মহাসড়কগুলোয় বেড়েছে যাত্রীদের দুর্ভোগ
নিউজ ডেস্ক: ভাঙাচোরা আর খানাখন্দে দেশের মহাসড়কগুলোয় বেড়েছে যাত্রীদের দুর্ভোগ। অথচ বিপুল অর্থ ব্যয় করে দেশের মহাসড়কগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। আর মহাসড়কে ভাঙাচোরা ও খানাখন্দে ভরা। বাংলাদেশে সড়ক-মহাসড়কের যত শ্রেণীবিন্যাস রয়েছে, তার মধ্যে মহাসড়ক সবার ওপরে আছে। সংস্কার, রক্ষণাবেক্ষণ আর উন্নয়নে এ শ্রেণীর মহাসড়ক সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায়। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
বর্তমানে দেশজুড়ে বিস্তৃত মহাসড়কের পরিমাণ ৪ হাজার ২৯৪ কিলোমিটার। তার মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ফরিদপুর-বরিশাল-কুয়াকাটা, ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-সিলেটসহ বিভিন্ন মহাসড়কে সৃষ্ট খানাখন্দে যাতায়াতে মানুষ দুর্ভোগে পড়ছে। বিঘ্নিত হচ্ছে পণ্য পরিবহন। তাছাড়া মহাসড়কগুলোকে আরো বেহাল করে তুলেছে ধীরগতির সংস্কার কাজ। সওজ সংশ্লিষ্টদের মতে, বর্ষাকালে সড়কের স্থায়ী মেরামতকাজ করা হয় না। সেজন্য এখন মহাসড়কগুলোয় ভাঙাচোরার পরিমাণ বেশি। তাছাড়া চলতি বছরের প্রলম্বিত বর্ষার কারণেও মহাসড়কগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অসংখ্য খানাখন্দে ভরা দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন হিসেবে পরিচিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। মহাসড়কে মেঘনা সেতুর দুই প্রান্তেই সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত। বিশেষ করে মেঘনা টোলপ্লাজার সামনে দুটি লেনের প্রবেশপথে পিচ উঠে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। ফলে টোল লাইনে প্রবেশের সময় যানবাহন যানজটে পড়ছে। তার বাইরে কুমিল্লার পদুয়ার বাজার, বিশ্বরোড, নন্দনপুর, মোস্তফাপুর, চাষাপাড়া, ধনাইতরী, সুয়াগাজীসহ মিয়াবাজার, চৌদ্দগ্রাম, ফেনী, মিরসরাই, সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন অংশে মহাসড়কে ছোট-বড় গত রয়েছে। আর এক বছরের বেশি সময় ধরে নারায়ণগঞ্জ অংশে ভাঙাচোরা অবস্থায় রয়েছে।
ফলে গাড়ির চাপ একটু বাড়লেই নারায়ণগঞ্জ থেকে মেঘনা সেতু পর্যন্ত অংশে তীব্র যানজট দেখা দেয়। পাশাপাশি রাস্তা খারাপ হওয়ায় যাতায়াতে বেশি সময় লাগছে। যদিও বিগত ২০১৬ সালের জুলাইয়ে চার লেনে উন্নীতের পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক উদ্বোধন করা হয়। মহাসড়কটি নির্মাণে খরচ হয়েছে ৩ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা। তার বাইরে ২০১৯-২৫ সাল পর্যন্ত মহাসড়কটি রক্ষণাবেক্ষণে সওজ অধিদপ্তর আরো প্রায় ৮০০ কোটি টাকা খরচ করেছে।
আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক বিগত ২০২৩ সালে উদ্বোধন করা হয়। ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়কটি নির্মাণে ৬ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু চালুর মাত্র দুই বছরের মাথায় ওই সড়কের অন্তত ২৫ কিলোমিটার এলাকায় দেখা দিয়েছে বড় বড় খানাখন্দ। তার মধ্যে অন্তত পাঁচ কিলোমিটার সড়ক ডেবে গেছে। ভাঙাচোরা ও ডেবে যাওয়ার কারণে ওই মহাসড়ক ব্যবহারকারী যানবাহন স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না। খানাখন্দের কারণে সড়ক দুর্ঘটনাও বাড়ছে। তাছাড়া ফরিদপুর-বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কেও ভাঙাচোরা আর খানাখন্দ রয়েছে।
মহাসড়কটির ফরিদপুর সদরের রাজবাড়ী রাস্তার মোড় থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার অংশ বেহাল অবস্থায় রয়েছে। সড়কের পিচ উঠে গিয়ে গর্ত আর খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। জায়গায় জায়গায় রয়েছে ভাঙাচোরা। রয়েছে অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত। মহাসড়কটির এমন বেহাল দশায় বিঘ্নিত হচ্ছে যান চলাচল এবং প্রাণঘাতী দুর্ঘটনাও বাড়ছে। আর বর্তমানে দেশের মহাসড়কগুলোর মধ্যে ঢাকা-সিলেট ও টাঙ্গাইল-রংপুরে উন্নয়নকাজ চলছে। তার মধ্যে ধীরগতির উন্নয়ন কাজের কারণে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানজটের ভোগান্তিতে পড়ছে মানুষ। তাছাড়া যানবাহনের চাপ বাড়লে উত্তরাঞ্চলের টাঙ্গাইল-রংপুর মহাসড়কেও যানজট দেখা দিচ্ছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কেও রয়েছে অসংখ্য খানাখন্দ।
এদিকে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নেটওয়ার্কভুক্ত জাতীয়, আঞ্চলিক ও জেলা সড়ক মিলিয়ে মোট সড়কের পরিমাণ ২২ হাজার ৭১৯ কিলোমিটার। তার মধ্যে নেটওয়ার্কভুক্ত ১ হাজার ৪৭৪ কিলোমিটার মহাসড়ক খারাপ অবস্থায় রয়েছে। রাজশাহী সড়ক বিভাগে ২২৯ কিলোমিটার সড়ক ভাঙাচোরা। একইভাবে রংপুর সড়ক বিভাগে ১৯৪ কিলোমিটার, চট্টগ্রামে ১৮৬, কুমিলায় ১৬৭, ময়মনসিংহে ১৫০, সিলেটে ১৪৮, ঢাকায় ১৪৩, বরিশালে ১১৯, গোপালগঞ্জে ৭০ ও খুলনা সড়ক বিভাগে ৬৮ কিলোমিটার সড়ক খারাপ অবস্থায় রয়েছে। দেশে চার হাজার কিলোমিটারের বেশি মহাসড়ক নেটওয়ার্ক সবসময় ভালো অবস্থায় রাখা সওজর পক্ষে অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অন্যদিকে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের প্রতিটা মহাসড়ক নির্মাণ করা হয়েছে আশপাশের দেশগুলোর চেয়ে চার-পাঁচ গুণ অর্থ ব্যয় করে। কিন্তু সড়কগুলো নির্মাণের সময় কাজের গুণগত মান কর্তৃপক্ষ নজরদারি করতে পেরেছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার আর নিম্নমানের নির্মাণ কাজে ওই সড়কগুলো নির্ধারিত লাইফলাইনের অনেক আগেই নষ্ট হতে দেখা যাচ্ছে। নির্মাণকারী সংস্থা হিসেবে নির্মাণ, উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজ তদারক করা সওজ অধিদপ্তরের প্রধান দায়িত্ব। কিন্তু সংস্থাটি তা পালন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। যে সড়ক ২০ বছরের জন্য নকশা করে নির্মাণ করা হলো, ওই সড়ক যদি এক বছরের মাথায় নষ্ট হয় তাহলে অবশ্যই এ কাজের সঙ্গে যারা যুক্ত, তাদের সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনা প্রয়োজন।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে সওজ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসান জানান, কয়েকটি মহাসড়কে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে। নতুন করে আরো কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে। আশা করা যায় আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ কাজ আরো গতি পাবে। চলতি বছর বর্ষার কারণে সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে। এ বছর এপ্রিলে বৃষ্টি শুরু হয়ে এখন পর্যন- অব্যাহত রয়েছে। বৃষ্টির সময় সড়কে স্থায়ী কাজ করা হয় না। সেজন্য কিছু জায়গায় সড়ক খারাপ হয়েছে। তবে সড়ক নেটওয়ার্ক ঠিক রাখতে দেশজুড়ে সওজ প্রকৌশলীরা সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছেন।
বিআলো/ইমরান



