যাত্রাবাড়িতে চোর সন্দেহে সরকারি কর্মচারীকে হাত-পা বেঁধে পিটিয়ে হত্যা
মোহাম্মদ জুবায়ের আলম: রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে এক সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীকে প্রকাশ্যে হাত-পা বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে— এমন ঘটনায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে এলাকায়। নিহতের নাম আনোয়ার হোসেন বাবু (৪৩)। তিনি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ইলেকট্রিশিয়ান পদে কর্মরত ছিলেন।
চোর সন্দেহে পিটুনিতে তার মৃত্যু হলেও স্বজনদের দাবি, তিনি নির্দোষ এবং পুরো ঘটনাটি পরিকল্পিত হত্যা হতে পারে।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার কাউন্সিল উত্তর শরীফপাড়া এলাকায় ফারুক মিয়ার মালিকানাধীন একটি বাস মেরামতের গ্যারেজে এই ঘটনাটি ঘটে। স্থানীয়রা জানান, সকাল ৭টার দিকে গ্যারেজের ভেতরে কয়েকজন মিলে এক ব্যক্তিকে মারধর করছিলেন। কিছুক্ষণ পরই তার নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যায়।
খবর পেয়ে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আনোয়ার হোসেনের হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
নিহতের বড় ভাই দেলোয়ার হোসেন আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, “আমার ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন বিআইডব্লিউটিএতে ইলেকট্রিশিয়ান পদে চাকরি করত। আজ সকালে নামাজ পড়ে বের হলে চোর সন্দেহে তাকে ধরে গ্যারেজে নিয়ে হাত-পা বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিল না; এলাকার সবাই তাকে সহজ-সরল ও ভালো মানুষ হিসেবে চিনত।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা জানি না কারা তাকে এমন নির্মমভাবে হত্যা করল। পুলিশ এখনো কাউকে স্পষ্টভাবে অভিযুক্ত করেনি। আমরা ন্যায়বিচার চাই।
যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান বলেন, “সকালে একটি গ্যারেজ থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত ব্যক্তি বিআইডব্লিউটিএর ইলেকট্রিশিয়ান পদে চাকরি করতেন। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, তিনি মাদকাসক্ত ছিলেন এবং পূর্বে রিহ্যাবে ছিলেন। চুরির সন্দেহে স্থানীয়রা তাকে গণপিটুনি দেয়।”
তিনি আরও জানান,“ঘটনাস্থল থেকে জড়িত সন্দেহে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তদন্তের পর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।”
পুলিশ জানায়, আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে কারও ব্যক্তিগত বিরোধ ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে স্থানীয়দের অনেকেই বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে এলাকাটিতে ছোটখাটো চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে; সেই আতঙ্ক থেকেই হয়তো ভুল সন্দেহে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
অন্যদিকে স্বজনদের দাবি, আনোয়ার হোসেন নিয়মিত নামাজ পড়তেন, সংসার করতেন শান্তভাবে— এমন মানুষকে ‘চোর’ বলা অবিশ্বাস্য।
এদিকে মানবিক প্রশ্ন উঠেছে, একজন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা— এই ঘটনার পর স্থানীয় মহলে ক্ষোভ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, চোর সন্দেহে কাউকে গণপিটুনি দেওয়া আইনের গুরুতর লঙ্ঘন এবং ন্যায়বিচারের বিকল্প হতে পারে না। তারা এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, যাত্রাবাড়ীর এই সকালের ঘটনাটি এখন পুরো রাজধানীতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসবে— এটি কি সত্যিই ভুল সন্দেহে গণপিটুনি, নাকি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের আড়াল? প্রশ্ন এখন একটাই— একজন নিরীহ মানুষকে কি ভুল সন্দেহের বলি হতে হলো?
বিআলো/তুরাগ



