• যোগাযোগ
  • অভিযোগ
  • সংবাদ দিন
  • ই-পেপার
    • ঢাকা, বাংলাদেশ

    মাদকের থাবায় রাজশাহী, নীরব প্রশাসন 

     dailybangla 
    24th Mar 2025 4:36 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

    নজরুল ইসলাম জুলু, রাজশাহী: রাজশাহীতে সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনের পর উদ্বেগজনক হারে মাদক চোরাচালান ও ব্যবসার বিস্তার ঘটেছে। একসময় স্বৈরাচারী সরকারের আমলে মাদকের বিরুদ্ধে সক্রিয় অভিযান পরিচালিত হলেও বর্তমানে সেই তৎপরতা প্রায় নেই বললেই চলে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরব ভূমিকায় শহরজুড়ে নতুন করে মাদকের রমরমা ব্যবসা গড়ে উঠেছে, যা আগের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। রাজশাহীতে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যাচ্ছে ফেনসিডিল ও ইয়াবা। সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে অবাধে প্রবেশ করা এই মাদকদ্রব্যগুলো তরুণ সমাজের মধ্যে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ছে। প্রশাসনের তথ্যমতে, গোদাগাড়ী সীমান্তপথ দিয়ে সবচেয়ে বেশি হেরোইন পাচার হয়ে আসছে।

    বিশ্বস্ত সূত্রের বরাতে দৈনিক বাংলাদেশের আলোকে জানানো হয়, এক সময় রাজশাহীতে আলোচিত মাদক সিন্ডিকেটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন ক্ষমতাসীন দলের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। অভিযোগ রয়েছে যে, ওমর ফারুক চৌধুরী, খায়রুজ্জামান লিটন, অর্ণা জামান, রাজশাহী মহানগরীর সাবেক ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন আনার,২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিযাম উল আযিম নিজাম,২৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাহাতাব উদ্দিন, ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরমান আলী সহ আরও কয়েকজন কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতারা পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে অবৈধ মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। রাজশাহীর অন্যতম মাদক ব্যবসার আস্তানা হিসেবে পরিচিত ছিল ‘ওমর প্লাজা’। এইখান থেকেই নিয়ন্ত্রিত হতো মাদকের চোরাচালান। কিশোর ও তরুণদের ব্যবহার করে মাদক বহন করানো হতো এবং বৃদ্ধ ও সুন্দরী নারীদের মাধ্যমে তা বিক্রির ব্যবস্থা করা হতো বলে অনুসন্ধানে জানা যায়।

    বর্তমান সময়ে পরিস্থিতি কিছুটা পরিবর্তিত হলেও মাদকের সমস্যা রয়ে গেছে আগের মতোই। ছাত্র আন্দোলনের পর ক্ষমতার পালাবদলে মাদক সিন্ডিকেটের নেতৃস্থানীয়রা বদলালেও ব্যবসা বন্ধ হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, এক সময় যারা ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় মাদক ব্যবসা চালাতেন, তারা এখন বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠন এবং জামায়াতের সহযোগিতায় এই অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।

    সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় রাজশাহীর তালাইমারী, রুয়েট গেট, ভদ্রা, আলুপট্টি, কাশিয়াডাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকায় বাইকার গ্রুপের মাধ্যমে মাদক সরবরাহ করা হচ্ছে। মোবাইল ফোন ব্যবহার করে মাদক কেনাবেচা চলছে নির্বিঘ্নে, অথচ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন দেখেও না দেখার ভান করছে।

    বিশেষ করে রাজশাহীর আইডি রেলগেট, ভদ্রা রেলগেট, বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন, কোর্ট স্টেশন ও বাস টার্মিনালে প্রকাশ্যেই মাদকের বেচাকেনা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, এক সময় স্বৈরাচারী সরকারের দোসররা এখন কৌশলে রাজনৈতিক পরিচয় বদলে একই মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশের নজরদারি কম থাকায় তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে একাধিক ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন।

    মো: শরিফুল ইসলাম নামে বর্ণালী মোরের স্থানীয় বাসিন্দা জানান, প্রতিরাতেই বেপরোয়া ভাবে মোটরসাইকেল করে অনেক উগ্র মাদকসেবীরা নির্বিঘ্নে চলাচল করে। তাদের ভয়ে মানুষজন মধ্যরাতে বাসা থেকে বের হতে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। প্রশাসনের দ্রুত উচিত এই সব মাদকসেবকদের ধরে আইনের আওতায় নিয়ে আসা।

    গোপন সূত্রের তথ্যমতে, বর্তমানে রাজশাহী মহানগর যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কিছু নেতাকর্মী আওয়ামী লীগের সাবেক কাউন্সিলর নিজাম উল আযীম নিজাম, আরমান আলী, মাহাতাব উদ্দীন প্রমুখের পালিত কিশোর গ্যাং গ্রুপ গুলোর মাধ্যমে বর্তমানে রাজশাহীতে মাদক সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে। অভিযোগ রয়েছে, তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমঝোতা করেই এই অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ৫ই আগষ্ট পূর্ববর্তী সময়ে পাড়া মহল্লার দুধর্ষ চিহ্নিত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা যারা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলরদের হয়ে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম, সভা সমাবেশ, মিছিল আয়োজন , নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতো, কিশোর গ্যাংয়ের সে সক্রিয় চক্রগুলো কে ইদানীং বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করতে ও বিএনপির দলীয় মিটিং মিছিলে দেখা যায়। এদের মধ্যে অনেকেই রাজশাহীর বিভিন্ন থানায় বিএনপির অঙ্গসংগঠনের থানা পর্যায়ের বিভিন্ন পদ পেয়েছে বলেও জানা যায়। মূলত এরা কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী না হলেও পূর্বেও এদেরকে মাদক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ব্যবহার করতো এবং এখনো এদের মাধ্যমেই সেই সিন্ডিকেট সচল রাখা হয়েছে। মাদক সিন্ডিকেটের সাথে বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততার এই সব অভিযোগের বিষয়ে রাজশাহী মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান রিটনের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ফলে অভিযোগের বিষয়ে তার বক্তব্য গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি ।

    বাংলাদেশের আলোকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈশা বলেন, বিএনপি কোথাও মাদক বা চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত নয়। যদি আমাদের দলের কেউ এমন কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকে, তাহলে আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তবে সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনের পর পুলিশের নতুন করে সংগঠিত হতে সময় লাগছে, যার ফলে মাদকবিরোধী অভিযান কিছুটা কম হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।

    তিনি জামায়াতের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, জামায়াত বর্তমানে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে তাদের পদ দিচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের চাঁদাবাজি, জমি দখল এসব অপরাধ জামায়াত-আওয়ামী লীগ মিলে একত্রে করছে বলে জানান।

    এইদিকে, একসময় মাদকের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হলেও বর্তমানে সেই তুলনায় চোরাকারবারিদের গ্রেফতারের হার আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে বলে জানান এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা।

    বাংলাদেশের আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাজশাহী মানবাধিকার সোসাইটির সভাপতি এডভোকেট মো. এমতাজুল হক বাবু বলেন, আগে মাদকের মামলার সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি ছিল, তবে বর্তমানে আশঙ্কাজনকভাবে তা কমে গেছে। আগে যারা গ্রেফতার হতো, তারা জামিনে বের হলেও অন্তত মামলাগুলো হতো। এখন দেখা যাচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কার্যকর অভিযান পরিচালনা করছে না। ফলে মাদকসেবীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে, আর মাদক ব্যবসায়ীরা বড় সিন্ডিকেট গড়ে তুলছে।

    রাজশাহী জেলা সুজনের সভাপতি আহমেদ শফি উদ্দিন বলেন, রাজনৈতিক সংগঠন, সামাজিক সংগঠন ও ছাত্রসমাজের পক্ষ থেকে মাদকবিরোধী কার্যকর চাপ আমরা খুবই কম লক্ষ্য করছি। ৫ আগস্ট ছাত্রদের গণঅভ্যুত্থান সফল না হলে এই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। ছাত্র ও যুবসমাজের পাশাপাশি জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে এবং সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে প্রশাসন এই সমস্যা গুরুত্ব সহকারে দেখে ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়।

    রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের দাবি, অভিযান চলছে, তবে ওয়ারেন্টভুক্ত মামলার আসামিকে ধরাই অগ্রাধিকার দিচ্ছে প্রশাসন।

    এ বিষয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) নাজমুল হাসান বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে, তবে হয়তো কিছুটা কম হচ্ছে। আমরা প্রথমে ওয়ারেন্টভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীদের ধরার চেষ্টা করছি, যাতে তারা কোনোভাবেই ছাড় না পায়। মাদক না থাকলে কাউকে আটক করা যায় না। তাই যাদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট রয়েছে, তাদের আগে ধরার জন্য বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। বর্তমানে প্রতিটি থানায় নতুন অফিসার যোগদান করেছে, ফলে অভিযান পরিচালনায় কিছুটা সময় লাগছে।

    রাজশাহীর সচেতন মহল মনে করছে, যদি দ্রুত মাদকবিরোধী অভিযান চালানো না হয়, তবে রাজশাহী পুরোপুরি মাদকের কবলে চলে যেতে পারে। রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় মাদকের বিস্তার ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সক্রিয় হতে হবে এবং জনগণের সহযোগিতায় এই ভয়াবহ পরিস্থিতির সমাধান করতে হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বিশ্লেষকরা।

    বিআলো/শিলি

    এই বিভাগের আরও খবর
     
    Jugantor Logo
    ফজর ৫:০৫
    জোহর ১১:৪৬
    আসর ৪:০৮
    মাগরিব ৫:১১
    ইশা ৬:২৬
    সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১

    আর্কাইভ

    November 2025
    M T W T F S S
     12
    3456789
    10111213141516
    17181920212223
    24252627282930