বেড়েই চলেছে সামাজিক অপরাধ নির্মূলে কার্যকর ব্যবস্থা নিন
সম্পাদকীয়: দেশে সামাজিক অপরাধ বাড়ছে। পুলিশ ও বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ছয় মাসে দেশে আড়াই হাজারের বেশি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এলাকার আধিপত্য বিস্তার, নির্বাচনে জয়-পরাজয়, দলীয় কোন্দল, অর্থের অপব্যবহারসহ সামাজিক নানা ইস্যুতে সংঘাত-সংঘর্ষের এসব ঘটনা ঘটছে।
পুলিশের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে চলতি বছর ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় সংঘর্ষ, সংঘাত, হত্যা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
এ সময়ে নির্বাচনী সহিংসতার ৭৫২টি ঘটনায় নিহত হয়েছে ১৭ জন। আহত হয়েছে দুই হাজার ৫৩৪ জন। গুলিবিদ্ধ হয়েছে ১০০ জনের বেশি। গৃহ ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে ৪৫০টি। গাড়ি ও যানবাহন ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে ১০০টি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের ১২টি জেলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর এবং লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
চলতি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ঘিরে পরিস্থিতি আরো নাজুক হওয়ার আশঙ্কা করছে পুলিশ সদর দপ্তর। এরই মধ্যে পুলিশ সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে দেশের সব পুলিশ সুপারকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের পাশাপাশি কেউ যেন সামাজিক অস্থিরতাকে ব্যবহার করে গুজব ছড়াতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক নজর রাখতে বলা হয়েছে।
এক শ্রেণির মানুষ পুলিশ প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, মানবিক মূল্যবোধ- কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছে না। মানুষের মধ্যে অস্থিরতা বেড়ে গেছে। সামান্য কারণেই খুনের ঘটনা ঘটছে। সমাজ, পরিবার বা প্রতিবেশীর সুসম্পর্ক কমছে। এলাকাভিত্তিক সংস্কৃতির চর্চা ও বন্ধনগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। অনুশাসন বলতে কিছু নেই। আগে সামাজিকভাবে প্রতিরোধের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা ইদানীং দেখা যায় না। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে গণমাধ্যমে বহু আলোচনা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে বলা যায়, মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় চরমে পৌঁছেছে। কিছু মানুষের মধ্যে নৈতিকতা বলতে কিছু নেই। সমাজে নানা কারণে অস্থিরতা যেমন বাড়ছে, তেমনি সামাজিক বন্ধনও দিনে দিনে ক্ষয়ে যাচ্ছে। সমাজ থেকে অপরাধপ্রবণতা দূর করা যাচ্ছে না। অপরাধমুক্ত করা যাচ্ছে না সমাজকে। সামাজিক বন্ধন ও মূল্যবোধের অবক্ষয়ের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে সর্বত্র। একটি অসুস্থ ধারা যেন সমাজে বিস্তৃত হতে শুরু করেছে।
এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সামাজিক সংগঠনগুলোকে সক্রিয় হতে হবে। সমাজ থেকে অপরাধ দূর করা না গেলে অস্থিরতাও কমানো যাবে না। সামাজিক অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন করা না গেলে সুন্দর সমাজ গড়ে তোলা যাবে না। সমাজ বিনির্মাণে সামাজিক
প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো সক্রিয় হতে হবে। এর জন্য রাজনৈতিক সিদ্ধান্তেরও প্রয়োজন রয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোকে আরো সক্রিয় হতে হবে। অপরাধীদের কঠোর হাতে দমন করতে হবে।