বাশারের পতন ঘটানো কে এই বিদ্রোহী নেতা আল-জুলানি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আবু মোহাম্মদ আল-জুলানি সিরিয়ার সশস্ত্র গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের প্রধান কমান্ডার। ২০১৬ সালে আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার আগে জুলানি আল-কায়েদার সাবেক সিরিয়ান শাখা আল- নুসরা ফ্রন্টের আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে সবচেয়ে শক্তিশালী দল আবু মোহাম্মদের গোষ্ঠী তাহরির আল-শাম। বর্তমানে সিরিয়ার সবচেয়ে স্বীকৃত বিদ্রোহী নেতা তিনি।
আল কায়েদা থেকে বিছিন্ন হওয়ার পর ধীরে ধীরে নিজের স্বতন্ত্র গোষ্ঠী তৈরি করে নতুন নামকরণ করেন তিনি। হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) ২০১৭ সালে আল-নুসরা ফ্রন্ট (এএনএফ) এবং অন্যান্য কয়েকটি গোষ্ঠীর মধ্যে একীভূতকরণ থেকে গঠিত হয়েছিল। এইচটিএস উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করে যাদের প্রধান লক্ষ্য সিরিয়ার আসাদ সরকারকে উৎখাত করা। সিরিয়ায় আল- কায়েদার সহযোগী হিসেবে একটি সুন্নি ইসলামিক রাষ্ট্রের সঙ্গে এইচটিএসের নিজস্ব লক্ষ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
আবু মোহাম্মদ আল-জুলানি ১৯৮২ সালে সৌদি আরবের রিয়াদে জন্মগ্রহণ করেন। সেখানে তার বাবা পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কাজ করতেন। পরে ১৯৮৯ সালে তার পরিবার সিরিয়ার দামেস্কে ফিরে সেখানে বসতি স্থাপন করে। দামেস্কে তার কার্যক্রম সম্পর্কে খুবই কম জানা যায়।
পরে ২০০৩ সালে তিনি ইরাকে চলে যান। সেখানে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণ প্রতিরোধের অংশ হিসেবে আল-কায়েদাতে যোগ দেন। ২০০৬ সালে ইরাকে মার্কিন বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়ে পাঁচ বছর বন্দি ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে আল-জুলানিকে পরে সিরিয়ায় আল-কায়েদার শাখা আল-নুসরা ফ্রন্ট প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তখন তিনি ‘ইসলামিক স্টেট ইন ইরাকের’ প্রধান আবু বকর আল-বাগদাদির সঙ্গে সমন্বয় করেছিলেন। পরবর্তীতে দলটি আইএসআইএল (আইএসআইএস) হয়ে ওঠে।
২০১৩ সালে আল-বাগদাদি হঠাৎ আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়ে সিরিয়ায় বিস্তৃতভাবে কাজ করার কথা জানায়। মূলত সেখানকার আল-নুসরা ফ্রন্টকে আইএসআইএল নামে নতুন গোষ্ঠী গঠনের কথা বলা হয়। তখন আল-জুলানি আল-কায়েদার প্রতি আনুগত্য বজায় রেখে এই পরিবর্তন প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
২০১৩ সালে বেসামরিক লোকদের ওপর হামলা এবং একটি সহিংস সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করার কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আবু মোহাম্মদকে সন্ত্রাসী হিসেবে মনোনীত করে। এর প্রায় ৮ বছর পরে ইউএস পাবলিক ব্রডকাস্টিং সার্ভিসের ফ্রন্টলাইনের একটি প্রোগ্রামে সাক্ষাৎকার দেন তিনি। সেখানে তিনি দাবি করেন, তাকে সন্ত্রাসী উপাধিটি অন্যায়ভাবে দেওয়া হয়েছে এবং তিনি নিরীহ মানুষ হত্যার বিরোধিতাও করেন। কীভাবে নুসরা ফ্রন্ট এক বছরের মধ্যে ইরাক থেকে তার সঙ্গে আসা ৬ জন থেকে ৫ হাজার জনে পরিণত হয়েছে সেই সম্পর্কেও বিস্তারিত বলেন তিনি।
জুলানির দাবি, তার দল কখনই পশ্চিমাদের হুমকি দেয়নি। তিনি সেখানে বলেন, ‘আমি আবারও বলছি – আল কায়েদার সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততা শেষ হয়ে গেছে এবং আমরা যখন আল কায়েদার সঙ্গে ছিলাম তখনও আমরা সিরিয়ার বাইরে অভিযান চালানোর বিপক্ষে ছিলাম। এটি সম্পূর্ণভাবে আমাদের নীতির বিরুদ্ধে।’
বিআলো/শিলি