মধ্যরাতে ভেকু দিয়েই চলছে গোমতী নদীর মাটি কাটার মহা উৎসব
মো.মাহামুদুল হাসান,বুড়িচং: বুঝাই যাচ্ছে না,কুমিল্লার গোমতী নদীর প্রকৃত মালিক কে? যখন ভ্রাম্যমান আদালত এসে মাটি কাটা শ্রমিকদের আটকে জেল-জরিমানা করে,মাটি বহন করা ট্রাক,ট্রাক্টর বা মাটি কাটার এস্কেভেটর জব্দ করে নিয়ে যায়। তখন মনে হয় জেলা বা উপজেলা প্রশাসন নদীর মালিক। আবার যখন আইন-শৃঙ্খলার দোহাই দিয়ে থানা,হাইওয়ে বা ফাড়ি পুলিশ মাটিসহ ট্রাক জব্দ করে,তখন তাদের ক্ষমতা দেখে আশস্থ হয় সাধারন মানুষ। কিন্তু যখন নদী ভাঙ্গার উপক্রম হয় তখন কেউ কাউকে আশস্থ করতে পারে না। রাত-দিন নদী তীওে পরিবার পরিজন নিয়ে বিনিদ্র রজনী কাটানোর পাশাপাশি উপোষ থাকতে হয়। এসময় জেলা-উপজেলা বা পুলিশ প্রশাসনের কারো উপর নির্ভও করতে পারে না। যার সর্বশেষ উদাহরণ ২০২৪ সালের ১৯ আগষ্ট থেকে জেলার প্রধান নদী গোমতীর কুমিল্লা আদর্শ সদর ও বুড়িচং উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকার লাখ লাখ মানুষের। ২২ আগষ্ট রাতে এক সময় নদীটির বাঁধ ভেঙ্গে গেলে বুড়িচং,ব্রাহ্মনপাড়ার ১৩টি ইউনিয়ন পানিতে তলিয়ে গেলে লাখ লাখ মানুষ পানি বন্দী হয়। স্বপ্ন দেখায় প্রশাসন,পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বাঁধ সংস্কারের। তবে বাঁধ ভাঙ্গার স্থানটি ব্যতীত ঝুঁকিপুর্ণ স্থানগুলোতে স্থায়ী কোন মেরামতের দেখা নেই। আর এই প্রতিরক্ষা বাঁধ ঝুঁকিপুর্ণ করার প্রধান যে কারণ, মাটি খেকোদের মাটি পরিবহনে নিয়োজিত ভারী ডাম্পট্রাক নিয়ন্ত্রণ সেটা কোন ভাবেই করা হচ্ছে না।
ফলে একদিকে গোমতীর চরের উর্বর ফসলী জমিতে ফসল ফলাতে কৃষকদের যেমন বঞ্চিত করা হচ্ছে,অন্যদিকে রাত-দিন বাঁধের উপর ভারি যানবাহন চালিয়ে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে লাখ লাখ মানুষদের। বিগত আগষ্টের বাঁধ ভাঙ্গার পর তীরবর্তী মানুষ মাটি খেকোদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করলেও কোন ভাবেই থামছে না তাদের নিরব কান্না।আর তাইতো আবারো প্রতিদিন গোমতীর দু’পাড়ের বিভিন্নস্থান থেকে অবাধে কাটা হচ্ছে মাটি। যা বহন করতে যানবাহন চরে উঠানামায় অপরিকপিত র্যাম করায় আবারো হুমকীর মুখে প্রতিরক্ষা বাঁধ।
২০২৪ সালের আগষ্টের মাঝামাঝি উজানের ানি ও অতিরিক্তবৃষ্টিতে গোমতীর দু’তীরের কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা,মহানগরীর কিছু অংশ,ময়নামতি সেনানিবাস, বুড়িচং,ব্রাহ্মনপাড়ার অনেক স্থান ঝুঁকিপুর্ণ হয়ে যায়। একসময় ২২ আগষ্ট রাতে বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের বুড়বুড়িয়া গ্রামের প্রতিরক্ষা বাঁধটি ধ্বসে যায়। এরপর বুড়িচং এর ৫ টি ইউনিয়নছাড়াও ব্রাহ্মনপাড়ার ৮ টি ইউনিয়ন পানিতে তলিয়ে যায়। পানি বন্দী হয় লাখ লাখ মানুষ।
অবর্নণীয় দুর্ভোগসহ বিপুল পরিমান সম্পদেও ক্ষয়ক্ষতিহয়। এরপর মানুষ মনে করেছিল এবাওে হয়তো গোমতীতে মাটি খেকোদের তৎপরতা কমবে। প্রশাসন হয়তো এব্যাপাওে কঠোর পদক্ষেপ নিবে। কিন্তু গত ৮/১০ দিন ধরে বুড়িচংয়ের কামাড়খাড়া, গুনপুর, দেবপুর, রামপুর, বাবু বাজার সদর উপজেলার আমতলী, দুর্গাপুর, আড়াইওরা, পালপাড়া,বানাসুয়া,ভাটপাড়া,কাপ্তানবাজার, চান্দপুর প্রভৃতি স্থানে নদীর দু’পাড়ে অবাধে মাটি কাটা হচ্ছে। এতে আবারো হুমকীর মুখে যেমন গোমতীর প্রতিরক্ষা বাঁধ,তেমনি ডাম্পট্রাক থেকে মাটি পড়ে সড়ক বিবর্ণসহ ঝুঁকিপুর্ণ হয়ে উঠছে। বাধ ভাঙ্গায় লাখ লাখ মানুষের দুর্ভোগ,ক্ষয়ক্ষতি, রাত-দিন পরিশ্রম সব কিছু যেন ভুলে গেছে সাথে প্রশাসনের লোকেরা। এছাড়া পালপাড়া,বানাসুয়া,ভাটপাড়া,কাপ্তানবাজার এলাকার মাটি খেকোদের নাম ভয়ে স্থানীয়রা বলেনি। গোমতীর চর এলাকা থেকে মাটি কাটা বৈধ কিনা? বিষয়টি জানতে চাইলে,কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোঃ আমিরুল কায়ছার বলেন, জনগণকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। যাদেও বিরুদ্ধে মাটি কাটার অভিযোগ আছে,তাদেও বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে। এসিল্যান্ডদের বলে দেওয়া হয়েছে, যেখানে মাটি কাটা হয়,সেখানে সেনাবাহিনী ও পুলিশ দের সহযোগীতা নিয়ে অভিযান পরিচালনা করতে।