শবে কদরের ফজিলত, আলামত ও আমল লেখক, মুহাম্মদ কায়ছার উদ্দীন আল-মালেকী
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ শবে কদর মুসলিম জাতির জন্য একটি বরকতময় ও পূণ্যময় রাত। ‘শবে কদর’ শব্দটি ফারসি। শব অর্থ- রাত বা রজনী আর কদর অর্থ- সম্মান, মর্যাদা, গুণাগুণ, সম্ভাবনা, ভাগ্য ইত্যাদি। শবে কদর অর্থ- মর্যাদার রাত বা ভাগ্যরজনীর রাত।
শবে কদরের আরবি হলো- লাইলাতুল কদর (সম্মানিত রাত)। যে রাতে পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে, সে রাতই লাইলাতুল কদর। আল্লাহ তা’আলা বলেন,‘‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাজিল করেছি মর্যাদাপূর্ণ কদর রজনীতে। হে রাসূল (দ.) আপনি কি জানেন, মহিমাময় কদর রজনী কী? মহিমান্বিত কদর রজনী হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম”।বাংলাদেশ সহ অসংখ্য মুসলিম দেশ নানান কর্মসূচির মাধ্যমেএ রাতটি উদযাপন করে থাকেন । মর্যাদা ও গুরুত্বের দিক দিয়ে এ রাতহাজার বছরের চেয়েও উত্তম; অর্থাৎ একজন মানুষ ৮৩ বছর ৪ মাস ইবাদাত করে আল্লাহর পক্ষ হতে যা হাসিল করতে পারে; এ রাতেই তা হাসিল করতে পারে।
এ মাসে পবিত্র মহাগ্রন্থ আল-কুরআন; লাওহে মাহফুজ থেকে শেষ আসমানে অবতীর্ণ হয়। সেখান হতে রাসূল (দ.)’র ৬৩ বছর হায়াতে জিন্দেগীতে পর্যায়ক্রমে ও প্রয়োজনানুপাতে ওহীর মাধ্যমে নাযিল হয়। এ রাতে পবিত্র কুরআন নাযিলের বিষয়টি সুরা কদর, সুরা দুখান ও সুরা বাকারার আয়াতাংশে উল্লেখ করা হয়েছে। এ রাতেই হায়াৎ, মাউত ও রিযিক সহ মানুষের যাবতীয় বিষয় পুননির্ধারণ করা হয়। যদিও ভাগ্য বা তাকদীর পূর্বনির্ধারিত। আল্লাহ তা’আলা অতীব ক্ষমাশীল ও দয়াবান; একারণেই আল্লাহ তা’আলা এ রাতকে বিশেষ মর্যাদা দান করেছেন। যাতে করে আল্লাহ তা’আলা বান্দার গুনাহ মাফ করতে পারেন; সাথেসাথে হায়াৎ ও রিযিক বৃদ্ধি করতে পারেন।
রমজান মাসের শেষ দশকের ২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯ বিজোড় সংখ্যার যেকোন একটিতে শবে কদর অনুসন্ধান করা জরুরী। তবে ২৭ ই রমজান শবে কদর হওয়ার ব্যাপারে একাধিক হাদীসের বর্ণনা পাওয়া যায়। প্রত্যেক জিনিস চেনার জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে; অনুরূপে- এ রাতকে সনাক্ত করার জন্যও কিছু বৈশিষ্ট্য আছে; যা হাদীসের বর্ণনাতে পাওয়া যায়। যথা- (১) কদর রাত গভীর অন্ধকারে ছেয়ে যাবে না (২)কদর রাত নাতিশীতোষ্ণ হবে (৩) কদর রাতে মৃদু হাওয়া বা বাতাস প্রবাহিত হতে থাকবে (৪) কদর রাতেমানুষ ইবাদাত করে স্বাচ্ছন্দ্য ভোধ করবে (৫) কদর রাতেবৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে (৬) সকালে হালকা আলোকরশ্মিসহ সূর্যোদয় হবে; যা পূর্ণিমার চাঁদের মত (সহীহ ইবনু খুযাইমাহ: ২১৯০; বুখারী: ২০২১; মুসলিম: ৭৬২)। আল্লাহ তা’আলা এ রাতে হজরত জিবরাইল (আ.) সহ অসংখ্য ফেরেশতাদের প্রথম আসমানে প্রেরণ করেন; তৎপর বান্দার চাওয়া পাওয়া লিপিবদ্ধ করার নির্দেশ প্রদান করেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের নিয়্যতে কদরের রাতে ইবাদত করবে; তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে” (বুখারি শরীফ)। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.)-রাসুলুল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আমি যদি লাইলাতুল কদর সম্পর্কে জানতে পারি এবং রাতে আল্লাহর কাছে কী দোয়া করবো? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘‘তুমি বলবে, আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি; (বঙ্গানুবাদ- হে আল্লাহ! আপনি মহানুভব ক্ষমাশীল এবং ক্ষমা করতে পছন্দ করেন, অতএব আমাকে ক্ষমা করুন), (ইবনে মাজাহ, আস-সিলসিলাতুস সহিহাহ, নাসিরুদ্দিন আলবানী)। সুরা দুখানের ৪ নং আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘‘ফিহা ইউফরাকু কুল্লু আমরিন হাকিম’’ বঙ্গানুবাদ- এই রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অনুমোদিত হয় বা স্থিরকৃত হয়। অর্থাৎ লাউহে মাহফূয হতে লেখার কাজে নিয়োজিত থাকা ফেরেশতাদের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। সারা বছরের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেমন- বয়স, জীবিকা এবং পরবর্তী বছর পর্যন্ত যা ঘটবে ইত্যাদি বিষয়ে সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়।
ইবনে উমার (রা.), মুজাহিদ (রহ.), আবূ মালিক (রহ.), যাহহাক (রহ.) প্রমুখ এ আয়াতের এরূপ ব্যাখ্যা করেছেন। শবে কদরে যেসব আমল করা যায়: নফল নামাজ তাহিয়্যাতুল অজু, দুখুলিল মাসজিদ, আউওয়াবিন, তাহাজ্জুত, সালাতুত তাসবিহ, তাওবার নামাজ, সালাতুল হাজাত, সালাতুশ শোকর ও অন্যান্য নফল ইত্যাদি পড়া। নামাজে ক্বেরাত ও রুকু-সিজদা দীর্ঘ করা। কোরআন শরিফের সূরা তেলাওয়াত তন্মধ্যে- সুরা কদর, সুরা দুখান, সুরা মুজাম্মিল, সুরা মুদ্দাচ্ছির, ইয়া-সিন, সুরা ত্ব-হা, সুরা আর রহমান ও অন্যান্য সুরা তিলাওয়াত করা। দরুদ শরিফ বেশি বেশি পড়া।তাওবা-ইস্তিগফার অধিক পরিমাণে করা। দোয়া কালাম, তাসবিহ তাহলিল, জিকির আসকার ইত্যাদি করা। কবর জিয়ারত করা। নিজের জন্য, পিতা-মাতার জন্য, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও সব মুমিন মুসলমানের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করা, দেশ ও জাতির কল্যাণে এবং বিশ্ববাসীর মুক্তি কামনা করে দোয়া করা অতীব সাওয়াবের কাজ। হে আল্লাহ! এ মহিমান্বিত রজনীতে আপনার অজস্র কল্যাণ দিয়ে ধন্য করুন।
বিআলো/তুরাগ