মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ানোর সহজ উপায়
বিআলো ডেস্ক: আমাদের অনেকেই এমন পরিস্থিতিতে পড়েছেন, যখন কোনো মানুষের নাম বা জায়গার নাম মনে করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। অনেকেই বলেন, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতিশক্তি এবং যুক্তি প্রয়োগের ক্ষমতা কমে আসে।
তবে আশার কথা হলো, আমাদের মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা আবার ফিরিয়ে আনা সম্ভব। কিছু সহজ অভ্যাস ও মানসিক চর্চার মাধ্যমে আমরা আমাদের মস্তিষ্ককে আরো শক্তিশালী করতে পারি। ব্যায়াম শুধু শরীরের জন্যই নয়, মস্তিষ্কের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শারীরিক কসরত করার ফলে মস্তিষ্কে নতুন কোষ গঠন হয় এবং নিউরনের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ে। এর ফলে স্মৃতিশক্তি এবং মনোযোগের উন্নতি ঘটে। বিশেষ করে বাইরে খোলা জায়গায় ব্যায়াম করলে ভিটামিন ডি শোষণ বাড়ে, যা মস্তিষ্কের জন্য উপকারী। নতুন পরিবেশে ব্যায়াম করার ফলে মস্তিষ্কে নতুন সংযোগ তৈরি হয়। যেমন- যদি আপনি বাগান করতে পছন্দ করেন, তাহলে গ্রুপের সঙ্গে বাগান করার মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগও বাড়বে, যা মস্তিষ্ককে আরো সক্রিয় রাখবে।
গবেষণায় দেখা গেছে, চলার পথে নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করলে তা মস্তিষ্কে বেশি সময় ধরে থাকে। হাঁটতে হাঁটতে কোনো বক্তৃতা বা প্রেজেন্টেশনের রিহার্সাল করলে তা সহজে মনে থাকে। এ ছাড়া নাচতে নাচতে কোনো তথ্য মুখস্থ করলেও মস্তিষ্ক তা ভালোভাবে ধারণ করতে পারে। আপনার মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা অনেকাংশেই নির্ভর করে খাবারের ওপর।
আমাদের মস্তিষ্কের কোষগুলো চর্বি দিয়ে তৈরি, তাই স্বাস্থ্যকর চর্বি গ্রহণ জরুরি। বাদাম, বীজ, অ্যাভোকাডো, মাছ এবং হলুদের মতো খাবার মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। খাবার খাওয়ার সময় সামাজিকীকরণের মাধ্যমে মস্তিষ্ক আরো উপকৃত হয়। তাই একা একা না খেয়ে পরিবারের বা বন্ধুদের সঙ্গে খাওয়ার চেষ্টা করুন। দীর্ঘদিন ধরে চাপের মধ্যে থাকলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমে যেতে পারে। মাঝেমধ্যে বিরতি নিয়ে মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দেওয়া খুব জরুরি। যদি আপনার মস্তিষ্ক শান্ত করতে সমস্যা হয়, তাহলে ধ্যানের অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। ধ্যান মস্তিষ্কের স্ট্রেস হরমোন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নতুন কিছু শেখা খুবই কার্যকর। নতুন কোনো শখ তৈরি করা বা নতুন ভাষা শেখা মস্তিষ্কের স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়। অনলাইনে বন্ধুদের সঙ্গে গেম খেলার মাধ্যমে সামাজিক মিথস্ক্রিয়া বাড়ানোও মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা উন্নত করতে সহায়ক। গান মস্তিষ্ককে উদ্দীপিত করে। যখন আপনি গান শোনেন বা গাইতে থাকেন, তখন মস্তিষ্কের সব অংশ সক্রিয় হয়ে ওঠে। গান মানুষের স্মৃতিশক্তি বাড়ায় এবং মানসিক শক্তি প্রদান করে।
দিনে নতুন কিছু শিখলে রাতে ঘুমানোর সময় মস্তিষ্ক সেই তথ্য সংরক্ষণ করে। তাই ভালো স্মৃতির জন্য পর্যাপ্ত ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোনো পরীক্ষা বা কাজের প্রস্তুতির জন্য ঘুমানোর আগে বিষয়গুলো ঝালিয়ে নিলে তা বেশি মনে থাকে।
দিনের শুরুতে কিভাবে ঘুম থেকে উঠছেন, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। ভোরবেলা সূর্যের আলো মস্তিষ্ককে ধীরে ধীরে জাগিয়ে তোলে এবং কর্টিসল হরমোনের নিঃসরণ বাড়ায়, যা আমাদের সারা দিন চাঙ্গা থাকতে সাহায্য করে। মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ানো যায় কিছু সাধারণ অভ্যাস এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার মাধ্যমে। নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাবার, পর্যাপ্ত ঘুম এবং নতুন চ্যালেঞ্জ নেওয়া মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখার সহজ কিছু উপায়।
বিআলো/শিলি