মেলায় বৃষ্টি উপেক্ষা করেও বৃক্ষপ্রেমীদের ভীড়
dailybangla
30th Jun 2024 8:08 pm | অনলাইন সংস্করণ
জাফরুল আলম : প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বৃক্ষ মেলায় হাজারো প্রজাতির গাছের সমাহার। ঝুলছে গাছে গাছে সুমিষ্ট ফল আমসহ নানা দেশীয়-বিদেশি ফল। নানা রঙের, নানা জাতের আম, কাঁঠাল, বেল, লটকন, লিচু, আঙুর, লেবু, কলা, আমলকিসহ নানা প্রজাতির দেশীয় ফল থরে থরে ঝুলে আছে। বিভিন্ন প্রকার বিদেশি ফলজ গাছেরও কমতি নেই। সৌখিন বৃক্ষপ্রেমীদের কাছে আকর্ষণ বনসাই। প্রতিবারের মতো এবারের বৃক্ষমেলায়ও বিভিন্ন স্টলে শোভা পাচ্ছে নানা প্রজাতির শৈল্পিক বনসাই। বনসাই ছাড়াও মেহগনি, বট, ক্যাকটাস গাছও শোভা পাচ্ছে মেলায়।
এছাড়া বিভিন্ন জাতের রংবেরংয়ের ফুল, সৌন্দর্যবর্ধক গাছ মেলাকে আরো বেশি শোভা বাড়িয়ে দিয়েছে। বিভিন্ন স্টলে সারিবদ্ধভাবে সাজানো ইনডোর প্ল্যান্ট ক্রেতাদের টেনে নিয়ে এসেছে মেলায়। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বৃক্ষ প্রেমীরা ছুটে এসেছেন জাতীয় বৃক্ষ মেলায়। রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পাশের মাঠে ৫ জুন শুরু হওয়া বৃক্ষ মেলা চলবে ১৩ জুলাই পর্যন্ত।
রবিবার (৩০ জুন) দুপুরে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, ছাতা মেলে বৃষ্টি উপেক্ষা করেও বৃক্ষপ্রেমীদের ভীড়। এমন বৈরী আবহাওয়া মধ্যেও গাছ কেনার হিড়িক। আবার কেউ দেখতেও এসেছেন। এবারের মেলায় ১৮০ টি মূল স্টলের মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও নার্সারি বৃক্ষ মেলায় অংশ নিয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নার্সারিগুলোও নিজেদের গাছের প্রদর্শনী ও বিক্রি করছে।
‘বৃক্ষ দিয়ে সাজাই দেশ, সমৃদ্ধ করি বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিপাদ্য নিয়ে শুরু হওয়া এই মেলা প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত। মেলায় ঢুকতে নেই প্রবেশ ফি। এমনকি দর্শনার্থীদের ব্যক্তিগত গাড়ি রাখার জন্যও কোনো পার্কিং ফি নেই।
মেলায় শুধুই বিভিন্ন জাতের ফল, ফুল, বনজ, ওষুধি ও সৌন্দর্যবর্ধক হাজারো প্রজাতির গাছ প্রদর্শন ও বিক্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। পাশাপাশি বীজ, সার, টব, অর্গানিক খাদ্যপণ্য, ল্যান্ডস্কেপ ডিজাইন, গাছ রাখার বিভিন্ন আসবাবপত্র প্রদর্শনী ও বিক্রির মাধ্যমে বৃক্ষপ্রেমীদের আগ্রহ বাড়িয়ে দিয়েছে।
বৃষ্টি উপেক্ষা করে মেলার আসার কারণ জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তপন জানান, মেলায় আসবো বলে সময় করতে পারছি না। তাই আজ বৃষ্টি উপেক্ষা করেই কাঙ্খিত মেলায় চলে এসেছি। পছন্দের কিছু ফল গাছ ও টব কিনেই বাসায় ফিরে যাবো।
মেলায় ঘুরতে আসা ফাহিম নামের এক বৃক্ষপ্রেমী তার বোন, ফুপাসহ পরিবারের কয়েক সদস্য এসেছেন। বৃষ্টির কারণে প্রত্যেকের মাথার ওপর ছিল ছাতা। ছাতা নিয়েই মেলা থেকে গাছ দরদাম করছেন। তিনি জানান, আমরা পরিবারের কয়েকজন মেলায় এসেছি।
প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক জাতীয় বৃক্ষমেলা পুরস্কার প্রাপ্ত (২০১৬, ২০১৭ ও ২০২৩) হোসেন নার্সারির সাদ্দাম হোসেন বলেন, ১৫ বছর ধরে মেলায় অংশগ্রহণ করে আসছি। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বিক্রি ভালো হচ্ছে। বৈরি আবহাওয়ার কারণে বিক্রি কিছুটা খারাপ হলেও সামগ্রিক ভালো। গ্রীন লাইফ নার্সারীর স্বত্বাধিকারী মুরাদ হোসেন বলেন, বৃষ্টির কারণে কেনাবেচা কিছুটা ব্যাঘাত ঘটলেও সমস্যা হবে না। কারণ পাশেই আমাদের নিজস্ব নার্সারি রয়েছে। ওখানে সারা বছরই ভালো বেচাকেনা হয়। জান্নাত নার্সারীর স্বত্বাধিকারী সৌদিতে অবস্থান করায় ছেলে রাকিব মেলার স্টলটি পরিচালনা করছেন। ক্রেতাদের অভিযোগের ভিত্তিতে বীজ, সার, চারা-কলমের দাম বিভিন্ন স্টলে তারতম্য কেন! এমনটা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভালো জিনিসের দাম অবশ্যই বেশি। কোনটা ভালো কিংবা মন্দ সেটা ক্রেতাকে দেখিয়ে দিচ্ছি। যারা কিনবেন অবশ্যই যাচাই করবেন।
বৈরী আবহাওয়ায় মেলায় কেনাবেচায় কোন প্রভাব পড়ছে কি না জানতে চাইলে তথ্য কেন্দ্রের দায়িত্বরত বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম বাংলাদেশের আলো’কে বলেন, স্টলগুলোতে বেচাকেনা ভালোই দেখছি। বৃষ্টিতে ভিজেও অনেকেই মেলায় প্রবেশ করছেন। বিক্রি কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ২৯ জুনের হিসেব এখনো হাতে পাইনি। তবে গত ২৮ জুন মেলার স্টল থেকে মোট বিক্রি হয়েছিল ২৬ লক্ষ ৪৩ হাজার ৮৭৮ টাকা। তবে স্টলগুলোতে গাছের দাম কমবেশি নিয়ে ক্রেতাদের অভিযোগের ভিত্তিতে এই কর্মকর্তা বলেন, এটা আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। তবে ক্রেতারা অভিযোগ দিলে এর ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।