মোদি ভারতের জন্য পাকিস্তানের চেয়েও বড় হুমকি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল অনিল চৌহান সম্প্রতি স্বীকার করেছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘর্ষে ভারতের বিমানবাহিনী ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তিন সপ্তাহ ধরে ক্ষয়ক্ষতির কথা অস্বীকার করার পর এই স্বীকারোক্তি ভারতের রাষ্ট্রীয় বর্ণনার ভ্রান্ততা প্রকাশ করে।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে সন্ত্রাসবাদে লিপ্ত এবং নিজেদের নীতিগুলি আড়াল করতে মিথ্যা বর্ণনা তৈরি করে। অপারেশন সিন্ধুর ব্যর্থতা ভারতের মিথ্যা ও ভণ্ডামি উন্মোচনের সুযোগ করে দেয়।
মোদি কেবল একজন ব্যক্তি নন; তিনি ভারতের শাসক দলের মানসিকতার প্রতীক। এই উগ্রবাদী আদর্শ মহাত্মা গান্ধীর হত্যার পথ প্রশস্ত করেছিল। পরবর্তীতে, এর প্রবক্তারা কোনো দায় স্বীকার করেনি। মহাত্মা গান্ধী, যিনি ভারতের ‘জাতির পিতা” হিসেবে পরিচিত, ১৯৪৮ সালের জানুয়ারিতে হিন্দু উগ্রবাদী নথুরাম গডসের হাতে নিহত হন। গডসে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)-এর সদস্য ছিলেন, যা বর্তমানে বিজেপির রাজনৈতিক শাখা হিসেবে কাজ করে।
গডসে দাবি করেছিলেন যে তিনি আরএসএস ছেড়ে দিয়েছেন, কিন্তু একটি সাম্প্রতিক বিবিসি তদন্তে প্রকাশ পেয়েছে যে তিনি কখনোই সংগঠনটি ছাড়েননি। বহু বিজেপি নেতা গডসেকে ‘দেশপ্রেমিক’ ও ‘মাটির সন্তান’ বলে প্রশংসা করেন। এটি এমন নেতাদের সম্পর্কে কী বলে যারা তাদের ‘বাপু’-এর হত্যাকারীকে প্রশংসা করেন? আরএসএস ও বিজেপি কেবল ভারতের জন্য নয়, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়া ও আন্তর্জাতিক শান্তির জন্য হুমকিস্বরূপ।
আরএসএস বহুবার সহিংসতা ও ঘৃণার কারণে নিষিদ্ধ হয়েছে। ১৯৪৭ সালের জানুয়ারিতে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বোমা হামলার কারণে এটি প্রথম নিষিদ্ধ হয়। ১৯৪৮ সালে গান্ধী হত্যার পর, ১৯৭৫ সালে ইন্দিরা গান্ধীর সময় এবং ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর এটি পুনরায় নিষিদ্ধ হয়।
আরএসএস ভারতের জাতীয় প্রতীকসমূহ প্রত্যাখ্যান করে। আরএসএস- এর দ্বিতীয় প্রধান এম.এস. গোলওয়ালকর তার বই ‘বাঞ্চ অব থটস’-এ ত্রিবর্ণ পতাকা গ্রহণের বিরোধিতা করেন এবং পরিবর্তে গেরুয়া পতাকার পক্ষে মত দেন। সংগঠনটি ভারতের সংবিধানও প্রত্যাখ্যান করে।
মোদি প্রায়ই পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদে পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ করেন, কিন্তু তার আরএসএস-এর সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপক প্রমাণ রয়েছে। পশ্চিমা মিডিয়া তাকে ‘গুজরাটের কসাই’ নামে অভিহিত করেছে, কারণ তিনি ২০০২ সালে গুজরাটে মুসলমানদের গণহত্যার সময় মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।
সাবেক আরএসএস কর্মী যশবন্ত শিন্ডে ২০২২ সালে স্বীকার করেন যে তিনি পাকিস্তান ও ভারতে মুসলমানদের দোষারোপ করার জন্য সন্ত্রাসী কার্যক্রমের প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন। বর্তমান আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত, যিনি প্রধানমন্ত্রীীয় প্রটোকল উপভোগ করেন, দাবি করেন যে ভারতের সব নাগরিক হিন্দু এবং নিয়মিত খ্রিস্টান ও মুসলমানদের আক্রমণ করেন।
তিনি একবার অভিযোগ করেন যে মাদার তেরেসার দাতব্য কাজের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল দরিদ্রদের খ্রিস্টধর্মে রূপান্তরিত করা। এই ধরনের বক্তব্য হিন্দু উগ্রবাদীদের বিভিন্ন অংশে খ্রিস্টানদের আক্রমণে উৎসাহিত করেছে।
হিন্দু উগ্রবাদ ভারতের সব প্রতিষ্ঠানে, এমনকি সেনাবাহিনীতেও প্রবেশ করেছে। ২০২৫ সালের ৩০ মে, সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় বিতর্কিত ধর্মীয় নেতা জগদগুরু রামভদ্রাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। জগদগুরু পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীর ভারতের বলে দাবি করেন, যা সেনাপ্রধান মেনে নেন বলে জানা যায়। এই ধর্মীয় উগ্রবাদী বাবরি মসজিদ ধ্বংস ও নিম্নবর্ণের হিন্দুদের উপর আক্রমণ সমর্থন করেন।
বিআলো/শিলি



