শেখ হাসিনা দেশ বিক্রি করে না রক্ষা করে
কাঞ্চন কুমার দে: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা খুলে দেওয়ায় দেশের মানুষই সবচেয়ে বেশি লাভবান হাচ্ছে রেল যেগুলো বন্ধ হিল আমরা সেগুলো আস্তে আস্তে খুলে দিচ্ছি। তাতে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ হচ্ছে। ওই অঞ্চদের মানুষগুলো উপকৃত হচ্ছে। তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার সুযোগ হচ্ছে। যেসব জিনিস আমাদের দেশে হয় না, সেগুলো আনার সুযোগ হচ্ছে। অর্থনীতিতে এটা বিরাট অবদান রেখে যাচ্ছে।
প্রধামন্ত্রী আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভারত সফর নিয়ে গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই ভারত সফর নিয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফলফুল কামে সেলিম, কাজী জাফরউল্লাহ, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানও উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলন পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান। ভারতের সঙ্গে রেল যোগাযেপ চুক্তি ও দেশ বিক্রি করার অভিযোগ নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আমার প্রশ্ন, দেশ বিক্রির ওজনটা কিনে মাপছে? কোনো কিছু বিক্রি হলে অবশ্যই তা ওজন করতে হয়। তো ওজন মাপা হয় না? তো কিসে মেপে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রিটা হয় কীভাবে? তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ। মুক্তিযুদ্ধ করে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। যারা এই সমালোচনা করে তাদের জানা উচিত, সারাবিশ্বে একটি মাত্র মিত্র শক্তি
যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, নিজেদের রক্ত করিয়ে এই দেশ স্বাধীন করে দিয়েছে। আমাদের সবভমুক্তিযোদ্ধার সেখানে ট্রেনিং পেয়েছে। বিশ্বেযারাই কোনো যুদ্ধে মিত্র শক্তির সহযোগিতা পেয়েছে, তারা কিন্তু সেই দেশ ছেড়ে কোনোদিন ফেরত যায়নি। এখনো জাপানে আমেরিকান সৈন্য, জার্মানিতে রাশিয়ান সৈন্য আছে। এখানে ভারত ব্যতিক্রম। তারা মিত্র শক্তি হিসেবে আমাদের পাশে যুদ্ধ করে এসেছে। যখনই জাতির পিতা চেয়েছেন ভারত তাদের সৈন্য দেশে ফেরত নিয়ে গেছে। তারা যুদ্ধের সরঞ্জাম সবকিছু দিয়েই এখানে যুদ্ধে এসেছিল। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সারেন্ডার করেছিল তাদের কাছে। কিন্তু আমরা স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র পেয়েছি। কারণ তারা ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করেছে। এরপরেও যারা কথা বলে যে, ভারতের কাছে বিক্রি হয়ে যাবে, সেই বিক্রিটা হয়। কীভাবে? সেটাই তো আমার প্রশ্ন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ। যত ছোট হোক, এটা আমাদের সার্বভৌম দেশ। আর সেই সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও স্বকীয়তা বজায় রেখেই আমরা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেই কাজ করছি। আজকে এই যে অমরা সব যোগাযোগ ব্যবস্থা খুলে দিলাম, সব থেকে বেশি লাভবান তো আমাদের দেশের মানুষ তাদের সাথে যোগাযোগ করতে হয়, যেতে হয়, চিকিৎসার জন্য যায়, পড়াশোনার জন্য যায় বা অন্যান্য কাজে যায়, হাটবাজার করতে যায়, আজমির শরীফে যায়, বিভিন্ন জায়গায় যায়। আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রটা তো আরো উন্মুক্ত হবে। কাজেই এখানে বিক্রি আমরা করি না যারা কথা বলে, তারা বেচার জন্য অথবা ‘ইউজ মি’ মানে ব্যবহার করুন আমাকে এই নিয়ে বসেই থাকে। এটা হলো বাস্তবতা।
শেখ হাসিনা এই দেশকে বিক্রি করে না। কারণ আমরা এই দেশ স্বাধীন করেছি। এটা তাদের মনে রাখা উচিত। আর যে কষ্টটা আমরা ভোগ করেছি, এটা আমরা জানি। যারা বিক্রির কথা বলে, একাত্তরে তারা পাকিস্তানের দালালি করেছে, আর কী করেছে।
নোবেল পুরস্কারে আমার আকাঙ্ক্ষা নেই: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নোবেলের বিভিন্ন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া নিয়ে কোনো ঈর্ষা নেই। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির পর অনেক নোবেলজয়ী আমার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলেন। আমার নোবেলের কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই। তিনি বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস যে কর ফাঁকি দিয়েছেন, তা আদালতে প্রমাণিত। যারা তার পক্ষে নানা কথা বলছেন তাদের কাছে জানতে চাই, কর ফাঁকি দিলে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়?
গণমাধ্যমে ড. ইউনূসকে নিয়ে বিভিন্ন সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি চাইলে ডিবেটে আসতে পারেন। এক্ষেত্রে ডক্টর ইউনুসের পক্ষ অবলম্বনকারী দেশ আমেরিকায় যেভাবে ডিবেট হয় সেভাবেই ডিবেট হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি। সরকারপ্রধান বলেন, ড. ইউনূস রাজনৈতিক দল গঠন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি দল গঠন করতে পারেনি। তিনি যদি গ্রামের মানুষকে এত কিছুই দিয়ে থাকেন, তাহলে তো সেই মানুষগুলো ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা। কই, কেউ তো ঝাঁপিয়ে পড়েনি। তিনি বলেন, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে সরকার মামলা করেনি। বিচারাধীন বিষয় নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। শেখ হাসিনা বলেন, পুরস্কার নিয়ে আমার কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই। এর জন্য লবিস্ট নিয়োগ করার টাকাও নেই আমার। তবে হ্যাঁ, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির পর অনেক নোবেলজয়ী আমার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তিস্তা প্রকল্পে আগ্রহী ভারত-চীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার তিস্তা মহাপরিকল্পনা প্রকল্প বাস্তবায়নে দেশ ও জনগণের জন্য যে প্রস্তাব সবচেয়ে বেশি লাভজনক তা গ্রহণ করবে। তিনি বলেন, আমরা তিস্তা প্রকল্প নিয়েছি। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য চীন ও ভারত আলাদা আলাদা প্রস্তাব দিয়েছে। আমাদের দেশের জনগণের জন্য কোন প্রস্তাবটি অধিক লাভজনক ও উপযোগী হবে সেটাই আমরা গ্রহণ করবো। তিনি বলেন, তিস্তা প্রকল্পের বিষয়ে চীন আমাদের প্রস্তাব দিয়েছে। ভারতও দিয়েছে। আরো প্রস্তাব এসেছে। শেখ হাসিনা বলেন, অবশ্যই আমরা বিবেচনা করবো, কোন প্রস্তাবটি গ্রহণ করলে তা আমার দেশের মানুষের কল্যাণে আসবে সেটাই আমি গ্রহণ করবো। কোন প্রস্তাবটা নিলে কতটুকু ঋণ নিলাম এবং কতটুকু আমাদের পরিশোধ করতে হবে, কতটুকু দিতে পারবো-এসব কিছু বিবেচনা করেইতো আমাদের করতে পরিকল্পনা নিতে হবে।
সরকার প্রধান বলেন, সে ক্ষেত্রে ভারত যেহেতু বলেছে তারা করতে চায় এবং টেকনিক্যাল গ্রুপ বানাবে, তারা অবশ্যই আসবে। আমরা যৌথভাবে সেটা দেখবো। চীন একটা সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে। ভারতও একটা করবে এবং এটার পর আমাদের কাছে যেটা সবচেয়ে বেশি প্রহণযোগ্য ও লাভজনক মনে হবে আমরা সেটাই করবো। শেখ হাসিনা বলেন, যেহেতু ভারতের কাছে আমাদের তিস্তার পানির দাবিটা অনেক দিনের সেক্ষেত্রে ভারত যদি আমাদের তিস্তা প্রকল্পটি করে দেয় তবে আমাদের সব সমস্যারই সামাধান হয়ে যায়। তাহলে সেটাই আমাদের জন্য সবচেয়ে সহজ হলো- আপনারা নিজেরাই বিবেচনা করে দেখেন। তিনি বলেন, কাজেই ভারত যখন এগিয়ে এসেছে আমরা এটাই মনে করি যে ভারতের সঙ্গে যদি আমরা এই তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন করি তাহলে আমার দেশের পানি নিয়ে প্রতিদিন সমস্যায় পড়তে হবে না। আমরা সেই সুবিধাটা পাব।
বিআলো/তুরাগ