বিএনপি নেতার উপর হামলা ও মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ, আরএমপি’র ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন!
নজরুল ইসলাম জুলু: গত ২১শে নভেম্বর দিনে দুপুরে রাজশাহী নগরীর ভদ্রা এলাকায় হত্যার উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসীরা ছুরি দিয়ে পেটে ও মাথায় আঘাত করে মারাত্মক জখম করে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ২৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর, সাবেক ছাত্রদল নেতা ও রাজশাহী মহানগর বিএনপি’র যুগ্ম আহবায়ক বজলুল হক মন্টু কে। উক্ত ঘটনায় জড়িত থাকায় ২৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি আবদুস সাত্তার ও রাজশাহী মহানগর যুবদলের সদস্য বিপ্লব রহমান নাঈমকে মহানগর বিএনপির সব ইউনিট থেকে বহিষ্কার করা হয়।
মন্টু কে হামলার ঘটনায় প্রায় ১ মাস ধরে নানান গড়িমসি করার পর রাজশাহী মহানগর বিএনপি’র নেতাকর্মীদের হস্তক্ষেপে ও প্রতিবাদের মুখে পরবর্তীতে বোয়ালিয়া থানা পুলিশ মামলা নিতে বাধ্য হয়।
মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মন্টুর উপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামিদের গ্রেফতার না করে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দায়ের করার প্রতিবাদে গতকাল বুধবার (৮ জানুয়ারি) রাজশাহী মহানগর বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠন প্রতিবাদ সমাবেশ করেন।
আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী মহানগর বিএনপি’র আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট জনাব এরশাদ আলী এশা। প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী মহানগর বিএনপি’র সদস্য সচিব মামুন অর রশীদ, রাজশাহী মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম শফিক, রাজশাহী মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান জনি, বোয়ালিয়া পশ্চিম থানা আহবায়ক শামসুল আলম মিলু, বোয়ালিয়া পূর্ব থানা আহবায়ক আশরাফুল আলম নিপু, বোয়ালিয়া থানা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক খোরশেদ আলম রিংকু, রাজপাড়া থানার আহবায়ক মিজানুর রহমান মিজান, বোয়ালিয়া থানা পূর্ব সদস্য সচিব আলাউদ্দিন, রাজশাহী ২১ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সৈয়দ আহমেদ বাদল সহ রাজশাহী মহানগর বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
প্রতিবাদী সভায় বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব এরশাদ আলী এশা বলেন, আমরা আইন কে শ্রদ্ধা করি, আমরা কোনো বিশৃঙ্খলা চায়না। ৫ই আগষ্টের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতাকর্মীরা পুলিশ সহ সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সাহায্য সহযোগিতা করে আসছে। আমাদের দলের নেতা মন্টুর উপর হত্যার উদ্দেশ্যে চালানো হামলার ঘটনায় আমরা আইনের আশ্রয় নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চাই। আমরা চাই দোষীদের গ্রেফতার করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
আরএমপির ভুমিকা নিয়ে তিনি বলেন, ঘটনার সীমানা নিয়ে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে আপনারা মামলা নিতে গড়িমসি করলেন। তারপর অনেক দরকষাকষির পর অবশেষে আপনারা মামলা গ্রহণ করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত মামলার আসামিদের গ্রেফতারে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না। উলটো হামলাকারীরা মন্টুর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করলো। আমরা অনেক ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছি। আশা করি আপনারা অনতিবিলম্বে আসামিদের গ্রেফতার করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। নইলে আমরা আপনাদের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।
বিএনপি’র সদস্য সচিব মামুন অর রশীদ বলেন, আমরা বিশ্বাস করেছিলাম যুগ্ম আহবায়ক মন্টুর উপর হত্যার উদ্দেশ্যে চালানো হামলায় প্রশাসন তাদের দ্বায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবে। কিন্তু, দুঃখজনক হলো প্রশাসন তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন না। তাই বাধ্য হয়ে আমাদেরকে এই প্রতিবাদ সমাবেশ করতে হচ্ছে। মন্টুর উপরে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলার সাথে জড়িতদের পুলিশ গ্রেফতার না করে উল্টো হামলাকারীরা মন্টুর সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা করেছে। এইটা সত্যি খুব অদ্ভুত ও পরিতাপের বিষয়।
প্রশাসন কে বলতে চাই মন্টুর উপর হামলার ঘটনায় যাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। তদন্তে যদি আপনাদের কাছে মনে হয় মামলায় যাদের নাম আছে তাদের মধ্যে কেউ কেউ হামলার সাথে জড়িত নয় তাহলে আপনারা উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের সঠে জড়িত বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যারা ১৬ বছর ধরে অন্যায় অত্যাচার করেছে তাদের বিচার চাই। আমরা রাজশাহী মহানগর সহ সারা দেশে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রশাসনের সহযোগিতা চাই। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, রাজশাহী সহ সারা দেশে যে ঘটনা গুলো ঘটছে তা তুলে ধরবেন। কী করলে এ দেশ শান্ত থাকবে, এদেশে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে তা তুলে ধরবেন।
সভায় উপস্থিত বক্তারা বোয়ালিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মামলা নিতে গড়িমসি করা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। সভায় উপস্থিত বক্তারা অভিযোগ করেন ৫ ই আগষ্টের পর যে পুলিশ বাহিনী গঠন করা হয়েছে তারা গণঅভ্যূত্থানের স্পিরিট কে ধারণ করছে না। তারা অভিযোগ করে বলেন আরএমপি প্রশাসনে এখনো স্বৈরাচারের প্রেতাত্মারা প্রভাব বিস্তার করছে ও আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। উপস্থিত নেতৃবৃন্দ রাজশাহীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার জনাব আবু সুফিয়ান এর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। সভায় মন্টুর উপর হত্যার উদ্দেশ্যে হামলার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে ৭ দিনের আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। সমাবেশ শেষে রাজশাহী মহানগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে একটি মিছিল করা হয়।
বিআলো/তুরাগ