বিএনপির মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবিতে মান্দায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ
এ.বি.এস রতন, নওগাঁ: আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নওগাঁ-৪ (মান্দা) আসনে বিএনপির মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে উপজেলা বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) বিকেলে উপজেলার ফেরিঘাট বাসস্ট্যান্ড এলাকায় (নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কে) এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। মানববন্ধন শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ও ভালাইন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, বিষ্ণপুর ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি নূরুল ইসলাম, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাদেকুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম বেলালসহ আরও অনেকে।
বক্তারা অভিযোগ করেন, নওগাঁ-৪ আসনের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামত উপেক্ষা করে কেন্দ্রীয়ভাবে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। তারা বলেন, “তৃণমূলের পরিশ্রমী, ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাদের বঞ্চিত করে অন্য কাউকে প্রার্থী করা হলে তা দলের জন্য আত্মঘাতী হবে।” নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় বিএনপির কাছে দ্রুত মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে বলেন, বহুবার কারা নির্যাতিত, সৎ, যোগ্য ও আদর্শবান নেতা এম এ মতীনকেই এই আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী করা হোক। এম এ মতীন বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, মান্দা উপজেলা বিএনপির সভাপতি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক। দীর্ঘদিনের দলীয় কর্মকাণ্ড, সাংগঠনিক দক্ষতা ও রাজনৈতিক ত্যাগের কারণে তিনি স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক জনপ্রিয়। বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রামে বহুবার গ্রেফতার ও নির্যাতনের শিকার হওয়া এই নেতা তৃণমূল কর্মীদের কাছে আদর্শ হিসেবে বিবেচিত।
তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতে, এম এ মতীন হচ্ছেন সেই নেতা, যিনি দুঃসময়ে সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন এবং মাঠের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এর আগে গত সোমবার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নওগাঁ-৪ (মান্দা) আসনে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক ডা. ইকরামুল বারী টিপুকে মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেন। ঘোষণার পরপরই উপজেলা জুড়ে দেখা দেয় বিভাজন—একপক্ষে এম এ মতীনের সমর্থক নেতাকর্মীদের পুনর্বিবেচনার দাবি, অন্যপক্ষে টিপুর মনোনয়ন ঘিরে উচ্ছ্বাস। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তৃণমূলের আপত্তি অব্যাহত থাকলে দলীয় ঐক্যে টান পড়তে পারে। এর আগে গত ২৩ অক্টোবর মান্দা উপজেলা বিএনপি এক সংবাদ সম্মেলনে ডা. ইকরামুল বারী টিপুর ‘দলীয় আদর্শ ও শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের’ অভিযোগ তুলে তার সঙ্গে সব ধরনের রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দেয়। সে সময় উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম এ মতীনসহ শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
নেতারা অভিযোগ করেছিলেন, ডা. টিপু অতীতে সংস্কারপন্থী রাজনীতিতে জড়িয়ে বিকল্পধারায় যোগ দেন এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর বিরোধিতা করে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে সমর্থন দেন, যা দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের শামিল। স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মান্দায় বিএনপি দীর্ঘদিন ধরেই এম এ মতীনের নেতৃত্বে সাংগঠনিকভাবে শক্ত অবস্থানে রয়েছে। তাই মনোনয়ন পুনর্বিবেচনা না হলে তৃণমূলের মধ্যে ভাঙন দেখা দিতে পারে। তারা মনে করেন, “মান্দার মাটি ও মানুষের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত, আন্দোলনের মাঠে সক্রিয় নেতাকেই প্রার্থী করা হলে বিএনপি এই আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারবে।”
বিআলো/ইমরান



