বৈষম্যের শিকার গাজীপুর সিটির ৭৬ কাউন্সিলর
গাজীপুর প্রতিনিধি: দলীয়ভাবে নির্বাচন না করেও গাজীপুর সিটির ৭৬ জন নির্বাচিত কাউন্সিলর বৈষম্যের শিকার হয়েছেন বলে মনে করছেন তারা। প্রতিবাদে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন বিভিন্ন সময়। ইতোমধ্যে নির্বাচিত কাউন্সিলররা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ন্যায় বিচারের স্বার্থে আইনের দ্বারস্থ হওয়ার প্রত্যক্ষ হুমকি দিয়েছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কাউন্সিলর।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে হাসিনার পলায়নে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর একযোগে দেশের সবকটি সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরদের অপসারণ করা হয়। গাজীপুর সিটির প্রশাসকের দায়িত্ব পেয়েছিলেন বিভাগীয় কমিশনার সাবিরুল। তাকেও বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। এখন শুধু অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মমিন বেতন- ভাতাদিতে স্বাক্ষর করে সিটির কর্মকর্তা কর্মচারীদের চাকা সচল রাখছেন।
মা-বাবা বিহীনই রয়ে গেল ঢাকার অদূরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই নগরের বাসিন্দারা। অন্যদিকে গাজীপুর সিটি অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। নাগরিক সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে পদে পদে, নগরবাসীকে পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তি। অপসারণ, অব্যাহতি আর ভারপ্রাপ্তের ভারে গাজীপুর সিটির ৫৭ ওয়ার্ডের ৮টি মেট্রোপলিটন থানার ২৬ লাখ মানুষ সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন। উন্নয়ন প্রকল্পসহ সব ধরনের কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। নাগরিক সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন জনসাধারণ। গতকাল বুধবার সিটির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সেবা প্রার্থীদের ভিড়। সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন অনেকে।
৫ আগস্টের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের শুরু থেকে কাউন্সিলররা নিয়মিত অফিস করেছেন। যার প্রমাণ চলমান রাখতে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত সিটির ৮টি জোনের প্রধানেরা (ম্যাজিস্ট্রেট) মনিটরিং করে তাদের হাজিরা সংরক্ষণ রাখতো। জানা যায়, নির্বাচিতদের মধ্যে কেউ কেউ কমপক্ষে ৩-৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বীকে ভোটে হারিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। অনেকে মনে করছে সিটির ৮টি জোনের প্রধান কর্মকর্তাদের। (ম্যাজিস্ট্রেটদের) দ্বারা ২৬ লাখ জনগোষ্ঠীকে সামাল দেওয়া মোটেও সম্ভব নয়।
৭৬ জন কাউন্সিলরের মধ্যে জামাত বিএনপির ১৯ জন ছাড়া অন্য ৫৭ জনের অনেকেরই দলে কোন পদ নাই। বিএনপির যারা পদধারী ছিল তারা নির্বাচনের আগেই সবাই দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। ফলে কাউন্সিলরেরা নিজেদের পুরোপু রি স্থানীয় সরকারের নিরপেক্ষ জনপ্রতিনিধি হিসাবে মনে করছেন। তাদেরকে অপসারণ ঠিক হয়নি বলে উচ্চ আদালতে রিট করবেন বলে অনেকেই একমত পোষণ করছেন বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, গাজীপুর সিটি করপোরেশন ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোনো নির্বাচিত প্রতিনিধি (মেয়র) মেয়াদ পার করতে পারেনি। এ কারণে কাঙিক্ষত উন্নয়ন হয়নি গাজীপুরে। প্রথম মেয়র বিএনপির প্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এ মান্নানকে ষড়যন্ত্র করে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার করে নগরবাসীকে নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত করা হয়। এরপর আওয়ামী লীগের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশ কোণঠাসা করে রাখে।
বিআলো/তুরাগ