বাংলাদেশে সুফিবাদ ও শাহ আবদুল মালেক আল-কুতুবী (রহ.)-এর আধ্যাত্মিক সাধনা
মুসলিমপ্রধান বাংলাদেশে ইসলামের আগমন ও সম্প্রসারণ ঘটেছে সুফি-সাধকগণের মাধ্যমেই। ঐতিহাসিকদের মতে, এ বাংলায় ইসলাম হলো সুফিগণের উপহার। সুফিগণের জীবনী থেকে জানা যায় যে, তারা ছিলেন বাংলায় ইসলামি বিশ্বাসের প্রকৃত মশাল বহনকারী। তাসাউফ বা সুফিবাদ বিশ্বজনীন ইসলামের আধ্যাত্মিক রূপ। স্রষ্টার প্রেমে গভীরভাবে নিমগ্ন হয়ে আত্মশুদ্ধির উপায় অবলম্বনে আধ্যাত্মিকতা চর্চার মাধ্যমে তাসাউফ অর্জিত হয়। ভক্তি, বিনয় ও প্রীতি দিয়ে স্রষ্টার নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে আত্মশুদ্ধি ও চারিত্রিক উৎকর্ষ সাধনের প্রক্রিয়াই হলো সুফিবাদ। সুফিতত্ত্ব বিভিন্ন আধ্যাত্মিক পথ-পাথেয় নিয়ে গঠিত হয়, যা মানব-প্রকৃতি উদঘাটন, স্রষ্টাকে জানা এবং সর্বোপরি পৃথিবীতে ঐশ্বরিক প্রেম ও প্রজ্ঞার অনুভূতিকে সহজ করার জন্য সহায়ক হয়। ঐতিহাসিকভাবে জানা যায়, বাংলাদেশে ইসলামের ইসলামের আগমন ঘটেছে চট্টগ্রাম বন্দরে আরব বা মুসলিম বণিকদের আগমন ও যাত্রাবিরতির মাধ্যমে। আর ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটেছে সুফি-দরবেশগণের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়। সেই হিসেবে চট্টগ্রাম অঞ্চলে ওলি-আউলিয়া ও সুফি-দরবেশের সংখ্যা এবং তাদের ভক্ত-অনুসারীর সংখ্যা অন্য অঞ্চলের তুলনায় স্বাভাবিকভাবেই বেশি। ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারাবহিকতায় ইসলামের প্রচার-প্রসার এবং সুফিবাদের চর্চা ও সম্প্রসারণে চট্টগ্রামের আধ্যাত্মিক জগতের প্রাণপুরুষ শাহ আব্দুল মালেক আল-কুতুবী (রহ.) অন্যতম। তিনি যে মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেছেন আমি অধমও সেই চট্টগ্রাম দারুল উলুম আলিয়া মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছি। তাই ছাত্রজীবন থেকে কুতুবদিয়ার মালেক শাহ হুজুরের আধ্যাত্মিক খ্যাতির বিবরণ শুনে এসেছি। তাকে নিয়ে কিছু একটা লেখার সুযোগ পেয়ে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে। অতএব, বাংলাদেশে সুফিবাদের সামগ্রিক অব¯’া এবং এর প্রচার-প্রসারে শাহ আব্দুল মালেক আল-কুতুবী (রহ.)-এর কর্মপদ্ধতি সংক্ষিপ্তাকারে উপস্থাপন করাই এ নিবন্ধের মূল উপজীব্য বিষয়।
সুফিবাদ বা তাসাউফ
সুফি শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত দু’টি বক্তব্য পাওয়া যায়। সাধারণভাবে, শব্দটির আভিধানিক অর্থ (صفاء) এর থেকে এসেছে, যার আরবি অর্থ বিশুদ্ধতা বা পবিত্রতা বা শুদ্ধতা বা পাপশূন্যতা, এ প্রসঙ্গে তাসাউফের অনুরূপ ইসলামের আরেকটি ধারণা বিবেচিত হয়ে থাকে যা তাজকিয়া (تزكية, অর্থ: আত্মশুদ্ধি) নামে পরিচিত, যা সুফিবাদেও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আরেকটি আরবি মূল পাওয়া যায়, যা পশম, (صُوف), শব্দটি থেকে সৃষ্টি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। পশম ছিল তৎকালীন মুসলিম তাপসদের সাধারণ পোশাক। সুফি আল-রুধাবারি এই দুইটি মূলকে একত্রিত করেছেন যিনি বলেন, ‘সুফি হলেন সে ব্যক্তি যিনি সর্বো”চ পরিশুদ্ধ অব¯’ায় পশমী বস্ত্র পরিধান করেন।’ আবার অনেকের মতে সুফি শব্দটি এসেছে আসহাবে সুফফা থেকে, আশ্রয়হীন সাহাবীদের একটি দল, যাদের নবী মুহাম্মদ মসজিদে নববীর প্রাঙ্গণে সুফফা নামক ¯’ানে থাকার বন্দোবস্ত করে দিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে সবচেয়ে সুপরিচিত ছিলেন হযরত আবু হুরাইরা (রা.)। কেউ কেউ মসজিদ-নববিতে অব¯’ানরত ঐ সহাবাদের প্রথম সুফি হিসেবে বিবেচনা করেন।
সুফিবাদ হ”েছ ইসলামের আধ্যাত্মিক-তাপসদের মরমীবাদ। এটি কোন সম্প্রদায় নয়, বরং এটিকে ইসলামিক শিক্ষা হিসেবে বিবেচনা করা হয় যা মানুষের স্বীয় অভ্যন্তরীণ পরিশুদ্ধতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। সাধারণভাবে সুফিবাদ বা তাসাউফকে ইসলামী আধ্যাত্মবাদ, ইসলামের অন্তর্নিহিত রূপ, ইসলামের অন্তর্গত আধ্যাত্মিকতার অদৃশ্য অনুভূতি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। আর এটি হলো ইসলামে আধ্যাত্মবাদ, যা নির্দিষ্ট মূল্যবোধ, আচার-প্রথা চর্চা, মূলনীতি দ্বারা বিশেষায়িত। ইসলামি পরিভাষায় সুফিবাদকে তাসাওউফ বলা হয়, যার অর্থ আধ্যাত্মিক তত্ত্বজ্ঞান। তাসাওউফ বা সুফিবাদ বলতে আত্মার পরিশুদ্ধির সাধনাকে বুঝায়। সুফিবাদের চর্চাকারীদের ‘সুফি’ আখ্যায়িত করা হয়। ইসলামে তাসাউফের আরেকটি সমার্থক ধারণা হলো তাজকিয়া (আত্মশুদ্ধি)। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে তারাই সফল হলো, যারা আত্মশুদ্ধি অর্জন করল।’ (আল-কুরআন ৯১:০৯) সুফিদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সন্ন্যাসবাদ, বিশেষত ‘যিকির’ নামক আল্লাহ-স্মরণের চর্চার সঙ্গে তাদের ঐকান্তিক সম্পর্ক, যা তারা প্রায় সময় সালাতের পর করে থাকে।
সুফীরা দাবি করে যে, আত্মার পবিত্রতার মাধ্যমে ফানাফিল্লাহ (আল্লাহর সঙ্গে অব¯’ান করা) এবং ফানাফিল্লাহর মাধ্যমে বাকাবিল্লাহ (আল্লাহর সঙ্গে ¯’ায়ীভাবে বিলীন হয়ে যাওয়া) লাভ করা যায়। তাসাওউফ দর্শন অনুযায়ী আল্লাহ-প্রাপ্তির সাধনাকে ‘তরিকত’ বলা হয় এবং তরিকত সাধনায় মুর্শিদ বা পথপ্রদর্শকের প্রয়োজন হয়। সেই পথ হলো, ফানা ফিশশাইখ, ফানা ফিররাসুল ও ফানাফিল্লাহ। ফানাফিল্লাহ হওয়ার পর বাকাবিল্লাহ লাভ হয়। বাকাবিল্লাহ অর্জিত হলে সুফি দর্শন অনুযায়ী সুফি আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ শক্তিতে শক্তিমান হন। সার্বক্ষণিক আল্লাহর স্মরণের মাধ্যমে কলবকে কলুষমুক্ত করে আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন এবং যারা তার ভালোবাসা লাভ করেছেন, তাদের তরিকা বা পথ অনুসরণ করে ‘ফানাফিল্লাহর মাধ্যমে বাকাবিল্লাহ অর্জন করা’ সুফিবাদের উদ্দেশ্য। আধুনিকালের কিছু পণ্ডিত সুফিবাদকে অন্যরকমভাবেও সংজ্ঞা দিয়ে থাকেন যেমন ‘ইসলামি বিশ্বাস ও অনুশীলনের তীব্রতা’ এবং ‘নৈতিক ও আধ্যাত্মিক আদর্শ উপলব্ধি প্রক্রিয়া’। আঠারো শতকে ইউরোপীয় ভাষায় সুফিবাদ শব্দটি চালু করেন প্রাচ্যবিদ পণ্ডিতরা। আধুনিককালের পাণ্ডুলিপিগুলোতে এই শব্দটি সুফিদের সঙ্গে সম্পর্কিত সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ঘটনাগুলোর বিস্তৃত বর্ণনা করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে।
সুফিবাদ বা তাসাউফের ঐতিহাসিক ভিত্তি
ঐতিহাসিকভাবে, সুফিগণ বিভিন্ন তরিকা বা ধারার অনুসারী হয়ে থাকেন। তরিকা হলো. এমন কিছু ধর্মসভা যা কোনো মহান শিক্ষাগুরুকে কেন্দ্র করে গঠিত, যাদের ‘ওয়ালী’ বলা হয়, এবং তারা অনুসারীদের সঙ্গে ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর সরাসরি সংযোগ বা সিলসিলা ¯’াপন করেন। এই তরিকাগুলো জাওয়াবিয়া, খানকা বা তেক্কে নামক কোনো নির্দিষ্ট¯’ানে মজলিস নামক আধ্যাত্মিক বৈঠকে মিলিত হয়। তারা ইহসানের (ইবাদতের পূর্ণাঙ্গতা) জন্য সংগ্রাম করে। এ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, ‘ইহসান হল এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত কর যে, তুমি তাকে দেখছো, অথবা তুমি তাকে না দেখলেও নিশ্চয়ই তিনি তোমাকে দেখছেন।’ সুফিগণ মুহাম্মদকে (সা.) আল-ইনসান আল-কামিল বলে আখ্যায়িত করে থাকে এবং তাকে নেতা ও প্রধান আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শক হিসেবে দেখে। সকল সুফি তরিকা মুহাম্মদ এর কাছ থেকে পাওয়া তাদের অধিকাংশ অনুশাসন তার চাচাতো ভাই ও জামাতা আলীর বরাতে গ্রহন করে থাকে এবং তাকে উল্লেখযোগ্য বিশেষ ব্যক্তি মনে করে। প্রাচীন ও আধুনিক সুফিদের সিংহভাগই ছিল সুন্নি ইসলামের অনুসারী, মধ্যযুগের শেষভাগে শিয়া ইসলাম পরিমণ্ডলের ভেতরেও কিছু সুফি ধারার বিকাশ ঘটে। যদিও সুফিগণ কট্টর রীতিনীতির বিরোধী, তারপরও তারা ইসলামী আইন কঠোরভাবে মেনে চলে এবং তারা ইসলামী ফিকহ ও ধর্মতত্ত্বের বিভিন্ন ধারার অনুসরণ করে।
প্রারম্ভিক দিকে উমাইয়া খিলাফতের (৬৬১-৭৫০) জাগতিক দুর্বলতার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়াস্বরূপ মুসলিমদের মধ্য থেকে সুফিগণ উল্লেখযোগ্য হারে অনুসারী লাভ করে এবং এক সহস্রবছর সময়ের মধ্যে বহু মহাদেশ ও সংস্কৃতিতে তারা বিস্তৃতিলাভ করে, প্রাথমিকভাবে আরবি ভাষায় এবং পরবর্তীতে ফারসি, তুর্কি ও উর্দু ভাষায় অন্যদের মাঝে তাদের বিশ্বাসের প্রচার ও প্রসার করে। সুফিগণ তাদের ধর্মপ্রচার ও শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে মুসলিম সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সাম্প্রতিক সময়ে সুফি তরিকাগুলোর সংখ্যা ব্যাপকহারে হ্রাস পাওয়া এবং সুফিবাদের কিছুদিক নিয়ে আধুনিকতাবাদী চিন্তাবিদ ও রক্ষণশীল সালাফিবাদীদের সমালোচনা সত্ত্বেও, সুফিবাদ ইসলামী বিশ্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে এবং এর পাশাপাশি পাশ্চাত্যের আধ্যাত্মিকতার বিভিন্ন রূপকেও প্রভাবিত করেছে।
ইতিহাস গবেষণা করে জানা যায়, সুফিবাদী দর্শন তিনটি উৎস থেকে ইসলামে প্রবেশ করে। যেমন, ১. দক্ষিণ এশীয় হিন্দু, বৌদ্ধ ও শিখদের থেকে ২. খ্রিষ্টানদের নিকট থেকে এবং ৩. মধ্যপ্রাচ্য থেকে। বিশিষ্ট ইসলামি গবেষক ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ (রহ.) বলেন, হিজরীর প্রথম সোনালি তিন যুগে সুফি শব্দটি প্রসিদ্ধ ছিল না। যেই তিন প্রজন্মের প্রশংসা স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সা.) করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “মানব জাতির শেষ্ঠতম প্রজন্ম হলো আমার প্রজন্ম, এরপরে আছে যারা তাদের পরে আসবে, এরপর তাদের পরবর্তী যারা আসবে…”(বুখারী: ২৬৫২, ২৫৩৩)। কিš‘ তখনকার কয়েকজন উল্লেখযোগ্য আবেদ যাদের সুফিসাধক হিসাবে সুফিবাদিরা উল্লেখ করেছেন, যেমন: হাসান বসরি, ইব্রাহীম ইবনে আদম, আবু হাশিম, মারূফ করখী প্রমুখ। এরা সবাই ছিলেন আরববাসী এবং এরা ইসলামের আওতার মধ্যে থেকেই ইসলামের ইবাদত বন্দেগীতে মগ্ন হয়েছিলেন।
বাংলাদেশে সুফিবাদ
বাংলাদেশে সুফিবাদের ইতিহাস অনেকটা সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশের অনুরূপ। ভারতকে দাবি করা হয়ে থাকে বিশ্বের সুফিবাদের পাঁচটি প্রধান কেন্দ্রের একটি, অন্য চারটি হল পারস্য (মধ্য এশিয়াসহ), বাগদাদ, সিরিয়া এবং উত্তর আফ্রিকা। সুফি সাধকরা হিন্দুস্তানে (ভারত) সুফিবাদের গুপ্তরহস্যমূলক দীক্ষা প্রচার করতে থাকেন যা খুব সহজেই সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে ভারতের আধ্যাত্মিক সত্য সন্ধানীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। বাংলাদেশের সুফি মতবাদ ও এর চর্চা পবিত্র কুরআন ও হাদিসকে অনুরসণ করে প্রতিষ্ঠিত। কোরআনের নিগূঢ় রহস্যমূলক আয়াতগুলো সুফিবাদের মূল উৎস। নফস (অহং), যিকির (স্মরণ), ইবাদত (প্রার্থনা), মুরাকাবা (ধ্যান), মিরাজ (আল্লাহর সাক্ষাত লাভ), তাজাল্লি (স্বর্গীয় দীপন), তাওহীদ (আল্লাহর একত্ববাদ), ফানা (নির্বাণ) এবং বাকা (অস্তিত্ব) এসব ধারণাই হ”েছ সুফিবাদের মৌলিক উৎস যা বাংলাদেশে চর্চা হয়ে থাকে।
বলা হয়, ইসলাম ধর্ম প্রবর্তনের আগেই এ পৃথিবীতে সুফিবাদ ছিল। আর তা ধীরে ধীরে ইসলামে প্রবেশ করেছে। এই মতবাদ প্রথমে পারস্য এবং পরবর্তীকালে ভারতীয় সভ্যতায় অনিবার্য প্রভাব পড়েছিল। উপমহাদেশে রাজনৈতিক কারণে সুফিদের প্রধান্য বেশি থেকে যায়, যা আজও বিদ্যমান। বাংলার জনসমাজে প্রায় হাজারবছর ধরে সুফিবাদ মতবাদটি দারুণ জনপ্রিয় ও গ্রহণীয়। অনেকে মনে করে ইসলামি সুফিবাদ পারস্য থেকে শুরু হয় আর শেষ হয় উপমহাদেশে। ১২০৪-৫ খ্রিস্টাব্দে বখতিয়ার খলজী কর্তৃক বাংলা বিজিত হলে ইসলামের শরীআত ও মারিফত উভয় ধারার প্রচার ও প্রসার তীব্রতর হয়। শাসকশ্রেণির সঙ্গে বহু পীর-দরবেশ এদেশে আগমন করে নিজস্ব তরীকায় ইসলাম প্রচারে মনোনিবেশ করেন। সুফিগণ নিজেদের রচিত বিভিন্ন তরীকা এবং মানুষের মাঝে প্রেম-ভ্রাতৃত্ব-সাম্যের মধুর বাণী প্রচার করে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এদেশের কিছু সাধারণ মানুষের মন জয় করতে সক্ষম হন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ লোকমুখে কিংবদন্তি-পুরুষে পরিণত হয়েছেন। এদের অনেকের দরগাহ তৈরি হয়েছে, যেগুলোকে পবিত্র ও পুণ্য ¯’ান বিবেচনা করা হয়। এই সুফিবাদ দ্বারা পরবর্তীতে বৈষ্ণবধর্ম, লৌকিক মরমিবাদ, বাউল ধর্মমত ও অন্যান্য ভক্তিবাদও কমবেশি প্রভাবিত হয়।
আল্লামা শাহ আবদুল মালেক আল-কুতুবী (রহ.)-এর আধ্যাত্মিক কর্মপদ্ধতি
বাংলাদেশে ইসলামের প্রচার-প্রসারে সুফী-দরবেশ ও পীর-মাশায়েখের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তেমন একজন জ্ঞানতাপস, সমাজসংস্কারক ও আধ্যাত্মিক প্রাণপুরুষের কর্মপদ্ধতি ও অবদান সম্পর্কে আলোকতপাতের প্রয়াস রইলো। বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য সুফি-সাধক হলেন ওলিয়ে কামিল, মুসলিম রেনেসাঁর অন্যতম অগ্রদূত, যুগশ্রেষ্ঠ আলিমে দ্বীন, শাহ আব্দুল মালেক আল-কুতুবি (রহ.)। এ আধ্যাত্মিক মহানপুরুষ পর্যটননগরী কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া থানার ধুরুং গ্রামে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ, মতান্তরে ৩১ ডিসেম্বর ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কুতুবদিয়ার মালেক শাহ হুজুর নামে সমধিক খ্যাত। তিনি একাধারে ছিলেন বহু ভাষাবিদ, ধর্মতত্ত্ববিদ, মুফা”িছরে কুরআন, হাফিজুল হাদিস, ফকিহুল মিল্লাত, ইসলামী উত্তরাধিকার আইনবিদ (ফরায়েজ), শায়খুল মাশায়েখ এবং মানবতাবাদী আধ্যাত্মিক ধর্মীয় ইমাম। এ বরেণ্য শিক্ষাবিদ দর্শন, যুক্তিবিদ্যা, অলংকার শাস্ত্র ও দর্শন শাস্ত্রসহ নানাবিধ জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন।
জানা যায়, শাহ আব্দুল মালেক ছোটবেলা থেকে অত্যন্ত পরহেজগার ও দ্বীনদার প্রকৃতির ছিলেন। সাত বছর বয়স থেকে নিয়মিত ফরজ সালাতের পাশাপাশি নফল ইবাদত ও তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করতেন। দারুল উলুম আলিয়া মাদরাসা (চট্টগ্রাম) থেকে পড়াশুনা শেষ করে দারুল উলুম দেওবন্দ (ভারত) থেকে তফসির, হাদিস এবং ফিকাহ বিভাগ থেকে উ”চতর অধ্যায়ন সমাপন করেন। লেখাপড়া শেষে কর্মজীবনের শুরুতে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেন। এর পাশাপাশি গ্রাম-গঞ্জে ওয়াজ-নসিহত ও হেদায়াতের বাণী প্রচারে নিজকে নিয়োজিত রাখেন। ছাত্রাব¯’ায় সৈয়দ হাফেজ মুনিরুদ্দীন নুরুল্লাহ (র.)’র হাতে বায়’আত গ্রহণ করেন এবং সুদীর্ঘকাল পীরের সান্নিধ্যে ও খিদমতে থেকে জাহিরি ও বাতিনি শিক্ষা নিয়ে তরিক্বতের খিলাফত লাভ করেন। ইলমে বেলায়াতের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছার পর শিক্ষকতা ছেড়ে পাহাড়-পর্বতে এবং নির্জনে আধ্যাত্মিক-সাধনায় নিমগ্ন হন।
পীর-দরবেশ বা সুফিগণের আধ্যাত্মিক সাধনার নিজস্ব কর্মপদ্ধতি থাকে। তেমনিভাবে মহান ওলি শাহ আব্দুল মালেক (রহ.) এর অলৌকিক খোদায়ি ক্ষমতা ও রিয়াজতের কিছু কর্মপদ্ধতি রয়েছে। সেই কর্মপদ্ধতিসমূহ সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো-
ক্স হজরত আল-কুতুবীর-হালত ও জজবা (আল্লাহর প্রতি আকর্ষণ) ছিল ইশকে ইলাহির (আল্লাহর প্রেম) অলৌকিক ক্রিয়াকলাপে পরিপূর্ণ। তিনি দিনে-রাতে আল্লাহ ও রাসূলের (সা.) ইবাদতে মশগুল থাকতেন এবং তাশাহুদের অবয়বে দীর্ঘক্ষণ মুরাক্বাবা ও মুশাহিদায় ধ্যানমগ্ন অব¯’ায় থাকতেন।
ক্স জবান ও ক্বলব সর্বদা আল্লাহ ও তার প্রিয় রাসূলের (সা.) যিকিরে অবিশ্রান্ত ও প্রাণবন্ত থাকতো। ভক্ত-আশেকানদের আল্লাহর যিকিরের তা’লিম দিতেন এবং বলতেন, ‘ডান হাতের তর্জনি, মধ্যমা, অনামিকা ও কনিষ্ঠা আঙ্গুল দিয়ে বাম হাতের তালুর উপর চাপড় মেরে ‘আল্লাহ’-‘আল্লাহ’ শব্দের সমন্বয়ে একাগ্রতার সঙ্গে জোর গলায় আল্লাহকে ডাকো’। তবে নিজে হাতে চাপড় মেরে যিকির করতেন না। তিনি মুখে বা জবানে ‘আল্লাহ’-‘আল্লাহ’ দিয়ে যিকির করতেন। হাতে চাপড় দিয়ে যিকির করা সম্পর্কে হযরত শাহ মালেক (র.) বলতেন, “একটি কাঠিকে আরেকটি কাঠি দ্বারা আঘাত করে শব্দ সৃষ্টি করা শরিয়তের দৃষ্টিতে নাজায়েজ। তবে হাতে চাপড় মেরে ‘আল্লাহ’-‘আল্লাহ’ শব্দের সমন্বয়ে নফসের পরিশুদ্ধতা আনয়নের জন্য লোকদের যিকির করার ব্যাপারে আল্লাহ পাক আমাকে ইলহাম করেছেন”। এ যিকিরের ফলে মানুষের মৃত ক্বলব (অন্তর) সহসা উজ্জীবিত হতো। যিকিরের আওয়াজে পুরো এলাকা ‘আল্লাহ’-‘আল্লাহ’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত হতো! এ চাপড় অনুভূতিহীন মানুষের অন্তরে জাগরণ সৃষ্টি করে। হজরত আল-কুতুবি (র.) আরো বলেছেন, ‘এটি আত্মশুদ্ধির স্বল্প মেয়াদি বিশেষ ব্যব¯’া; সময়সাপেক্ষে হাতে চাপড় মেরে যিকির করার পদ্ধতিটি বন্ধ হয়ে যাবে’।
ক্স আল্লামা মালেক শাহ (রহ.) দু’হাত ডানে-বামে উঁচু-নিচুতে আন্দোলিত করে আল্লাহ ও তার প্রিয় হাবিবের (সা.) ইশকে বিভোর হয়ে মাস্তি অব¯’ায় থাকতেন। যিকিররত অব¯’ায় তার দিকে দৃষ্টিপাত করলে মনে হতো, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম ও কষ্টকর কাজটি নিপুণতার সঙ্গে সমাধান করছেন। যিকিরের সময় ভক্তবৃন্দ ইশকে ইলাহিতে ফানা হয়ে থাকতেন। যিকিরের প্রভাবে মানুষের ক্বলবে ‘আল্লাহ’-‘আল্লাহ’ যিকির নিরন্তর হয়ে যেতো এবং ঈমান শতগুণে বৃদ্ধি পেতো।
ক্স মালেক শাহ হুজুরের ফয়েজ ও তাওয়াজ্জুহের বরকতে মানুষের অন্তরে হিদায়াতের নূর প্রজ্জ্বলিত হতো। তার রূহানি ফয়েজের প্রভাবে ভক্তবৃন্দ নবি করিমের (সা.) সাক্ষাৎ লাভ করতেন। একদা তিনি হুজরাতে ধ্যানমগ্ন অব¯’ায় ছিলেন। হঠাৎ ‘ইয়া নবি সালাম আলাইকা’ বলে দাঁড়িয়ে যান। উপ¯ি’ত সকলেও সমবেত কণ্ঠে নবিজি (সা.)-কে সালাতু-সালাম পেশ করলেন। কিছুক্ষণ পর তিনি বললেন, নবি করিম (সা.) এ মজলিসে হাজির হয়েছেন। তিনি প্রায় বলতেন, ‘কুতুব শরীফ মদিনা শরীফ যায় আর মদিনা শরীফ কুতুব শরীফে আসে’।
ক্স হযরত আল-কুতুবি প্রায়ই বলতেন-‘আমি জাহিরি ও বাতিনিভাবে এমনকিছু বিশেষ কাজ করে যা”িছ; যা অব¯’া ও সময় সাপেক্ষে দৃশ্যমান হবে। বার্মার আরাকান থেকে আফগান পর্যন্ত ইসলামের বিজয়ের পতাকা পতপত করে উড়বে। কুতুবদিয়া দ্বীপের চতুর্দিকে বড় বড় (মাদার ভেসেল) জাহাজ নোঙর করবে। কুতুবদিয়া দ্বীপের চারিদিকে লাল-নীল রঙের বাতি জ্বলবে। হেঁটে কুতুবদিয়া চ্যানেল পার হওয়া যাবে। কুতুবদিয়া দ্বীপ গ্যাস, তেল ও স্বর্ণের ওপর ভাসছে। সময়মতো তার সন্ধান পাওয়া যাবে। বাংলাদেশ এশিয়া মহাদেশের বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র হবে। এশিয়া মহাদেশের অর্থনীতি বাংলাদেশ নিয়ন্ত্রণ করবে।
ক্স হযরত শাহ আব্দুল মালেক (রহ.) খুবই স্বল্পাহার ও অল্পনিদ্রায় অভ্যস্ত ছিলেন। অনেক সময় দিনের পর দিন মাসের পর মাস না খেয়ে রিয়াজতে মশগুল থাকতেন। খাবার গ্রহণের আগে-পরে আল্লাহ ও তার প্রিয় হাবীবের (সা.) শুকরিয়া জ্ঞাপন করতেন এবং আল্লাহর পক্ষ হতে কোনো নিয়ামতপ্রাপ্ত হলেও শুকরিয়া আদায় করতেন।
ক্স হযরতুল আল্লাম প্রায়সময় উপ¯ি’ত মানুষজনকে কুরআন ও হাদিসের আলোকে তাৎপর্যপূর্ণ নসিহত প্রদান করতেন। তার বয়ান ও রুহানি দৃষ্টির প্রভাবে মানুষ আল্লাহর ইবাদত ও রাসুল (সা.)-এর আনুগত্যে একাত্ম হতেন। সমকালীন সময়ের আলিমদের মধ্যে তিনি ছিলেন, ফসিহুল লিসান ও বলিগুল বায়ান। যুগের বিজ্ঞ আলেমগণ তাকে ‘বাহরুল উলুম’ ও ‘হাফিজুল হাদিস’ হিসেবে মূল্যায়ন করতেন।
ক্স তিনি অসহায় ও গরিব মানুষদের সমাদর করতেন, তবে ক্ষমতাধর ও সম্পদশালীদের নয়। প্রকৃত আলেম এবং আল্লাহওয়ালাদের সম্মান করতেন। মুহাক্কিক আলেমদের ‘ইজ্জতে ওলামা’ বলে সম্বোধন করতেন এবং বিদায় বেলায় আলেমদের হাদিয়া প্রদান করতেন। অতিথি আপ্যায়নে তিনি ছিলেন অগ্রগামী। দরবারে আগত সকল মেহমানকে সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা, রাতে বিনামূল্যে খাবার খাওয়াতেন।
ক্স যুগশ্রেষ্ঠ এ মহান আধ্যাত্মিক পুরুষ ছিলেন- সুন্নতে নবী (সা.) জীবন্ত প্রতি”ছবি। তিনি বলতেন- ‘আমার প্রকৃত হালত সম্পর্কে তোমরা অবগত নও। আমি মজযূব নই। আমাকে মজযূব হিসেবে সংজ্ঞায়িত করলে কিয়ামত দিবসে আল্লাহর আদালতে দোষী সাব্যস্ত হতে হবে। আমার হালত দু’টি- (১) হালতে জালালি (২) হালতে জামালি’। তিনি বলতেন- ‘জালালি হালতের সময় আমার কাছে কেউ যেন না আসে। কারণ এ অব¯’ায় জালালিয়াতের ফয়েজ জারি হয়; এ ফয়েজ কেউ বরদাস্ত করতে পারবে না’। এমতাব¯’ায় খাওয়া-দাওয়াসহ দুনিয়াবী সমস্ত কার্যকলাপ হতে তিনি বিরত থাকতেন।
ক্স তার সুরত সর্ম্পকে তিনি নিজেই বলেছেন, আমার সুরত তিনটি- (১) সুরতে বশরি অর্থাৎ যে সুরতে হাজেরানে মজলিসে সামনে আমি উপ¯ি’ত থাকি, (২) সুরতে নূরি অর্থাৎ যে সুরতে আমি আল্লাহ পাকের জাতের সামনাসামনি হাজির থাকি, (৩) সুরতে মালাকি অর্থাৎ যে সুরতে আমি বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে সফর করে থাকি’। আল্লাহ তা’আলা হযরত আল-কুতুবী (র.)-কে এত অধিক পরিমাণে ইলমে লাদুন্নি ও ইনকেশাফি (কাশফ, অভিহিত করা, জানিয়ে দেওয়া) ইলম দানে ধন্য করেছেন যা বর্ণনাতীত এবং অকল্পনীয়। হজরত আল-কুতুবীর মাক্বামে বেলায়াত সম্পর্কে তার পীর ও মুর্শিদ হাফেজ মুনিরুদ্দীন (রহ.) বলেছেন, ‘আমার আবদুল মালেকের বিষয়ে আল্লাহ পাক আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন; সে দায়িত্ব আমার কাছ থেকে আল্লাহ পাক উঠিয়ে নিয়েছেন। আমার আব্দুল মালেককে আমি যে সমস্ত নিয়ামত দান করেছি, সবই উঠিয়ে নিলেও আল্লাহর পক্ষ হতে অজস্র নিয়ামত এসে পুনরায় তার সিনায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। তার সুদৃষ্টিতে মানুষ কামালিয়াত অর্জন করবে এবং বদনজরে জ্ঞানশূন্য হবে। সাবধান! আমার মালেকের সঙ্গে কেউ অশোভন আচরণ করবে না’।
ক্স প্রতিদিন-রাত অসংখ্য জ্বীন ও মানুষ তার পরশে ভীড় জমাতেন, যা তিনি পছন্দ করতেন না। সকলের হাদিয়া গ্রহণ করতেন না। মাঝেমাঝে টাকা-পয়সা আগুনে পুড়ে ফেলতেন। পোড়ানো টাকার দিকে দৃষ্টিপাত করে বলতেন, ‘এ টাকার দিকে নজর করিও না; এগুলো হারাম টাকা’। হাদিয়ার অধিকাংশ টাকা-পয়সা মানবসেবায় ব্যয় করতেন; অল্প টাকা দিয়ে আগত মেহমানদের মেহমানদারি করাতেন এবং সবসময় আল্লাহর ওপর ভরসা করে চলাফেরা করতেন।
সেদিন আকাশ ছিলো মেঘা”ছন্ন, হালকা গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছিলো। যুগের মহান আধ্যাত্মিক সাধক হযরত শাহ আব্দুল মালেক (রহ.) ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০০০ খ্রিস্টাব্দে ইন্তেকাল করেন। ইন্তেকালের সময় জবানে শাহাদাতের মাক্বাম লাভ করেছিলেন। জানাযার দিন চট্টগ্রাম শহরের অলিগলি লোকে-লোকারণ্য হয়ে যায়। এই মহান ওলির জীবন দর্শন ও শিক্ষা থেকে যুগযুগ ধরে জনসমাজ উপকৃত হয়ে আসছে। হযরত শাহ আবদুল মালেক (রহ.) এর শিক্ষা ও নসিহতসমূহ অনুসরণ করে মানুষের আত্মিক প্রশান্তি এবং সমাজের সার্বিক শান্তি ও কল্যাণ আনয়ন সম্ভব। মহান আল্লাহ আমাদেরকে তার শিক্ষা ও কর্মপদ্ধতি অনুসরণের তৌফিক দান করুন।
আমাদের এই দেশে ইসলামের দাওয়াত প্রথমেই কুরআন-হাদিস থেকে হয়নি, হয়েছে সুফি-দরবেশগণের আমল-আখলাক, বেশ-ভুষা, সুন্দর ব্যাবহার, মাধুর্যভরা কাব্য-কথা ইত্যাদির মাধ্যমে। সুতরাং, এসব বাহ্যিক দিকগুলোয় আকৃষ্ট ও প্রভাবিত হয়ে সাধারণ মানুষ ক্রমান্বয়ে সুফিবাদে বিশ্বাসী ও ভক্ত হয়ে ওঠে। কিš‘ সময়ের পরিক্রমায় সুফি-দরবেশের প্রকৃত শিক্ষা থেকে বিচ্যুত হয়ে বিভিন্ন তরীকায় বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং কুরআনের প্রকৃত শিক্ষা থেকে দূরে সরে যায়। তাই এসব থেকে মুক্তির একমাত্র পথ কুরআন আঁকড়ে ধরা এবং রাসুল (সা.)-এর দেখানো পথে জীবনকে ঢেলে সাজানো। অবশেষে সুফি-সাধকগণের কুরআন-হাদিস অনুসৃত কর্মপদ্ধতি অবলম্বন করে নিজেদেরকে আল্লাহর প্রিয়বান্দা হিসেবে তৈরি করার প্রচেষ্টা হোক আমাদের নিয়তি।
লেখক: মুহাম্মদ কামরুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
বিআলো/তুরাগ