রংপুরে ছোট মাছ, দেশি ফল ও সবজি খাওয়ায় কমছে অপুষ্টি
নিজস্ব প্রতিবেদক: গ্রামে উৎপাদিত সবজি, দেশি ফল ও পুষ্টিগুণে ভরপুর ছোট মাছ নিয়মিত খাওয়ার ফলে রংপুর অঞ্চলে শিশু, গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারীদের মধ্যে অপুষ্টির হার দৃশ্যমানভাবে কমে আসছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, গরিব ও গ্রামীণ অঞ্চলের গর্ভবতী নারী, স্তন্যদানকারী মা, কিশোর-কিশোরী ও শিশুর অপুষ্টি দেশের মাতৃমৃত্যু, নবজাতক ও শিশু মৃত্যুর অন্যতম কারণ।
স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সবজি, দেশি ফল এবং মলা, দারকিনা, ঢেলা মাছের মতো ছোট মাছ নিয়মিত খেলে শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সহজে পূরণ হয়। এতে স্থায়ী অন্ধত্ব ও অন্যান্য অপুষ্টিজনিত রোগ প্রতিরোধ সম্ভব হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
রংপুর বিভাগের প্রাক্তন স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েরা অপুষ্টিতে ভুগলে শিশুর মস্তিষ্ক, অঙ্গ ও প্রতিভার বিকাশ ব্যাহত হয়। তাই নিয়মিত স্থানীয় সবজি, ফল ও ছোট মাছ খাওয়াটা খুবই জরুরি।
তিনি আরও জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রংপুর অঞ্চলের নারী ও শিশুর মধ্যে এসব খাবারের গ্রহণ বাড়ায় অপুষ্টির সমস্যা অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে।
স্থানীয় চিকিৎসক ডা. মফিজুল ইসলাম মন্টু বলেন, গ্রামের গর্ভবতী নারী, স্তন্যদানকারী মা ও শিশুদের অপুষ্টি একসময় বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। তবে এখন সবজি, ফল ও ছোট মাছ খাওয়ার প্রবণতা বাড়ায় পরিস্থিতির উন্নয়ন হয়েছে।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনোকলজি বিশেষজ্ঞ ডা. ইয়াসমিনা বলেন, সবজি, ফল ও ছোট মাছ খেলে নিরাপদ গর্ভকাল, সুস্থ নবজাতকের জন্ম এবং স্তন্যদানকারী নারীর দুধ উৎপাদন নিশ্চিত হয়।
শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, মলা, দারকিনা, ঢেলা মাছসহ দেশীয় ফল ও সবজি লোহা, ফলিক অ্যাসিডসহ প্রয়োজনীয় ভিটামিন সরবরাহ করে। এসব পুষ্টি উপাদান শিশুদের মস্তিষ্ক ও প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তিনি আরও যোগ করেন, অনেকেই খাদ্যতালিকায় ছোট মাছ রাখেন না, অথচ এগুলোই শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও মায়ের স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে উপকারী খাবার।
রংপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান তালুকদার জানান, জলাশয় কমলেও পুকুর, খাল ও ধানের জমিতে ছোট মাছের উৎপাদন বেড়েছে। তাই গ্রামের মানুষ এখন সহজেই এসব পুষ্টিগুণে ভরপুর মাছ খেতে পারছে।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, সবজি ও ফলের উৎপাদন এবং খাওয়ার অভ্যাস—দুটোই বেড়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে সাধারণ মানুষের পুষ্টি অবস্থার ওপর।
বিআলো/এফএইচএস



