শিশুদের নিরাপত্তাহীনতা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি: মাগুরার আছিয়ার ঘটনা আমাদের কী শেখায়?
মাগুরার ৮ বছরের শিশু আছিয়ার ওপর হওয়া পাশবিক নির্যাতনের ঘটনা আমাদের সমাজের এক ভয়ংকর বাস্তবতাকে সামনে নিয়ে এসেছে। একটি অবুঝ শিশুর ওপর এমন বর্বরতা আমাদের সভ্যতা, ন্যায়বিচার ও নৈতিকতার প্রশ্নকে নতুন করে সামনে তুলে ধরেছে। আমরা কি সত্যিই শিশুদের জন্য নিরাপদ একটি সমাজ গড়ে তুলতে পেরেছি? নাকি আমরা এমন এক বিচারহীন সংস্কৃতির শিকার, যেখানে নির্যাতনকারীরা নিশ্চিতভাবে জানে যে তারা পার পেয়ে যাবে?
শিশুরা কতটা নিরাপদ?
বাংলাদেশের সংবিধান ও শিশু অধিকার সনদ অনুযায়ী, প্রতিটি শিশুর নিরাপদ জীবনযাপনের অধিকার রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ৫-৭টি শিশু ধর্ষণের শিকার হচ্ছে (সূত্র: আইন ও সালিশ কেন্দ্র)।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপরাধীরা পার পেয়ে যায়, কারণ ভুক্তভোগী পরিবার চাপের মুখে মামলা তুলে নেয় বা বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘ হয়। আছিয়ার ঘটনা তারই একটি নির্মম উদাহরণ।
বিচারহীনতার সংস্কৃতি অপরাধীদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলছে?
আছিয়ার ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে একদম নির্ভয়ে, কারণ অভিযুক্তরা জানে, আমাদের বিচার ব্যবস্থা ধীরগতির, আর সামাজিক প্রভাবশালীরা অপরাধীদের রক্ষা করতে উঠে পড়ে লাগে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ অনুযায়ী, এই অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, কিন্তু বাস্তবে খুব কমসংখ্যক অপরাধী সর্বোচ্চ সাজা ভোগ করে।
আমরা কেন ব্যর্থ হচ্ছি?
১. বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা: একটি মামলার রায় পেতে গড়ে ৫-৭ বছর লেগে যায়, যার ফলে ভুক্তভোগী পরিবার আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে পারে না।
২. সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব: অনেক ক্ষেত্রে অপরাধীরা ক্ষমতাবান হলে, তাদের শাস্তি হয় না।
৩. ভুক্তভোগীর পরিবারের নিরাপত্তাহীনতা: মামলা করার পর পরিবারকে বিভিন্নভাবে ভয় দেখানো হয়।
সমাধান কী?
★ দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের কার্যকারিতা নিশ্চিত করা
★ নির্যাতিত শিশুর পরিবারকে রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা দেওয়া
★ স্কুল ও সামাজিক পর্যায়ে শিশুদের নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি
★ আইনের কঠোর প্রয়োগ ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা
মাগুরার আছিয়ার ঘটনা কেবল একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এটি আমাদের সমাজের চিত্র। যদি আমরা এখনই ব্যবস্থা না নিই, তাহলে আরও অনেক আছিয়া এভাবেই হারিয়ে যাবে। এখন সময় বিচারহীনতার সংস্কৃতি ভাঙার, শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়ার। আমাদের নীরবতার মানে যেন আর কোনো শিশুর মৃত্যু না হয়।
লেখক: এফ এইচ সবুজ, (পরিবেশ কর্মী)
বিআলো/তুরাগ