শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে অ্যাড্রেস না করে বিকশিত রাষ্ট্র গড়ে তোলা সম্ভব নয়: গণশিক্ষা উপদেষ্টা
নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডাঃ বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছেন, শিশুকে সাক্ষর করে তোলা প্রকৃত অর্থে তাকে সক্ষম করে তোলা। তাহলে এক ধরনের সোশ্যাল মবিলিটি হবে। এটা ঠিক, বেশির ভাগ সময় হয়তো সে তারটাই বুঝবে কিন্তু যখন তার পথ অবরুদ্ধ হবে, তখন সে বাধ্য হবে সবার জন্য আপগ্রেড করতে।
এবার আন্দোলন শুরু হয়েছিল ‘কোটা’ নিয়ে। সেটি কিন্তু এক অর্থে অনেকটা সংকীর্ণ একটা আন্দোলন। সরকারি চাকরিতে কোটা! সরকারি চাকরি কতগুলি আছে? কোটায় কয়জন সুবিধা পাবে? টোটাল পদতো আর বেড়ে গেল না! কিন্তু এটা ঠিক যারা আন্দোলন করলেন তাদেরকে বাধ্য করল বৃহত্তর পরিপ্রেক্ষিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য। অন্য মানুষ আন্দোলনে যোগ দিলেন কেন? তারা কিন্তু কোটার জন্য আন্দোলনে যোগ দেন নাই। তারা বৃহত্তর প্রেক্ষিতে যোগ দিলেন। কারণ তারা সেই শাসনে অতিষ্ঠ ছিলেন, অসন্তুষ্ট ছিলেন। সেজন্যই যোগ দিলেন। তারা মনে করলেন, আমাদের এই অবস্থার পরিবর্তন করবে। আমরাও একটু শান্তিপূর্ণ সুখী জীবন যাপন করতে পারবো। এ জন্যই মানুষ আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন।
আমরা যদি আমাদের শিশুদের সক্ষম করে তুলতে পারি-দেখা যাবে সেটা সামাজিক পরিবর্তনের সহায়ক হয়ে উঠবে। যতক্ষণ না আমরা আমাদের এই বৈষম্য কমিয়ে আনতে না পারছি, যতক্ষণ না আমরা আমাদের আদর্শ যেটা স্বাধীনতার প্রোক্লেমেনেশনে আছে, সংবিধানে রয়েছে সবার জন্য মৌলিক চাহিদাগুলো অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা যতক্ষণ পর্যন্ত নিশ্চিত না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা দেশে দীর্ঘদিনের জন্য শান্তি আশা করতে পারিনা। ফলে আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য হচ্ছে নিজের অবস্থান থেকে সেটার জন্য কাজ করে যাওয়া। আমাদের নিজেদের স্বার্থেই সেটা প্রয়োজন।
উপদেষ্টা আজ ঢাকায় মিরপুরস্থ প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে (পিটিআই) মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০২৫ উদযাপন উপলক্ষ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মোঃ মাসুদ রানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ইউনিটের মহাপরিচালক এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বাজেট ও অডিট) মোঃ সাখাওয়াৎ হোসেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মোহাম্মদ শামসুজ্জামান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পিইডিপি-৪) আতিকুর রহমান, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচালক (দায়িত্বপ্রাপ্ত) দেবব্রত চক্রবর্তী, শিশু কল্যাণ ট্রাস্টের পরিচালক সুরাইয়া খান এবং পিটিআই ইন্সট্রাক্টর আবু বকর সিদ্দিক।
উপদেষ্টা চীনের উদাহরণ দিয়ে বলেন, এত বিশাল জনগোষ্ঠীর একটি দেশ তারা আজকে অর্থনীতিতে এত উন্নয়ন করছে; সেটার পেছনে দুটি বিষয়কে তারা গুরুত্ব দিয়েছে। একটি হলো শিক্ষা আরেকটি হলো মানুষের স্বাস্থ্য। এ দুটি বিষয় একটি গোষ্ঠীর না। এগুলো রাষ্ট্রের সম্পদ। জনগণই সম্পদ। জনগণ মানে কি? সে ফিজিক্যালি ফিট এবং সে শিক্ষিত। যদি এমন জনগোষ্ঠী পাই, যে শারীরিকভাবে সুস্থ এবং শিক্ষিত এবং দক্ষ, তাহলে সে রাষ্ট্র কখনোই পিছিয়ে থাকতে পারে না- চীন এটার একটি প্রমাণ।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য এ দুটিকে অ্যাড্রেস না করে কখনোই একটি সুষম বিকশিত রাষ্ট্র গড়ে তুলতে পারবনা। স্বাস্থ্য এমন একটি প্রসঙ্গ যে এটা কখনও আমার চয়েসের প্রসঙ্গ হতে পারে না, এটা একটা অধিকারের প্রসঙ্গ হওয়া উচিত। তদ্রুপ শিক্ষাও এমন একটি প্রসঙ্গ যেটা সার্বজনীন হওয়া উচিত এবং এটা অধিকারের প্রসঙ্গ হওয়া উচিত। এ বিষয়গুলোর স্বীকৃতি আমাদের সংবিধান রয়েছে। ফলে আমাদের কার্যকর করতে হবে। সত্যিই যদি আমরা আমাদের দেশকে একটি সুখী এবং সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই তাহলে এর কোন বিকল্প নাই।
স্বাধীনতা দিবসের স্বাধীনতার শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এবং স্বাধীনতার চেতনাকে সমুজ্জল রাখার জন্য বার বার যারা আত্ম উৎসর্গ করেছেন তাদের সবার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা সংকল্পবদ্ধ হই- আমার যেটুকু দায়িত্ব আছে, সেটুকু পালন করি। আখেরে এটা আমার জন্যই লাভ। আর দেশ ছেড়ে যদি অন্য কোথাও চলে যেতে চাই, সেটা ভিন্ন কথা। আর যদি দেশে থাকতে চাই সেটা আমর জন্যই লাভ।
বিআলো/তুরাগ