শান্তি সমাবেশে গিয়ে হয়রানির শিকার জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্সরা
নিজস্ব প্রতিবেদক: গত ২৩ মে ২০২৫ কিছু পত্রিকাতে ‘স্বানাপ সিন্ডিকেটে বন্দি জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতাল’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর ভিক্টিমদের পক্ষ থেকে অভিযোগ আসে এটি একটি মিথ্যা সংবাদ।
অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনাটি নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে জানা যায়, গত ৩ আগস্ট ২০২৪ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের চাপের মুখে শান্তি সমাবেশে যেতে বাধ্য হয়েছিল জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কিছু নিরীহ সিনিয়র স্টাফ নার্স। এই নার্সদের ফ্যাসিবাদ বলে আখ্যায়িত করা হলেও বাস্তবে এরা কেউই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কোনো প্রকার দলীয় রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিল না এবং বর্তমানেও নেই।
কিন্তু জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালেরই কিছু স্বার্থপরায়ন ব্যক্তি যাদের মধ্যে কেউ কেউ সেদিন ওই শান্তি সমাবেশে উপস্থিত ছিল। কিন্তু ছবিতে তারা নেই, যার সুযোগ নিয়ে তারা পূর্বে ফ্যাসিবাদ দলের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও বর্তমানে দল পরিবর্তন করে নিজেদের জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সমন্বয়ক বলে দাবি করছে।
এছাড়াও আগস্টের গণঅভূত্থানের পর নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর থেকে হাসপাতালের প্রত্যেক ওয়ার্ডের ওয়ার্ড ইনচার্জ যাদের দুই বছর পূর্ণ হয়েছে তাদের চার্জ পরিবর্তন করার আদেশ আসে এবং কর্তৃপক্ষ সকল ওয়ার্ড ইনচার্জ পরিবর্তন করে। সকল ওয়ার্ড ইনচার্জ কর্তৃপক্ষের আদেশ মেনে নেয় কিন্তু গুটি কয়েক ওয়ার্ড ইনচার্জ যারা পূর্বে ফ্যাসিবাদের সঙ্গে যুক্ত ছিল এবং পূর্বে নানারকম রাজনৈতিক সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছে, তারা তাদের দল পাল্টে বর্তমান ক্ষমতাবানদের প্রভাব খাটিয়ে, কেউ তার স্বামীর ক্ষমতা দেখিয়ে এতদিন পর্যন্ত তাদের ওয়ার্ড ইনচার্জ পদ ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিল।
কিন্তু সম্প্রতি তাদেরকে চার্জ থেকে অপসারন করা হয়। যার রেশ ধরে পর্দার আড়ালে থাকা এই কুচক্রটি ছবিতে থাকা নিরীহ সিনিয়র স্টাফ নার্সদের এই ছবির মাধ্যমে নানাভাবে হয়রানি করে যাচ্ছে। তাদের ছবি দিয়ে হাসপাতালের দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার লাগিয়ে, বিভিন্ন পত্রিকায় তিলকে তাল বানিয়ে উপস্থাপন করে এবং বদলির ভয় দেখিয়ে এদেরকে প্রতিনিয়ত হয়রানি করে যাচ্ছে।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের বর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্ত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ওই শান্তি সমাবেশ সম্পর্কে অবগত আছেন এবং তারা সবকিছু পর্যালোচনা করে বুঝতে পেরেছেন যে, এই সকল সিনিয়র স্টাফ নার্সরা তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত’ কর্মকর্তাদের চাপের মুখে শান্তি সমাবেশে যেতে বাধ্য হয়েছিল। তাই বর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এই ব্যাপার নিয়ে কাউকে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন এবং কোন প্রকার বৈষম্য সৃষ্টি না করে সবাইকে মিলে মিশে কাজ করার কথা বলেছেন।
কারণ ছবিতে থাকা সিনিয়র স্টাফ নার্সরা সম্পূর্ণ নির্দোষ। এরপরও একটি কুচক্র এই নার্সদের ক্ষতি করার জন্য, এই নার্সরা ঠিকমত দায়িত্ব পালন করে না, নিয়মিত কর্মস্থলে উপস্থিত হয় না ইত্যাদি মিথ্যাচার করে যাচ্ছে কিন্তু বাস্তবে ঘটনা উল্টো বরং যারা এই অভিযোগ করেছে তারাই ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে নানা রকম অনিয়ম করে বেরাচ্ছে এবং ভয়-ভীতি দেখিয়ে ছবিতে থাকা নিরীহ সিনিয়র স্টাফ নার্সদের কোনঠাসা করে রেখেছে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে বর্তমানে স্বানাপ নামে কোন সংগঠনের অস্তিত্ত্বই নেই।
উল্লেখ্য, সর্বদাই যে কোন হাসপাতালে ওয়ার্ড ইনচার্জ এর দায়িত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে নার্সিং অধিদপ্তর এর নির্দেশনা মোতাবেক একজন ওয়ার্ড ইনচার্জ পরিবর্তন করা হয়। এবং একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স দুই বছরের বেশি দায়িত্বে থাকতে পারবে না। সেই আলোকে দুই বছর পরপর ওয়ার্ডের ইনচার্জ পরিবর্তন করা হয়। সেবা তত্ত্বাবধায়ক যোগ্যতা সম্পন্ন সিনিয়র স্টাফ নার্সদের মধ্য থেকে ওয়ার্ড ইনচার্জ মনোনয়ন করেন এবং সেই মোতাবেক ওয়ার্ডের ইনচার্জ এর দায়িত্ব প্রদান করা হয়। কাজেই কোন সুবিধা নিয়ে বা অন্য কোনোভাবে ওয়ার্ড ইনচার্জ মনোনয়ন করার সুযোগ জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে নেই।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের যে সকল নিরীহ সিনিয়র স্টাফ নার্সদের একটি ছবির উপর ভিত্তি করে ফ্যাসিবাদ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে প্রকৃত পক্ষে তারা ফ্যাসিবাদ নয়, তারা মূলত পর্দার আড়ালে থাকা কিছু বহুরূপী, মুখোশদারী, সুবিধাবাদী ও ফ্যাসিবাদীদের প্রতিহিংসার শিকার।
বিআলো/তুরাগ