্রুপ খোলে। সেখানে প্রথম প্রতারকদের সঙ্গে আরো কয়েকজন প্রতারক যোগ দেয়। যে এডমিনের মাধ্যমে ডিল হওয়ার কথা সেই এডমিনের ফেক আইডি ব্যবহার করে তারা আলাপ শুরু করে। আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি এটা সেই এডমিনের ফেক প্রোফাইল। এই ফেক এডমিন আমাকে বলে আপনি তাদেরকে (প্রতারক) পেজ এক্সেস দিন। এরপর পেজের টাকা আপনাকে পাঠাবো। তার কথামতো আমি পেজ এক্সেস দেই। এরপর তারা সবাই আমাকে ব্লক করে দেয়।
ভুক্তভোগী জানান, তিনি অভিজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে এ ব্যাপারে আইনী পদক্ষেপ নেবেন। প্রতারকদের ফেসবুক প্রোফাইল নাম হচ্ছে শেখ মো. বেলাল (প্রোফাইল আইডি: ৬১৫৬৭৪৯০৪৬৮৯৫৫), রাকিব মোহাম্মদ, রমজান হোসাইন (প্রোফাইল আইডি: ৬১৫৬৭৮২৫৬৩৬০৪৪)। এসব প্রতারকরা ফেসবুকে ফেক আইডি খুলে ভিন্ন ভিন্ন নামে প্রতারণা অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া বিভিন্ন ব্যক্তিদের ফেসবুক আইডি হ্যাকেরও অনেক অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে এছাড়া সম্প্রতি। এ ধরনের প্রতারকদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যবস্থা গ্রহণ ও সাধারণ মানুষদের আরো সচেতন হওয়ার আহ্বান করেছেন ভুক্তভোগীরা।
বিআলো/তুরাগ