বাউফলে মেয়ের জামাইয়ের হামলায় শ্বশুর–শাশুড়িসহ তিনজন গুরুতর আহত
বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার ৫নং সূর্যমনি ইউনিয়নের গোয়ালিয়াবাগা গ্রামে পারিবারিক বিরোধের জেরে মেয়ের জামাইয়ের হামলায় একই পরিবারের তিনজন গুরুতর আহত হয়েছেন। শুক্রবার বিকেল তিনটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন—আব্দুস সাত্তার (৬০), তাঁর স্ত্রী হেলেনা বেগম (৫০) এবং মেয়ে হাফসা বেগম (২১)।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স্ত্রী হাফসাকে নিতে স্বামী ইকবাল হোসেন মিরাজ (৩০) শ্বশুরবাড়িতে যান। কিন্তু হাফসা তার সাথে যেতে অস্বীকৃতি জানালে মিরাজ ক্ষিপ্ত হয়ে চুল ধরে টেনে-হিঁচড়ে তাকে মারধর করেন। এ সময় মেয়েকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে আব্দুস সাত্তারের মাথায় আঘাত করেন তিনি। পরে মেয়েকে রক্ষায় ছুটে গেলে হেলেনা বেগমকেও কাঠের রুয়া দিয়ে আঘাত করেন মিরাজ। এতে তাঁর মাথা ফেটে যায় এবং বাম হাত ভেঙে যায়।
আব্দুস সাত্তার অভিযোগ করে বলেন, “মেয়েকে অনেক অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। আমরা গরিব মানুষ—বারবার বুঝিয়েছি সংসার টিকিয়ে রাখতে। কিন্তু সে সাভারে মেয়েকে রেখে নির্যাতন করছিল। সহ্য করতে না পেরে মেয়েটা বাড়ি ফিরে আসে। আজ নিতে এসে না বলায় এমন হামলা করেছে। আমাদের গ্রামের লিটনও তাকে সহযোগিতা করেছে। জমিজমার পুরোনো বিরোধের প্রতিশোধ নিতে সে মিরাজকে উসকে দিয়েছে।”
হেলেনা বেগম বলেন, “মেয়েকে বাঁচাতে গেলে মিরাজ কাঠের রুয়া দিয়ে মাথায় আঘাত করে রক্ত ঝরতে থাকে। আমি হাত দিয়ে রক্ত থামাতে গেলে সে আমার বাম হাতেও বাড়ি মেরে হাত ভেঙে ফেলে। লিটনও তাকে লাঠি এগিয়ে দেয়।”
হাফসা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, “স্বামী আগে থেকেই আমাকে মারধর করত। শ্বশুরবাড়ির সবাই মানসিক নির্যাতন করত। গরিব পরিবার বলে বাবা-মা কিছুই করতে পারেনি। আজ আমাকে জোর করে নিয়ে যেতে চাইলে আমি না বলায় আমাকে এবং আমার পরিবারকে এভাবে মেরেছে।”
স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে বাউফল হাসপাতালে ভর্তি করেন। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মাশরাফুল ইসলাম সৈকত বলেন, “বিকাল ৪টা ৩০ মিনিটে আহতরা হাসপাতালে আসেন। তিনজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর দুজনকে অবস্থা গুরুতর হওয়ায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।”
এ ঘটনায় মামলা হবে কি না জানতে চাইলে হাফসা বলেন, “আগে সুস্থ হই, তারপর আইনগত ব্যবস্থা নেব।”
অভিযুক্ত ইকবাল হোসেন মিরাজের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
লিটনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, “আমাদের বাড়িতে ৫০ জনের মতো মানুষ থাকে। আব্দুস সাত্তারের পরিবারকে কেউ পছন্দ করে না। হাফসার জামাই মিরাজকে তারা তিনজন মিলে মারছিল, তাই মিরাজও তাদের মেরেছে। আমরা রক্ষা করতে গেলে তারা আমাদের গালাগালি করত, তাই যাইনি।”
পারিবারিক নির্যাতন ও পূর্বের জমিজমা বিরোধকে কেন্দ্র করে এ ঘটনার পর এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
বিআলো/ইমরান



