বিএনপি ও আওয়ামী যুবলীগের নেতা আপন ২ ভাই, জিম্মি এলাকাবাসী
মো. আনোয়ার হোসেন: গাজীপুরে একই পরিবারের সহোদর দুই ভাইয়ের মধ্যে এক ভাই বিএনপির গাছা থানা শাখার সাবেক সভাপতি মো. আসাদুজ্জামান আসাদ আরেক ভাই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য ও আওয়ামী যুবলীগের গাছা থানার সভাপতি প্রার্থী রাশেদুজ্জামান জুয়েল মন্ডল।
মহানগরীর গাছা থানার চান্দরা ও এর আশেপাশের এলাকায় জমি বেচা-কেনা, বাড়ি নির্মাণ, যানবাহন চালানো, ঠিকাদারী, কল-কারখানা এমনকি বাড়িতে টিউবওয়েল বসাতে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ জুয়েল মন্ডলের বিরুদ্ধে।
গাছা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আ. হাইয়ের ৩য় পুত্র আসাদুজ্জামান আসাদ এবং তারই সহোদর ছোট ভাই হল রাশেদুজ্জামান জুয়েল মন্ডল।
প্রথমে জুয়েল মন্ডল ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ও পরে যুবলীগ নেতা পরিচয়ে গড়ে তুলে ছিল নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী। ছিল এলাকার আতংক। তিনি বিয়ে করেছে ৩৭ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সিটি কর্পোরেশনে ৩৭ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ফজলুল হক চৌধুরীর মেয়েকে। আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর রাশেদুজ্জামান জুয়েল মন্ডল অবৈধভাবে অর্জন করেছে বিপুল পরিমাণ অর্থ সম্পদ। একে একে দখল করেছে মিল ফ্যাক্টরি সরকারী খাস জমি। গড়ে তুলেছে নিজস্ব বাহিনী। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পুলিশ কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে এলাকায় চালিয়েছে ত্রাসের রাজত্ব।
বিশেষ করে যারা বাইরের জেলা থেকে ওই সব এলাকায় বাড়ির ঘর নির্মাণ করত তাদের ওপর অত্যাচারের মাত্রা ছিল বেশি। ঘর-বাড়ি নির্মাণ, নির্মাণসামগ্রী ও ওয়ার্কশপের কাজ সাপ্লাইয়ের কাজ চড়া দামে তাকে দিতে বাধ্য করত সে। নইলে বাড়ি-ঘর দখল ও মালামাল লুট করে নিত। কেউ নিজ বাড়িতে টিউবওয়েল বসাতে চাইলেও তাকে চাঁদা দিতে হতো। এমনকি এলাকার রিকশাচালক, তরকারি বিক্রেতা, মুদি দোকানীরাও তাকে দিতে হতো চাঁদা।
স্থানীয়রা জানায়, তার রয়েছে নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী। বাহিনীর সদস্যরা মাদক বিক্রি, ছিনতাইসহ নানা অপকর্মে জড়িত। ‘গরিবের বন্ধু জুয়েল ভাই’ নামে ফেইসবুকে একটি আইডিও খোলা হয়েছে তার নামে। এই আইডিতে গাজীপুরের শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতাদের ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার ছবি পোস্ট করা রয়েছে। একাধিক মামলার মধ্যে কয়েকটি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকলেও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন প্রায়ই থানায় বসেই পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আড্ডা দিতে দেখা গেছে তাকে। বর্তমানে বিএনপির নেতা আসাদের ছত্রছায়ায় রয়েছে জুয়েল ও তার নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী। মাদক ব্যবসাসহ সকল অপকর্ম করে আসছে। যার কারণে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে খুনের ঘটনায় রুজু হওয়া একাধিক মামলার এজাহার নামীয় আসামি জুয়েলকে গ্রেপ্তার করেছে না পুলিশ।
গাজীপুর জেলা রেজিস্ট্রার সাবিকুন নাহারের কাছে জুয়েল মন্ডলের সম্পদের তথ্য চেয়ে আবেদন করলেও উনি ১৮ সেপ্টেম্বর ৯৬৬ নং স্মারকে পত্রের মাধ্যমে অপারগতা প্রকাশ করেন।
এ ব্যাপারে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের গাছা থানার ওসি আলী মোহাম্মদ রাশেদ জানান, গাছা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি আসাদুজ্জামান আসাদকে চিনি। তার ভাই জুয়েল মন্ডলের নাম শুনেছি। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে খুনের ঘটনায় রুজু হওয়া একাধিক মামলার এজাহার নামীয় আসামি। জুয়েলকে গ্রেপ্তারে পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। বিএনপির নেতা আসাদের ছত্রচ্ছায়ায় জুয়েলের সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা মাদকসহ কোন অপরাধ করছে কিনা এ বিষয়ে তথ্য নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিআলো/তুরাগ