• যোগাযোগ
  • অভিযোগ
  • ই-পেপার
    • ঢাকা, বাংলাদেশ
    • যোগাযোগ
    • অভিযোগ
    • ই-পেপার

    মাওলানা সুফি সরুদ্দীন আহমদ শহীদ (রহ.)’র জীবন পরিক্রমা 

     dailybangla 
    10th Nov 2024 10:13 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

    ভারতের ফুরফুরার দরবার শরীফের স্বনামধন্য খলিফা শাহসুফি সদরুদ্দীন আহমদ (র.) বাংলাদেশের একজন সুপ্রসিদ্ধ পীর ও গ্রন্থ প্রণেতা। জন্ম- ১৮৬৪ সাল, জন্মস্থান- খুলনা বিভাগের মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার গঙ্গারাম- পুর গ্রামে। সমাধিস্থল চট্টগ্রামের ফেনী জেলার দাগনভূঞা উপজেলার গজারিয়া গ্রামে। পিতা-হজরত মুহাম্মদ মিনহাজ উদ্দীন (র.) ছিলেন তৎকালীন সময়ের একজন ভূমি সেটেলমেন্ট অফিসার। পীর সদরুদ্দীন (র.) ছোটবেলা থেকে উন্নত চরিত্রের অধিকারী ছিলেন এবং অত্যন্ত মেধাবী ও দ্বীনদানও বটে। ১৮ বছর বয়সে এন্ট্রাস (এস.এস.সি) পাশ করে ২০ বছর বয়সে পুলিশের চাকুরী নেন। ৩ বছর সুনামের সাথে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করার কারণে পদোন্নতি পেয়ে অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হন। তিনি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সুন্নতে নববীর বাস্তব প্রতিফলন ঘটাতেন। নবী করিম (দ.)’র সুন্নত সম্পর্কে তিনি একটি অসাধারণ উক্তি করেছিলেন, “রাসূলে করিম (দ.)’র সুন্নত পন্থা অনুসারে চলা ব্যতীত কেউ মঞ্জিলে মকছুদ পর্যন্ত পৌছতে পারে না”। সুন্নতি পোশাক-পরিচ্ছেদ পরিধান করতেন- মাথায় টুপি রাখা, সাদা জামা, পায়জামা, ঢিলেঢালা পোশাক। ভক্তবৃন্দদের উদ্দেশ্য করে তিনি প্রায় সময় বলতেন, “তোমরা নামাজ পড়িবে, রোজা রাখিবে, আল্লাহ তা’আলা অর্থ (অর্থ-ধনসম্পদ) সামর্থ্য দিলে হজ করিবে, যাকাত দিবে পশু কুরবানি দিবে। শিরক ও বিদয়াত কখনো করিবে না। দাড়ি লম্বা রাখিবে এবং গোঁফ কাটিবে”। পুলিশের চাকুরী অবস্থায় জনৈক এক আল্লাহর অলির দোয়ার বদৌলতে তার জীবনের মোড় ঘুরে যায়। জনৈক আল্লাহর অলি বলেছিলেন, “তুমি আমার কাপড় যেরূপ পরিষ্কার করেছ, আল্লাহ পাক তোমার দিল সেরূপ পরিষ্কার করে দিক”। রাতে স্বপ্নে দেখলেন, “আসমান হতে একখানা অতি মসৃণ ও ফিনফিনে কাপড় তার মুখে এসে লাগতেছে, এ কাপড় খানির মাধ্যমে তার শরীরের অভ্যন্তরে বাতেনী ইলমে পরিপূর্ণ হয়ে যায়”। এ স্বপ্নের পর থেকে সদরুদ্দীন (র.)’র জীবনের গতিপথ পরিবর্তন হয়ে ইসলামকে নতুনভাবে জানতে শুরু করে। এক পর্যায়ে পুলিশের চাকুরী ছেড়ে আলীয়া মাদ্রাসা ভর্তি হয়ে ইলমে দ্বীন চর্চায় মনোনিবেশ করলে-ও শিক্ষকগণ উপলব্ধি করলেন তার মধ্যে রূহানী সংযোগ স্থাপনের ব্যাকুলতা। এজন্য শিক্ষকগণ তাকে ফুরফুরার পীর হজরত মাওলানা আবুবকর সিদ্দিক (র.)’র কাছে প্রেরণ করেন। সরুদ্দীন (র.)- হজরত আবুবকর (র.)’র মাঝে ঐশ্বরিক প্রেরণা খোঁজে পান পান এবং পীর আবুবকর (র.)’র জীবন দর্শন, রাজনীতি, আত্মশুদ্ধি, জজবা, ধর্মচিন্তা, নবীপ্রেম, রূহানিয়াত ও কামালিয়াতে অনুপ্রাণিত হয়ে বায়’আত গ্রহণ করেন। তৎপর সুদীর্ঘ কাল কঠোর সাধনাময় জীবন অতিবাহিত করে পীর আবুবকর (র.) কর্তৃক চার তরিকার খেলাফত লাভ করে পীরের আসনে সমাসীন হন। আল্লাহর এ অসীম বেলায়তি শক্তি হাসিলের পর থেকে সরুদ্দীন (র.) পুরোদমে তফসির, হাদিস, ফেকাহ ও আবুবকর (র.)’র সোহবতে, শরিয়ত ও তরিক্বতের জ্ঞানার্জন শেষ করে বাংলা ও ভারতের বিভিন্ন ধর্মপ্রচারে ব্রতি হয়। এভাবে তিনি হয়ে ধর্মীয় পথপ্রদর্শক ও ইসলামের নিবেদিত খাদেম। (র.)’র মাধ্যমে আল্লাহ পাক যে, ইসলামের খেদমত এই সূক্ষ্ম বিষয়টি অনেক পূর্বেই উপলব্ধি করছিলেন আবুবকর (র.), তিনি সরুদ্দীন (র.) কে উদ্দেশ্য একদা বলেছিলেন, “আল্লাহ তা’আলা তোমাকে সৃষ্টি মানুষের হেদায়তের জন্য”। সরুদ্দীন (র.) বহুবার পাক (দ.)’র দিদার লাভ করলে-ও স্বশরীরে দু’বার মোবাররমা এবং মদিনাতুল মুনাওয়ারা জিয়ারতের লাভ করেন। সরুদ্দীন (র.)’র কামালিয়াতের কথা ছড়িয়ে পড়লে দেশের নানা প্রান্ত থেকে অগণিত সান্নিধ্যে আসতে শুরু করে। তিনি বাংলা ও ভারতের জায়গায় ধর্মপ্রচারের কাজে শুভ আগমন তন্মধ্যে-চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, খুলনা, দিনাজপুর, নোয়াখালী, যশোর, পাবনা, বগুড়া, নদীয়া, অন্যতম।

    সদরুদ্দীন (র.) আল্লাহর ইলহাম ব্যতীত কর্ম সম্পন্ন করতেন না এবং কোন জায়গা-ও সফর না। আল্লাহর নির্দেশে তিনি বার্মায় বহুবার আগমন করেছিলেন। শত শত মানুষ তার ক্রিয়াকলাপে মুগ্ধ হয়ে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত বার্মার রেঙ্গুন ছিল তার ধর্মপ্রচারের কেন্দ্রবিন্দু। তিনি বার্মার রেঙ্গুনে সফরে ছিলেন, সেসময়ে রেজুন ত্যাগ করতে নির্দেশ দিলে তিনি তৎক্ষণাৎ করে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন । রেঙ্গুন থেকে ফিরে কিছু দিন পর রেঙ্গুনে-দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের অনল ছড়িয়ে ১৯৪৪ সালে বার্মা অভিযানে লড়াইটি দ্বিতীয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ঘটনাস্থলের মধ্যে সবচেয়ে এটি বার্মা ও ভারত এবং বার্মা ও চীনের সীমান্তে হয়েছিল এবং ব্রিটিশ কমনওয়েলথ, চীনা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীকে সাম্রাজ্যবাদী জাপান ভারতীয় জাতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জড়িত মহাত্মা গান্ধীর স্বদেশী আন্দোলনে হিন্দুদের মুসলমানরা-ও ‘বন্দে মাতরম’ ধ্বনি তুললে সুফি (র.) এটাকে কুফরী বলে ফতোয়া দেন। ১৩৩০ সন্দ্বীপের বিখ্যাত আলেম মাওলানা ওজীহুল্লাহ সাথে ‘বন্দে মাতরম’ সম্পর্কে (জায়েয কি নাজায়েয এক বিরাট মোনাযারা হয়। ‘বন্দে মাতরম’ কুফরী বলে ফাতোয়া দিয়েছিলেন উক্ত মাওলানা ওজীহুল্লাহ সাহেব পরাজিত হন। আলিয়া মাদ্রাসার বার্ষিক সভায় ফখরে বাঙ্গালা আবদুল হামিদ সাহেব ওয়াজ করতে উঠলে উল্লেখ করে বললেন, “রাম রহীম নজুদা করো ভায়ী চাচ্চা রাখ না জী” অর্থঃ- হে ভাই ‘রাম’ (হিন্দুরা যাকে স্রষ্টা মানে)’ রহীম’ ই মুসলমানেরা যাকে এ দুই কে পৃথক মনে কর না, নাম ভিন্ন হলে ও তাসাউফের কিতাব অধ্যয়নে মনোনিবেশ করে এবং পীর এক। ভাই অন্তরকে পরিষ্কার রাখা দরকার”। এ উক্তিতে পূর্ণ জনপদে উঠেন-যামানার সদরুদ্দীন নিবেন পীর করে করেছে করেছে নবীয়ে মক্কাতুল সৌভাগ্য সর্বদিকে মানুষ তার নানান করেছিলেন। রংপুর, বরিশাল কোনো করতেন ধর্মপ্রচারে শুভ আধ্যাত্মিক হয়েছেন। ১৯৪৪ সালে আল্লাহ তাকে রেজুন ত্যাগ আসার পড়ে। বিশ্বযুদ্ধের তীব্র ছিল। সংঘটিত মার্কিন এবং ছিল। সঙ্গে সদরুদ্দীন বাংলা সনে সাহেবের ) তার বলাকে তিনি মোনাযারায় একদিন ফেনী মাওলানা ইখলাসের কথা দিলকু এ নামে স্রষ্টা মানে মূলত স্রষ্টা তিনি আপত্তি করেন এবং মাওলানা সাহেব তার আপত্তি মেনে নেন। আরো বললেন, তিনি (শাহ সুফী সদরুদ্দীন সাহেব) হচ্ছেন ‘শমশের বেনেয়াম’, অর্থাৎ খোলা তরবারি, যে দিকে তরবারি মারেন সে দিকেই কেটে ফেলেন।

    পীরকে সেজদা করা, কবর সেজদা করা এবং গান বাজনা জায়েয কি নাজায়েয এ সম্পর্কে ১৩২৭ বাংলা সনে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থানার মির্জাখীল দরবারের খলিফা বাঁশখালী থানা নিবাসী শাহ বদিউল আলম ওরফে জোল করুর জাহাগীর প্রকাশ শাহ্ সাহেবের সাথে সরুদ্দীন (র.)’র এক বিরাট মোনাযারা (বিতর্ক) হয়। তিনি এসব কাজ নাজায়েয এবং কুফরী বলে ফাতোয়া দিয়েছিলেন। টনা শাহ ফকীরের মাযারের উপর পাকা কোব্বা ছিল, তিনি এ কোকা নাজায়েয বলে ভেঙ্গে দিয়েছেন। কোব্বার খাদেম মোকদ্দমা করে বিচারে পরাজিত হয়। অধ্যাপক আবদুল খালেক এম, এ হতুরবী (র.) জীবনের মধ্যসীমা পর্যন্ত মারিফত জগতের রুহানি সংযোগ বিহীন ছিলেন। পীর সদর উদ্দীন আহমদ (র.)’র সংস্পর্শে তিনি অধ্যাত্ম জগতের নতুন এক দিগন্ত খোঁজে পান। বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহের মাধ্যমে অধ্যাপক আবদুল খালেক (র.) সদরুদ্দীন (র.)’র হাতে বায়’আত গ্রহণ করেন। এক শুভক্ষণে পীর সদর উদ্দীন (র.) তাকে চার তরিক্বার খেলাফত বখশিশ করেন। পরবর্তীতে- সরুদ্দীন (র.) নিজেই প্রফেসর আবদুল খালেক (র.) কে পীর আবু বকর সিদ্দিকি (র.)’র হাতে সোপর্দ করেন। শাহ সদ্দীন (র.)’র অসংখ্য মাদরাসা ও খানকা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। গ্রন্থ রচনার মাধ্যমে তিনি বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদান রাখেন। সদরুদ্দীন (র.) শরিয়ত ও তরিকৃত সম্পর্কে অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করেছেন। তন্মধ্যে- ১. ইলমে তাসাউফ (আল্লাহ্ পাইবার তত্ত্ব) (নকশবন্দিয়া- মোজাদাদিয়া তরিকা), ২. ইলমে তাসাউফ (আল্লাহ্ পাইবার তত্ত্ব, কাদেরিয়া তরিকা), ৩. ইলমে তাসাউফ (আল্লাহ পাইবার তত্ত্ব, চিন্তিয়া তরিকা), ৪. বিবি ও শওহরের কর্তব্য (প্রথম ভাগ), ৫. বিবি ও শওহরের কর্তব্য (দ্বিতীয় ভাগ), ৬. সন্দীপে টনা শাহের মাজার ও মোকদ্দামার বৃত্তান্ত, ৭. মোছলমানদিগের জন্য বন্দে মাতারাম বলা হারাম ও কুফর, ৮. আমার প্রাণের রছুল নবি মোহাম্মদ ছাল্লাল্লাহো আলায়হে ওয়া যায়াম, ৯. আল্লাহ্ তা’আলার তারিফ (প্রথম ভাগ), ১০. আল্লাহ তা’আলার তারিফ (দ্বিতীয় ভাগ), ১১. গুলি বিবির কাহিনী, ১২. ফেনী মোনাজারা (উর্দু), ১৩. ফেনী মোনাজারা (বাংলা ব্যাখ্যা), ১৪. তার্কিহাতে ছানিয়া, ১৫. আকায়েলোল এছলাম ১৬. বুজুর্গ-নামা, ১৭. ফজিলতে কোরবাণী, ১৮. শেরেক দফের ফতোয়া। ফেনী শহরে জাপান কর্তৃক বোমা বর্ষিত হওয়ার সময় বোমার ভিতরকার একটি অংশ তার হাঁটুতে এসে লাগে, তাতে সামান্য পরিমাণ জখম হয়। এই জখমের বিষ সর্বশরীরে ছড়িয়ে পড়লে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ১৯৪৪ সালের ৯ই এপ্রিল, জুমাবার, রাত ৮টার সময় যন্ত্রণাময় আঘাত নিয়ে পরকালে পাড়ি জমান।

    লেখক: কায়ছার উদ্দীন আল-মালেকী (কবি, সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক)

    বিআলো/তুরাগ

    এই বিভাগের আরও খবর
     
    Jugantor Logo
    ফজর ৫:০৫
    জোহর ১১:৪৬
    আসর ৪:০৮
    মাগরিব ৫:১১
    ইশা ৬:২৬
    সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১

    আর্কাইভ

    December 2024
    M T W T F S S
     1
    2345678
    9101112131415
    16171819202122
    23242526272829
    3031