রাজধানীতে পাগলা কুকুরের উপদ্রব: নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবনে ভয়ের ছায়া
রাস্তার কুকুরের দলবদ্ধ আক্রমণে আতঙ্ক
স্কুলগামী শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা সবচেয়ে ঝুঁকিতে
স্থানীয়দের অভিজ্ঞতা: রাস্তায় হাঁটাও এখন ভয়ের
রাস্তায় হাঁটতে গেলেই হঠাৎ ঘেউ ঘেউ শব্দে পেছন ফিরে তাকাতে হয়। মুহূর্তের মধ্যে কয়েকটি কুকুর দলবদ্ধ হয়ে ছুটে আসে। শিশু, বৃদ্ধ বা সাধারণ পথচারী—কেউই নিরাপদ নয়। রাজধানীর বিভিন্ন মহল্লায় এমন দৃশ্য এখন নিত্যদিনের বাস্তবতা। ভ্যাকসিনবিহীন ও রোগাক্রান্ত এসব কুকুরের দৌরাত্ম্য জনজীবনে তৈরি করেছে নতুন এক ভয়ের পরিবেশ।
রাজধানীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় আবারও বেড়ে গেছে পাগলা কুকুরের উপদ্রব। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও কুকুরের কামড়ে আহত হচ্ছে মানুষ। কেউ একা আবার কেউ দল বেঁধে হঠাৎ পথচারী, সাইকেল, রিকশা বা মোটরসাইকেল আরোহীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। এতে শিশু, নারী ও বয়োবৃদ্ধদের মধ্যে আতঙ্ক আরও বেড়ে গেছে।
মিরপুর, মোহাম্মদপুর, রামপুরা, বনানী, খিলগাঁও, যাত্রাবাড়ি সহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, দিন-রাতে রাস্তায় বের হওয়া এখন ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে যেসব স্কুলপড়ুয়া শিশুকে হাঁটিয়ে বা রিকশায় করে যাতায়াত করতে হয়– তাদের নিরাপত্তা নিয়ে অভিভাবকদের দুশ্চিন্তা চরমে।
কদমতলী থানার মদিনাবাগ এলাকার বাসিন্দা তরিকুল ইসলাম বলেন, “প্রতিদিন সকালে মেয়েকে মাদরাসায় নিয়ে যাই। কিন্তু পথে দুই-তিনটা কুকুর দলবদ্ধ হয়ে ঘেউ ঘেউ করে তাড়া দেয়। মাঝে মাঝে ভাবি, আর বের হবো না।”
বিশেষজ্ঞরা জানান, রাস্তায় থাকা অধিকাংশ কুকুর ভ্যাকসিনবিহীন। তাদের মধ্যে অনেকেই জলাতঙ্ক (Rabies) ভাইরাস বহন করতে পারে, যা মানুষের জন্য প্রাণঘাতী। সময়মতো টিকাদান ও জন্মনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি চালু না থাকায় সমস্যা আরও জটিল হচ্ছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রাণিসম্পদ বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “বছরজুড়ে টিকাদান কর্মসূচি চালু থাকলেও পর্যাপ্ত জনবল ও বাজেটের অভাবে তা স্থায়ীভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। অনেক এলাকাই টিকার আওতায় আসে না।”
অন্যদিকে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা বলছে—মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেও রাস্তার কুকুরগুলোর টিকা ও পরিচর্যা জরুরি। এতে যেমন জলাতঙ্কের ঝুঁকি কমবে, তেমনি প্রাণিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় ভারসাম্য তৈরি হবে।
কুকুর কামড়ালে করণীয়: (জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ:)
কামড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতস্থান ১৫ মিনিট সাবান ও পানি দিয়ে ধুতে হবে। দ্রুত নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে এন্টি-র্যাবিস ভ্যাকসিন নিতে হবে। দেরি করা বা ঘরোয়া চিকিৎসায় নির্ভর করা জীবনের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
বিশেষজ্ঞসহ সচেতন মহল মনে করছে—দীর্ঘমেয়াদি নির্বীজন ও টিকাদান কর্মসূচি স্থায়ীভাবে চালু না হলে রাজধানীর কুকুর-মানুষ দ্বন্দ্ব আরও ভয়ানক রূপ নিতে পারে।
রাকিব হোসেন মিলন
লেখক ও সাংবাদিক
বিআলো/তুরাগ



