চাঁদপুরে গণমাধ্যমে হলুদ সাংবাদিকতা প্রতিরোধ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা’ বিষয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত
সাইদ হোসেন অপু চৌধুরী-চাঁদপুর: বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি এ কে এম আব্দুল হাকিম বলেছেন, হলুদ সাংবাদিকতা বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। কাজেই বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা নিশ্চিত করতে হলুদ সাংবাদিকতা প্রতিরোধের কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য সাংবাদিকদের বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে হবে। সংবাদে সমালোচনা থাকবে, তবে সেটা গঠনমূলক হতে হবে। সাংবাদিকতা একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা। এ পেশায় আসতে হলে বেশ পড়াশোনা করতে হয়।
রবিবার (২৭ এপ্রিল) চাঁদপুর সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল আয়োজিত চাঁদপুর জেলার প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের অংশগ্রহনে “গণমাধ্যমে হলুদ সাংবাদিকতা প্রতিরোধ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা” শীর্ষক দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
এ সময় তিনি সাংবাদিকতার অঙ্গনে শৃঙ্খলা ফেরাতে সারাদেশে কর্মরত সাংবাদিকদের ডেটাবেইজ তৈরিতে সাংবাদিক-সম্পাদকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, ডেটাবেইজ কার্যক্রম বেশ আগেই শুরু হলেও এখন পর্যন্ত সারাদেশ থেকে মাত্র ৩ হাজার ৫শ টি ফরম পাওয়া গেছে। যার মধ্যে ৮শ টি সঠিক হলেও বাকিগুলো ভুলে ভরা। প্রেস কাউন্সিল এখন পর্যন্ত প্রিন্ট মিডিয়ার ক্ষেত্রটি দেখছে। দ্রুতই ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়াকেও কাউন্সিলের আওতায় নেওয়ার চিন্তা চলছে। পেশায় যোগদানের আগে আইনজীবী ও চিকিৎসকদের সনদের প্রয়োজন হলেও সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে আজও সেটি করা হয়নি। তাই একজন সাংবাদিকের শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম স্নাতক করা হয়েছে।
তিনি বলেন, হলুদ সাংবাদিকতা নির্মূল করতে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল বেশ কয়েকটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। মূলধারার সাংবাদিকদের সংবাদ করতে গিয়ে যাতে অসুবিধায় পড়তে না হয় সেজন্য বর্তমানে সাংবাদিক হওয়ার আবেদন করলে তাকে ন্যূনতম স্নাতক পাস হতে হবে। তাছাড়া যারা স্নাতক পাস করেননি, কিন্তু ৫–১০ বছর ধরে কাজ করছেন, তাদের ক্ষেত্রে এ নিয়ম শিথিল করা হয়েছে। তবে সেক্ষেত্রে তাদের কাজের শুরুর যোগদানপত্র উপস্থাপন করতে হবে। এছাড়া আগামীতে সাংবাদিকতা পেশায় কেউ আসতে চাইলে তাকে পরীক্ষার মাধ্যমে নির্বাচন করা হবে, এমন সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
এসময় তিনি আরো বলেন, যে আপনার কথা শুনছে না, তার নামে খারাপ সংবাদ ছাপবেন। তার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করবেন। তাকে জনগণের সামনে তার পরিবারের সামনে হেয় করবেন। তারপর একদিন তাকে আপনি জেলে পাঠাবেন অথবা গুম করে দিবেন। কোন একটা রাজনৈতিক দল তাদের জঙ্গি বানিয়ে দিনের পর দিন প্রচার করে, তাদের জেলে পাঠাবেন। এ পুরো জিনিসটা সম্ভব হয়েছে সাংবাদিকতার মাধ্যমে।
তিনি আরো বলেন, কাজ করার ক্ষেত্রে আমাদের আরো সতর্ক থাকতে হবে। যে বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করবেন ওই বিষয়ের পিছনের তথ্য দেখে নিবেন।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুপ্রভাত চাকমার সভাপতিত্বে ও বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের সুপারিনটেনডেন্ট মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত কর্মশালায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের সচিব আব্দুস সবুর, চাঁদপুর পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব পিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রসাশন ও অর্থ ) মোঃ লুৎফর রহমান, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সিনিয়র সহ সভাপতি সোহেল রুশদী, সাধারণ সম্পাদক কাদের পলাশ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল আউয়াল রুবেল, আমার দেশ জেলা প্রতিনিধি গিয়াসউদ্দিন মিলন, সময় টিভির জেলা প্রতিনিধি ফারুক হোসেন, মানবকন্ঠের জেলা প্রতিনিধি শাহাদাত হোসেন শান্ত, প্রথম আলোর জেলা প্রতিনিধি আলম পলাশ, দৈনিক জনকণ্ঠের জেলা প্রতিনিধি অধ্যক্ষ জালাল চৌধুরী, চাঁদপুর জেলা ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাওন পাটোয়ারী, এখন টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি তালহা জুবায়ের, দৈনিক চাঁদপুর দিগন্তের বার্তা সম্পাদক কে এম সালাউদ্দিন।
কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা তথ্য অফিসার তপন চন্দ্র বেপারী।
আয়োজিত প্রশিক্ষণ কর্মশালায় জেলা সদরে কর্মরত টেলিভিশন ও প্রিন্ট মিডিয়ার ৪০ জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে সমাপনী অনুষ্ঠানে টেলিভিশন ও পত্রিকার জেলা সদরে কর্মরত অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকদের হাতে সনদপত্র তুলে দেয়া হয়।
প্রসঙ্গত, গণমাধ্যমে হলুদ সাংবাদিকতা প্রতিরোধ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা’ বিষয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালা শেষে অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকদের মাঝে সার্টিফিকেট প্রদান করেন প্রধান অতিথি বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি এ কে এম আব্দুল হাকিম।
বিআলো/তুরাগ