বিদেশে যেতে হয়রানি-প্রতারণা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে
সম্পাদকীয়: বাংলাদেশ জনশক্তি রপ্তানিতে অনেক এগিয়েছে। বিদেশে বাংলাদেশের জনশক্তি প্রশংসিত হচ্ছে, চাহিদাও রয়েছে। দেশের রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি ও অর্থপ্রবাহ সচল রাখতে জনশক্তির ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে অপবাদ যেন বাংলাদেশের ললাটলিখন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জনশক্তি রপ্তানির সঙ্গে জড়িত কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে অনেক সময় মানুষকে প্রতারিত হতে হয়। টাকা হারিয়ে অনেককে পথে বসতে হয়। বিদেশে যাওয়ার পরও অনেকের প্রতারিত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। উপার্জনের জন্য বিদেশে যেতে অনেককে ভিটামাটি বিক্রি করতে হয়। কিন্তু সর্বস্ব বিক্রি করে বিদেশে যাওয়ার পর রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতারণার কারণে সেখানে অবৈধ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
এমন কিছু প্রতারণার ঘটনা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, একটি রিক্রুটিং এজেন্সি ফিনল্যান্ডে পাঠানোর নামে ধোঁকা দিয়েছে। ভুক্তভোগীরা প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বরাবর আলাদা লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, ফিনল্যান্ডে পাঠানোর নামে ওই রিক্রুটিং এজেন্সি অন্তত ১০০ জনের সঙ্গে একই প্রতারণা করেছে।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগে একজন বলেছেন, ২০২৩ সালের এপ্রিলে ফিনল্যান্ডে যেতে তিনি সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সিকে তিন লাখ টাকা ও পাসপোর্ট দেন। প্রতি মাসে দুই লাখ টাকার বেশি বেতনের চাকরি দেওয়ার কথা বলে এই টাকা নেয় তারা। ফিনল্যান্ডে পাঠাতে এজেন্সি আট মাস সময় চায়। সাক্ষাৎকারের জন্য নয়াদিল্লিতে ফিনল্যান্ড দূতাবাসে তাঁকে পাঠাতে তারা ১০ হাজার টাকার চুক্তি করে। পরে ২৫ হাজার টাকা দাবি করে। এই টাকা দিতে অপারগতার কথা জানান তিনি। এখন তিনি এই রিক্রুটিং এজেন্সির কাছে সব টাকা ফেরত চাইছেন, এজেন্সি টাকা ফেরত দিচ্ছে না। এমনকি তারা যোগাযোগও করছে না।
আরেক অভিযোগকারী জানিয়েছেন, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ফিনল্যান্ডে যেতে ওই এজেন্সিকে তিন লাখ টাকা ও পাসপোর্ট দেন। এজেন্সি তাঁকে ফিনল্যান্ডে পাঠাতে এক বছর সময় নেয়। এর মধ্যে ভারতে যেতে তারা আট হাজার করে দুইবারে ১৬ হাজার টাকা নিয়েছে। ভারত থেকে আসার পর এজেন্সিটি আরো ছয় মাস সময় নেয়, কিন্তু প্রায় দেড় বছর পার হওয়ার পরও তাঁর ফিনল্যান্ডে যাওয়া হয়নি।
কেরানীগঞ্জের দুই ভাই পাঁচ লাখ টাকা করে দিয়েছিলেন, কিন্তু ফিনল্যান্ডে যেতে পারেননি তাঁরা। একই উপজেলার তিন নারীর কাছ থেকেও টাকা নিয়েছে ওই রিক্রুটিং এজেন্সি। ফিনল্যান্ডে পাঠাতে কারো কাছে তিন মাস, কারো কাছে ছয় মাস, আবার কারো কাছে এক বছর সময় নিয়েছেন ওই রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক, কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও কাউকে ফিনল্যান্ডে পাঠায়নি ওই এজেন্সি। ফিনল্যান্ডে যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা টাকা ফেরত চাইছেন, কিন্তু এজেন্সি নানা টালবাহানায় তাঁদের ঘোরাচ্ছে।
ওদিকে বিদেশে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ভুয়া স্মার্ট কার্ড ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। এতে বিদেশে যেতে না পেরে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে কর্মীদের।
দীর্ঘকাল ধরেই বিদেশ গমনেচ্ছু সাধারণ মানুষ প্রতারকদের দ্বারা হয়রানির শিকার হচ্ছে। মিথ্যা আশ্বাস, প্রলোভন, বৈধভাবে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে অবৈধভাবে বিদেশে পাঠানোর ঘটনা ঘটছে।
মিথ্যা বিজ্ঞাপন প্রচারের দ্বারা অসংখ্য মানুষ যে শুধু সর্বস্বান্ত হচ্ছে তা-ই নয়, অনেক ক্ষেত্রেই মানুষকে বিপদে পড়তে হচ্ছে। প্রতারণা বন্ধে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সব প্রতারক রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
বিআলো/শিলি