বিজ্ঞানে বিদায়ি বছরের কিছু অর্জন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: প্রযুক্তি জগতে যেমন বছরজুড়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছে এআই, তেমনি মূলধারার বিজ্ঞানের নানা আবিষ্কারও আমাদের চমৎকৃত করেছে। একদিকে এবার যেমন দেখা গেছে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ, তেমনি অপ্রত্যাশিতভাবে আবিষ্কৃত হয়েছে জঙ্গলের হারানো এক নগরী। বিলুপ্ত হওয়া সাদা গণ্ডার সংরক্ষণেও দেখা গেছে আশার আলো। চলুন জেনে নেওয়া যাক ২০২৪ সালের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বৈজ্ঞানিক অর্জনের কথা।
কম্পিউটারসহ যাবতীয় ডিজিটাল যন্ত্রপাতিতে মেশিন লার্নিং বলে একটা ব্যাপার আছে। আর যন্ত্রকে নতুন কিছু শেখানোর ক্ষেত্রে প্রাণীর মগজের নিউরাল নেটওয়ার্কের নকশাকে কী করে কাজে লাগানো যায় সেটা আবিষ্কার করে এ বছর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল জিতেছেন আমেরিকান বিজ্ঞানী জন হপফিল্ড। সামনের দিনগুলোয় ‘বুদ্ধিমান’ যন্ত্রপাতি তৈরিতে যা যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ক্রিকেটের বলের মতো ক্যাচ করা হলো রকেট।
গত অক্টোবরে ইলন মাস্কের স্পেসএক্সের স্টারশিপ রকেট ইতিহাস সৃষ্টি করেছে মহাকাশ গবেষণায়। উৎক্ষেপণের পর আবার লঞ্চ প্যাডে ফিরে এসেছে রকেট। নিপুণভাবে সেটাকে আঁকড়ে ধরেছে বিশাল এক যান্ত্রিক বাহু, যাকে তুলনা করা হচ্ছে চপস্টিকের সঙ্গে। মাস্কের এই সাফল্য মহাকাশ ভ্রমণকে করবে আরো সাশ্রয়ী। পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেটের ব্যবহার বাড়লে কমবে মহাকাশদূষণের পরিমাণও।
অক্টোবরে বিজ্ঞানীরা ফলের মাছির মস্তিষ্কের এক লাখ ৩০ হাজার কোষ এবং পাঁচ কোটি নিউরাল সংযোগের পূর্ণ মানচিত্র তৈরি করেছেন। এটি প্রাপ্তবয়স্ক প্রাণীর মস্তিষ্ক নিয়ে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বিস্তারিত গবেষণা। তমাছির মস্তিষ্ক যতটা সুন্দর ততই জটিল।
যুক্তরাষ্ট্রের টুলেন ইউনিভার্সিটির পিএইচডি শিক্ষার্থী লুক আউল্ড-থমাস এক লেজার জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ করে মেক্সিকোর জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা মায়া সভ্যতার একটি প্রাচীন নগরীর সন্ধান পান।
‘ক্যালাকমুল’ নগরীটি ৭৫০ থেকে ৮৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তৈরি হয়েছিল এবং সেখানে ৩০-৫০ হাজার মানুষ ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ নগরীতে পিরামিড, খেলার মাঠ এবং অ্যাম্ফিথিয়েটারও ছিল।
পৃথিবীতে মাত্র দুইটি উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার জীবিত আছে। তবে বিজ্ঞানীরা পরীক্ষাগারে গড়ে ওঠা একটি সাদা গন্ডারের ভ্রূণ সফলভাবে আরেকটি গন্ডারের গর্ভে প্রতিস্থাপন করতে পেরেছিলেন। এটাই হতে পারত প্রথম টেস্টটিউট গন্ডার। এ প্রক্রিয়ায় অসুস্থতার কারণে মা গন্ডারের মৃত্যু হলেও ময়নাতদন্তে দেখা যায়, ভেতরের ভ্রূণটি ঠিকঠাকই বেড়ে উঠছিল। পদ্ধতিটি বিলুপ্তপ্রায় গণ্ডারের পুনরুদ্ধারের নতুন আশা জাগিয়েছে।
এক দশকের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ নিয়ে সারা বিশ্বে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর দুই-তৃতীয়াংশই সফল। এর মধ্যে ছিল চিনুক স্যামনের ডিম ফোটানো এবং আক্রমণাত্মক শৈবালকে ধ্বংস করা।
এই বছর মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় কোটি কোটি মানুষ পূর্ণ সূর্যগ্রহণ উপভোগ করেন। ডালাসসহ বড় শহরগুলোতে মানুষ এই মহাজাগতিক দৃশ্য দেখতে পেয়েছেন, যা ২০১৭ সালের সূর্যগ্রহণের চেয়েও বিস্তৃত ছিল।
বিআলো/শিলি