যুবদের বেকারত্ব রোধে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ভূমিকা অপরিসীমঃ ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান
শীর্ষস্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা (গ্রেড-১) অতিরিক্ত সচিব ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান ২০২৩ সালের ৪ ডিসেম্বর থেকে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদে মেধা, দক্ষতা ও দূরদর্শীতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তার সুদক্ষ নেতৃত্বে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর অগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি মাত্রায় জাতীয় উন্নয়নে অবদান রেখে যাচ্ছে। যুবদের মানসম্পন্ন মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর এখন সব মহলের প্রশংসিত একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান।
সম্প্রতি দৈনিক বাংলাদেশের আলোর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বেকারত্ব দূরীকরণে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ভূমিকা অপরিসীম। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন আমাদের বিশেষ সংবাদদাতা আকাশ মাহমুদ।
বাংলাদেশের আলো : দেশের যুবসমাজকে মানবসম্পদে পরিণত করতে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ভূমিকা কতটা কার্যকর বলে মনে করেন?
মহাপরিচালক : দেশের যুবসমাজকে মানবসম্পদে পরিণত করতে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ভূমিকা খুবই কার্যকর বলে মনে করি। দেশের এক-তৃতীয়াংশ জনসংখ্যা যুব। এই যুবদের মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করে দক্ষ জনসম্পদে পরিণত করে তাদের ঋণ সহায়তা প্রদান করে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ১৯৮১ সাল থেকে নিরলস ভূমিকা রেখে চলেছে। প্রায় সত্তর লাখ যুব ও যুব নারীদের ৮৩টি ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদান করে বেকারত্ব দূরীকরণে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ভূমিকা অপরিসীম।
বাংলাদেশের আলো : আপনি দায়িত্ব গ্রহণের পর অধিদপ্তরের কর্মকাণ্ডে বিশেষ কোনো সাফল্য এনেছেন কী?
মহাপরিচালক : আমি যোগদানের পর যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের রাজস্ব খাত ও উন্নয়ন খাতভুক্ত প্রশিক্ষণ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ প্রশিক্ষণ ও ঋণ বিতরণ সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করা হয়েছে। এপিএ-এর টার্গেট শতভাগ অর্জন করা হয়েছে। চলমান উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ বাস্তবায়নসহ নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত রাখা সম্ভব হলে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ তথা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়ন ইতিবাচকভাবে ত্বরান্বিত হবে বলে সুদৃঢ়ভাবে আশা করা যায়।
বাংলাদেশের আলো : অধিদপ্তরের জেলা শাখা/ অফিসগুলোতে এক ধরনের ধীরগতির কথা শোনা যাচ্ছে। এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী?
মহাপরিচালক : অধিদপ্তরের জেলা শাখা/অফিসগুলোতে এক ধরনের ধীরগতির কথা আমি শুনিনি। অধিদপ্তরের জেলা শাখা/অফিসগুলোতে নিয়মিত পরিদর্শন করা হচ্ছে, সশরীরে সভাসহ জুম মিটিংয়ের মাধ্যমে নিয়মিত সভা করে সরকারি কার্যক্রমে অধিকতর গতি সঞ্চার করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের আলো : সরকারের যেকোনো অধিদপ্তরের প্রধান একটি পূর্ণ মন্ত্রণালয় কর্মকাণ্ড পরিচালনার অনুশীলন করেন। আপনি কি এ মন্তব্যের সঙ্গে একমত?
মহাপরিচালক : সরকারের যেকোনো অধিদপ্তরের প্রধান একটি পূর্ণ মন্ত্রণালয় কর্মকাণ্ড পরিচালনার অনুশীলন করেনÑ এই মন্তব্যের সঙ্গে আমি অনেকাংশেই একমত। তাছাড়া, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মতো গুরুত্বপূর্ণ অফিসের প্রধান মূলত মন্ত্রণালয়কে অনুসরণ করে কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। সেই বিবেচনায় মন্তব্যটি অনেক প্রাসঙ্গিক।
বাংলাদেশের আলো : বর্তমান সরকারের আমলে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উল্লেখযোগ্য সাফল্য সম্পর্কে বলবেন কি?
মহাপরিচালক : বর্তমান সরকারের আমলে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উল্লেখযোগ্য সাফল্য হলো, রাজস্ব খাতের প্রশিক্ষণ, ঋণ বিতরণ এবং প্রকল্প অনুমোদন ও বাস্তবায়নে নিয়মিতভাবে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করা। প্রতিবছর এসব ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি করে উন্নয়ন যাত্রাকে ত্বরান্বিত করা। এসব সাফল্যের কারণে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ গতিশীল হচ্ছে। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর প্রতিবছর ৩ লাখের বেশি যুবককে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদেরকে কর্মসংস্থানের উপযোগী করে গড়ে তুলছে এবং ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে আত্ম-কর্মসংস্থান ও উদ্যোগী হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য সহযোগিতা করছে।
তিনি বলেন, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের জন্মলগ্ন থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৬৯ লাখের বেশি যুবককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং তাদের মধ্যে প্রায় ২৪ লাখ যুবক আত্মকর্মী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। বর্তমান সরকারের তিন মেয়াদে প্রায় ৩৯ লাখ যুবককে দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় ৯ লাখ যুবক আত্মকর্মী হয়েছেন। প্রতিবছর গড়ে ৪০ হাজার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যুবকের মাঝে আত্মকর্মসংস্থানমূলক প্রকল্প গ্রহণের জন্য ১৪০ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ ৫৯ হাজার ৩৪৬ যুবককে ২ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর।
বর্তমান সরকারের গত তিন মেয়াদে ৫ লাখ ৩০ হাজার ৭৮৭ জন প্রশিক্ষিত যুবকের মাঝে ১ হাজার ৫৪৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। যুবকদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে কর্মসংস্থান ব্যাংক ও এনআরবিসি ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়েছে। এখান থেকে আমাদের প্রশিক্ষিত যুবকরা ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা স্টার্টআপ ক্যাপিটাল হিসেবে ঋণ সুবিধা পাচ্ছেন।
বাংলাদেশের আলো : একজন শীর্ষস্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে আপনি কি মনে করেন আমাদের আগামী প্রজন্ম দেশের জন্য মেধার স্বাক্ষর রাখতে পারবে? আপনার দৃষ্টিতে এ ক্ষেত্রে ঘাটতি পূরণের করণীয় কী?
মহাপরিচালক : আমাদের আগামী প্রজন্ম দেশের জন্য অবশ্যই মেধার স্বাক্ষর রাখতে পারবে বলে আমি মনে করি। এ ক্ষেত্রে ঘাটতি পূরণের জন্য শিক্ষার মান বাড়াতে হবে, যুব উন্নয়নে অধিকতর বাজেট বরাদ্দ এবং অধিক সংখ্যক প্রকল্প অনুমোদন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
বাংলাদেশের আলো : দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে তুলতে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কর্মসূচিগুলো সম্পর্কে বলবেন কি?
মহাপরিচালক : আমাদের দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে তুলতে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কর্মসূচিগুলো হলোÑ সেলাই, ব্লক-বাটিক, কম্পিউটার, ইলেক্ট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স, রেফ্রিজারেটর, যানবাহন চালনা প্রশিক্ষণসহ ৮৩টি ট্রেডে প্রশিক্ষণ। আশার কথা, চাহিদার প্রেক্ষাপটে ট্রেডের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাংলাদেশের আলো : জেলা অফিসগুলোতে কর্মকর্তাদের গাফিলতি ও অনিয়ম-দুর্নীতির কোনো তথ্য বা অভিযোগ পাচ্ছেন কি?
মহাপরিচালক : জেলা অফিসগুলোতে কর্মকর্তাদের গাফিলতি ও অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য বা অভিযোগ তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। যা পাওয়া যায় তা দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এছাড়া জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নে সহকর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদান, পুরস্কার প্রদানসহ উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করে অনলাইন কার্যক্রম, সিসিটিভির মাধ্যমে মনিটরিং করা হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে সাফল্যও পাওয়া যাচ্ছে। সেবার মান বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাংলাদেশের আলো : যুবসমাজকে ইতিবাচক ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে অভিভাকদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
মহাপরিচালক : যুবসমাজকে ইতিবাচক ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে অভিভাকদের জন্য আমার পরামর্শ হলো যুবদের হতাশ করা যাবে না। তাদের অবহেলা করা যাবে না। তাদের গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের যুবদের গৌরব ও সম্ভাবনার কথা তাদের শোনাতে হবে। মহান ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধে সর্বোচ্চ অবদান যুবদের। যুবরাই অমিত সম্ভাবনা ধারণ করে। তাদের হেয় ও অবহেলা না করে তাদের গুরুত্ব দিয়ে গৌরব স্মরণ করিয়ে দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তুলতে অবিভাবকগণ অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারেন।
বাংলাদেশের আলো : অধিদপ্তরের কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকারের আর্থিক বরাদ্দকে পর্যাপ্ত মনে করেন কি?
মহাপরিচালক : অধিদপ্তরের কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকারের আর্থিক বরাদ্দ আরো বৃদ্ধি করার সুযোগ রয়েছে। অধিদপ্তরের কার্যক্রম রাজধানী, জেলা ও উপজেলায় বিস্তৃত, প্রশিক্ষণ ও ঋণের চাহিদাও অনেক। তাই বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হলে অধিদপ্তর দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আশা করা যায়।
বাংলাদেশের আলো : যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কর্মসূচিগুলো সম্পর্কে সংক্ষেপে বলবেন কি?
মহাপরিচালক : অধিদপ্তরের ভিশন হলো, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও গৌরব বৃদ্ধিতে সক্ষম, নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন আধুনিক জীবনমনস্ক যুবসমাজ। এই ভিশন অর্জনে অধিদপ্তরের মিশন হলো, জীবনের সর্বক্ষেত্রে যুবদের প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তাদের প্রতিভার বিকাশ ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা। অধিদপ্তরের সম্পাদনযোগ্য কর্মাবলির মধ্যে রয়েছে, যুবদের কল্যাণ, প্রশিক্ষণ ও অন্যবিষয়ক কার্যাদি, উন্নয়নমূলক কাজে যুবদের স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণে উৎসাহিত করা, যুবদের কল্যাণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, প্রকল্পের জন্য অর্থ মঞ্জুর, যুব পুরস্কার প্রদান, যুবদের দায়িত্বশীল, আত্মবিশ্বাসী এবং অন্য মানবিক গুণাবলি অর্জনে উৎসাহ প্রদানের জন্য কর্মসূচি গ্রহণ, যুব উন্নয়ন কার্যক্রমের উপর গবেষণা ও জরিপ, বেকার যুবদের জন্য কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে কার্যক্রম গ্রহণ, অনুৎপাদনশীল যুবসমাজকে সুসংগঠিত, সুশৃঙ্খল এবং উৎপাদনমুখী শক্তিতে রূপান্তর করা, দক্ষতাবৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে যুবদের কর্মসংস্থান কিংবা স্ব-কর্মসংস্থানে নিয়োজিত করা, জাতীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বেকার যুবদের সম্পৃক্ত করা। অধিকন্তু অধিদপ্তর উদ্বুদ্ধকরণ, প্রশিক্ষণ, ক্ষুদ্রঋণ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তার মাধ্যমে যুবদের কর্মসংস্থান ও আত্মকর্মসংস্থানে নিয়োজিত করাসহ দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ার প্রতিটি স্তরে তাদের সম্পৃক্ত করে, বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী যুবসংগঠনের মাধ্যমে গোষ্ঠী উন্নয়নে সহায়তা করার জন্য যুবদের বিভিন্ন গ্রুপে সংগঠিত করে, স্থানীয় পর্যায়ে যুবসংগঠনের সংখ্যা বৃদ্ধি করাসহ অংশগ্রহণমূলক উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে, যুবদের গণশিক্ষা কার্যক্রম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা, পরিবেশ উন্নয়ন, সম্পদ সংরক্ষণ ইত্যাদি আর্থসামাজিক কার্যক্রমে সম্পৃক্তকরণ এবং সমাজবিরোধী কার্যকলাপ, মাদক দ্রব্যের অপব্যবহার, এইচআইভি/এইডস এবং এসটিডি বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করে, যুবদের ক্ষমতায়ন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণমূলক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগদানের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।
বাংলাদেশের আলো : এসব কর্মসূচির মধ্যে সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প সম্পর্কে কিছু বলবেন কি?
মহাপরিচালক : এসব কর্মসূচির মধ্যে সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হলো, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতায় গৃহীত আর্ন প্রকল্প। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৯ লক্ষাধিক তরুণ-তরুণীকে শিক্ষা কার্যক্রম, প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের আওতায় আনা হবে। গত জুনে একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইকোনমিক একসিলারেশন অ্যান্ড রেসিলিয়েন্স ফর নিট (আর্ন) প্রকল্পটি অনুমোদন করেছেন। ৩ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৪ জেলার ২৫০টি উপজেলায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে নয় লক্ষাধিক তরুণ-তরুণী উপকারভোগী হবেন। এর পাশাপাশি ২০ লক্ষাধিক তরুণ-তরুণী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ প্রকল্পের মাধ্যমে উপকৃত হবেন বলে আমরা আশা করছি। ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশের প্রত্যাশা পূরণে এই প্রকল্প ভূমিকা পালন করবে।
এক নজরে ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান:
ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান ১৯৬৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি জামালপুর জেলায় সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯৪ সালে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে যোগদান করে পর্যায়ক্রমে পাবনায় সহকারী কমিশনার ও ১ম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট, ময়মনসিংহে সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও ১ম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট, দু’টি উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি), একটি উপজেলায় উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং গাজীপুরের কাপাসিয়ায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের সচিব, টাঙ্গাইলে প্রধান নির্বাহী অফিসার পদে দায়িত্ব পালনকালে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়নে অবদান রেখে প্রশংসিত হন। ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান বরিশালে জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালনসহ সরকারের রূপকল্প ২০২১, এসডিজি ২০৩০ ও রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়ন প্রচেষ্টার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ ও জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে প্রায় অর্ধ লাখ মানুষের অংশগ্রহণে বরিশাল মহানগরীর খালসহ ২৩টি খাল দখলমুক্ত করতে সক্ষম হন। এ সাহসী ভূমিকার জন্য ২০১৭ সালের ৪ জুন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামানকে জাতীয় পরিবেশ পদক ২০১৭ প্রদান করেন। বরিশাল ওয়াপদা কলোনিতে অবহেলায় পড়ে থাকা মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ‘টর্চার সেল-ব্যাঙ্কার-ব্রিজ’ উদ্ধার ও দর্শণার্থীদের জন্য উন্মুক্তকরণ, ২০১৭ সালে ‘বরিশাল টু ভোলা’ মহাসড়কের ৪.৮ কিলোমিটার রাস্তার দু’পাশে কৃষ্ণচূড়া, সোনালু ও জারুল প্রজাতির ৩ হাজার গাছের চারা রোপণের মাধ্যমে পরিবেশ উন্নয়ন নিশ্চিত করে সরকারের শীর্ষ মহলে সমাদৃত হন তিনি।
সরকারের যুগ্মসচিব হিসেবে তিনি ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বেজা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কর্মরত থেকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, ৪০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য-সেবা উৎপাদন ও রপ্তানি, ১০ মিলিয়ন কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রয়াস গ্রহণ এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে অবদান প্রধানমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায় ২০২১ সালে ১.৭১ লাখ টাকা নিজস্ব অর্থায়নে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের মাধ্যমে নির্ধারিত ডিজাইন ও প্রাক্কলনে একজন গৃহহীনকে নতুন ঘর প্রদান কার্যক্রমে অপির্ত দায়িত্ব পালনকালে মেধা ও দক্ষতার স্বাক্ষর রাখেন।
সরকারের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিভুক্ত প্রকল্পসমূহের তথ্য সহজে পাওয়ার ডিজিটাল উৎস হিসেবে ‘আইএমইডি পিন’ নামক একটি মোবাইল অ্যাপ উদ্ভাবন করে জনগণের দোরগোড়ায় তথ্য-সেবা পৌঁছে দিয়েছেন। বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি), পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে কর্মরত থেকে এসডিজি-২০৩০, রূপকল্প-২০৪১ : বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিসমূহ বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিভুক্ত প্রকল্পসমূহের তথ্য সহজে পাওয়ার ডিজিটাল উৎস হিসেবে ‘আইএমইডি পিন’ নামক একটি মোবাইল অ্যাপ উদ্ভাবন ও তৈরি করে জনগণের দোরগোড়ায় তথ্য-সেবা পৌঁছে দিয়েছেন। ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান ৪ ডিসেম্বর ২০২৩ থেকে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে যুবদের উন্নয়নে ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন।
ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান ২২তম পিপিএমসি, ৮৬তম সিনিয়র স্টাফ কোর্স (এসএসসি), ১১৭তম এসিএডি কোর্স (বিপিএটিসি), Creating Entrepreneurial Organiæations Training Course (IIM, India), Professional Development Program (USA), Special Training for Good Governance (India), Human Resource Planning & Development & IT Skills (India), E-government Procurement (E-GP) Portal as PE, Finance for Non Finance Managers (IBA, DU), সার্ভে অ্যান্ড সেটেলমেন্ট প্রশিক্ষণ, আইন ও প্রশাসন কোর্স, প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণ, ১৬’শ বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স, বিএমএ প্রশিক্ষণ কোর্স, ট্রেজারি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নিজ মেধাকে শানিত করে কর্মজীবনের প্রতিটি ধাপেই সাফল্য অর্জনে সক্ষম হন।
ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান বহুমাত্রিক মেধার স্বাক্ষর রেখে বাংলাদেশের উপন্যাসে ভূমি ও মানুষ (গবেষণা গ্রন্থ), সাহিত্য গবেষণা : বিষয় ও কৌশল (গবেষণা পদ্ধতি বিষয়ক গ্রন্থ), প্রাতিস্বিক অনুভব (কাব্য গ্রন্থ), অনন্ত স্পন্দন (কাব্য গ্রন্থ) ও এক পাতার গল্প (গল্প গ্রন্থ) রচনা করে প্রশংসিত হন। সাহিত্য ও গবেষণায় অবদান রাখায় তিনি মহাকবি মধুসূদন পদক-২০১০, পরিবেশ উন্নয়নে ভূমিকা রাখার জন্য জাতীয় পরিবেশ পদক-২০১৭ লাভ করেন। উদ্ভানীমূলক ডিজিটাল সেবায় অবদানের জন্য ২০১৬ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সাংগঠনিকভাবে সরকারের দেয়া ৩টি ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড অর্জন এবং ২০২৩ সালে শুদ্ধাচার পুরস্কার লাভ করেছেন।
ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাদীপ্ত পরিবারের সন্তান। ৩ ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম গাজী মো. আখতারুজ্জামান, শহীদ গাজী মো. আহাদুজ্জামান ও গাজী মো. আফতাবুজ্জামান। গাজী মো. আহাদুজ্জামান মহান মুক্তিযুদ্ধে ১১ নম্বর সেক্টরে সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে শাহাদৎবরণ করেন।
বিআলো/তুরাগ