মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের দুর্ভোগ, সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে
সম্পাদকীয়: দেশের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার একটি বড় খাত হচ্ছে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ। পরিবার-পরিজন ফেলে বিদেশবিভুঁইয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে তারা যে অর্থ দেশে পাঠান, তা আমাদের অর্থনীতিকে অনেকটাই সবল রাখে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, এ খাত নিয়ে সরকারের কোনো কোনো মহলে উদাসীনতা দৃশ্যমান। একটি দৈনিকে প্রকাশ- সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, এজেন্সি ও প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বহীনতা, গাফিলতি ও সমন্বয়হীনতার কারণে ৩১ হাজারের বেশি বৈধ শ্রমিক মালয়েশিয়া যেতে পারেননি। মালয়েশিয়া সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী শুক্রবার বাংলাদেশের কর্মীদের দেশটিতে প্রবেশের ডেডলাইন ছিল। ভিসা থাকার পরও কর্মীরা টিকিট না পেয়ে মালয়েশিয়াগামী বিমানে উঠতে পারছেন না। ফলে চরম অনিশ্চয়তা, দুর্ভোগ আর উৎকণ্ঠায় কাটছে এসব কর্মীর দিন।
উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, আগে যেখানে সব মিলে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ হতো, সেখানে এখন ছয় লাখ টাকার বেশি ব্যয়ের পরও যাত্রার নিশ্চয়তা মেলে না। আর বিমানের টিকিট যেন সোনার হরিণ, ২০-৩০ হাজার টাকার বিমানের টিকিট বর্তমানে নাকি লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
জনশক্তি রপ্তানিকারক সংগঠন বায়রা দাবি করেছে, এজেন্সির পক্ষ থেকে সবকিছু করা হলেও দুর্বলতা আছে সরকারি ব্যবস্থাপনায়। তারা বলছেন, মালয়েশিয়া গমন-ইচ্ছুকদের জন্য বাড়তি ফ্লাইট পরিচালনা করা হলে বর্তমানে এ সংকট তৈরি হতো না। আবার এমন অভিযোগও আছে, বেশ কয়েকটি এজেন্সি পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা নিয়েও কোনো টিকিট বা কাজের অনুমতিপত্র দিতে পারেনি। অবশ্য যেসব শ্রমিক মালয়েশিয়ায় যেতে পারেননি, বাংলাদেশ সরকার তাদের পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে। মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের কথা বিবেচনা করে কর্তৃপক্ষ শেষ মুহূর্তে ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার ব্যবস্থা করছে।
বলা বাহুল্য, কর্মীরা নিরাপদে মালয়েশিয়ায় যেতে না পারলে তাদের জীবন যেমন অনিশ্চয়তায় ডুববে, তেমনই রেমিট্যান্স হারাবে দেশ। আমরা মনে করি, সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সরকার যদি মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে প্রতিদিন ১০-২০টি চার্টার্ড ফ্লাইটের ব্যবস্থা করত, তাহলে আটকে যাওয়া কর্মীদের এমন দুর্দশা হতো না। এছাড়া সরকার নির্ধারিত টাকার অনেক দামে টিকিট বিক্রি করে সিন্ডিকেট কীভাবে শতকোটি টাকারও বেশি অর্থ হাতিয়ে নিল, এরও তদন্ত হওয়া দরকার।
ভুলে গেলে চলবে না, দেশের উন্নয়নে রেমিট্যান্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। যেসব কর্মকাণ্ডের কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে, সেসবের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই কঠোর হতে হবে। বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রেই সিন্ডিকেট সক্রিয়। তবে জনশক্তি রপ্তানি ক্ষেত্রে সিন্ডিকেটের কারণে ক্ষতির মাত্রা অনেক এবং এর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। কাজেই প্রবাসী শ্রমিকরা যাতে হয়রানির শিকার না হন, সেজন্য এ খাতের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। যে কোনো দেশে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে বিভিন্ন দেশের শ্রমবাজারে বাংলাদেশের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করতে হবে। বিদেশি শ্রমবাজার আমাদের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে ডলার সংকটের সময় এর গুরুত্ব আরও বেড়েছে। তাই এ বাজার যাতে কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে সরকারকে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে।
বিআলো/শিলি