মাছচাষে খামারিদের প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে: মৎস্য মন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০৪১ সালে মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৮৫ লাখ মেট্রিক টন অর্জন করতে হলে খামার যান্ত্রিকীকরণের পাশাপাশি অত্যাধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি মৎস্যচাষ ও ব্যবস্থাপনার প্রতিটি পর্যায়ে ব্যবহার করে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আবদুর রহমান। গতকাল মঙ্গলবার সকালে মৎস্য অধিদপ্তরের সভাকক্ষে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে ‘ভরবো মাছে মোদের দেশ, গড়বো স্মার্ট বাংলাদেশ’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিবছরের মতো জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০২৪ শুরু।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে উন্নীতকরণের লক্ষ্য বাস্তবায়নে সরকার মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জেলেদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, মৎস্য অভয়াশ্রম ও সংরক্ষিত এলাকা স্থাপন, ইলিশ সংরক্ষণ, সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনা বিকাশে সামুদ্রিক মাছের মজুদ নিরূপণ ও স্থায়িত্বশীল আহরণ, মৎস্য ও মৎস্য পণ্যের ভ্যালুচেইন উন্নয়ন, রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণসহ নানাবিধ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে মোট মাছ উৎপাদন হয়েছে ৪৯ দশমিক ১৫ লাখ মেট্রিক টন যা ২০১০-১১ অর্থবছরের মোট উৎপাদনের (৩০ দশমিক ৬২ লাখ মেট্রিক টন) চেয়ে প্রায় ৬০ শতাংশ বেশি। মৎস্য উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়ায় মাথাপিছু দৈনিক মাছ গ্রহণ ৬০ গ্রাম চাহিদার বিপরীতে বৃদ্ধি পেয়ে ৬৭ দশমিক ৮০ গ্রামে উন্নীত হয়েছে। দেশের মোট জিডিপির ২ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং কৃষিজ জিডিপির ২২ দশমিক ২৬ শতাংশ মৎস্য উৎপাদনখাতের অবদান। দেশের মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ১২ শতাংশের অধিক মানুষ মৎস্য খাতের বিভিন্ন কার্যক্রমে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত থেকে জীবিকা নির্বাহ করে।
মন্ত্রী বলেন, মৎস্য উৎপাদনে বাংলাদেশের সাফল্য আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্বীকৃতি পেয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ‘দ্য স্টেট অব ওয়ার্ল্ড ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকুয়াকালচার-২০২৪’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বে অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মৎস্য আহরণে বাংলাদেশ ২য়, বদ্ধ জলাশয়ে চাষকৃত মাছ উৎপাদনে ৫ম এবং ইলিশ উৎপাদনে ১ম ও তেলাপিয়া উৎপাদনে ৪র্থ অবস্থানে রয়েছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কূটনৈতিক দূরদর্শিতায় ঐতিহাসিক সমুদ্র বিজয়ের মাধ্যমে ১ কোটি ১৮ হাজার ৮শ ১৩ বর্গকিলোমিটার সামুদ্রিক জলসীমায় আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জীববৈচিত্র্য রক্ষা, টেকসই মৎস্য আহরণ ও সুনীল অর্থনীতি সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যকে সামনে রেখে দেশের ৫ম সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ‘নাফ সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা’ ঘোষণা করা হয়েছে।
সরকার মৎস্যজীবীদের জীবনমান উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে জানিয়ে মো. আবদুর রহমান বলেন, প্রকৃত জেলেদের শনাক্ত করে তাদের নিবন্ধন ও পরিচয়পত্র দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত নিবন্ধিত প্রায় ১৮ লাখ ১০ হাজার জেলের মধ্যে ১৫ লাখ ৮০ হাজার জেলেকে পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে। জাটকা সংরক্ষণে চার মাস পরিবার প্রতি মাসিক ৪০ কেজি এবং ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ২২ দিনের জন্য পরিবার প্রতি ২৫ কেজি হারে চাল দেওয়া হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জাটকা ও মা-ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ সময়ে ৯ লাখ ১৫ হাজার ৭৫৬টি জেলে পরিবারকে মোট ৭১ হাজার ৬১১ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও প্রতিবছর ৬৫ দিন সমুদ্রে মাছ ধরা নিষিদ্ধকালে উপকূলীয় জেলার নিবন্ধিত জেলেদের মাসিক ৪০ কেজি হারে ভিজিএফ (চাল) বিতরণ করা হয়।
মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে বিশ্বের ৫০টিরও অধিক দেশে বাংলাদেশ মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি করে। বিশ্ববাজারে আর্থিক মন্দাবস্থা থাকা সত্বেও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭৭৪০৮ টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে ৪০৫ দশমিক ৭২ মিলিয়ন ইউএস ডলার (অর্থাৎ প্রায় ৪৪৯৬.৩৮ কোটি টাকার সমমূল্যের) বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে পাঁচ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মো. আলমগীর এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বিআলো/শিলি