শ্রম অধিকার, মালিকপক্ষ ও সরকারের সমন্বয়ে শ্রম আইন সংশোধনী পর্যালোচনা
নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬-এর সাম্প্রতিক পাসকৃত খসড়া সংশোধনী নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করতে সলিডারিটি সেন্টারের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) রাজধানীতে উচ্চপর্যায়ের স্টেকহোল্ডারস মিটিং অনুষ্ঠিত হয়েছে ।
শ্রমিক সংগঠন, মানবাধিকারকর্মী, আইনজীবী, মালিকপক্ষ, শ্রম সংস্কার কমিশন (এলআরসি) সদস্য, সরকারি কর্মকর্তা ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা বৈঠকে অংশ নেন। সভায় সংশোধনী বাস্তবায়নের ইতিবাচক দিকের পাশাপাশি বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাব্য ঘাটতির বিষয় নিয়ে বিস্তারিত মতবিনিময় করা হয়।
সভায় মূল বক্তব্যে সলিডারিটি সেন্টারের কান্ট্রি প্রোগ্রাম ডিরেক্টর একেএম নাসিম বলেন, ইউনিয়ন গঠনে কর্মীসংখ্যা নির্ধারণে এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের ‘স্ল্যাব অ্যাপ্রোচ’ একটি প্রগতিশীল উদ্যোগ হতে পারত। কিন্তু বর্তমান সংশোধনী প্রস্তাবে বেশ কিছু প্রযুক্তিগত অসামঞ্জস্য রয়ে গেছে। যা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় জটিলতা তৈরি করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, খসড়াটি তাত্ত্বিকভাবে ভালো হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর ফাঁকফোকর বের হবে। তাই শুরু থেকেই সম্ভাব্য সমস্যাগুলো বিবেচনায় নেওয়া জরুরি।
এলআরসি সদস্য তাসলিমা আখতার জানান, অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে শ্রমিকদের মতামত যথাযথভাবে বিবেচনা করা হয়নি। তিনি বলেন, টিসিসিতেও একই প্রবণতা দেখা গেছে। তিন বছর পর পর ন্যূনতম মজুরি পুনঃনির্ধারণ একটি অগ্রগতি হলেও বিদেশি ক্রেতাদের জবাবদিহিতা অন্তর্ভুক্ত না হওয়া হতাশাজনক। এলআরসি প্রস্তাবনা সংশোধনীতে যুক্ত না হওয়ায় তিনি তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, অনেক সংশোধনী শ্রমিকবান্ধব হওয়ায় মালিকপক্ষ সম্মত হয়েছে। তবে শিল্পের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার প্রশ্নে তিনি ভারসাম্যপূর্ণ নীতি প্রণয়নের ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, তিন বছর পর পর ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ ভালো তবে আমরা প্রতি বছর মূল্যস্ফীতি অনুযায়ী মজুরি সমন্বয়ের প্রস্তাব দিয়েছি। কয়েক বছর পর একসঙ্গে ৮০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি শিল্পের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শামসুল আলম বৈঠকে বলেন, সংশোধনী প্রণয়নে সকল পক্ষের মতামত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তিনি ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার মাধ্যমে আইন বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, সলিডারিটি সেন্টারের প্রস্তাবিত কাগজ আমরা মন্ত্রণালয়ে আলোচনার জন্য শেয়ার করব।
শ্রম সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, বাংলাদেশ ও ফিলিপাইন শুধু দুই দেশেই শ্রম আইন কোডিফায়েড হওয়ায় কোন অংশে সংশোধনী আনলে অন্য অংশে অসামঞ্জস্য তৈরি হয়। তিনি শ্রম আইনকে সামগ্রিকভাবে বিশ্লেষণ করে অসঙ্গতিগুলো চিহ্নিত করার সুপারিশ করেন।
এছাড়া তিনি বলেন, শ্রম আলোচনা শুধু আরএমজিকেন্দ্রিক হলে চলবে না। বাংলাদেশের সমগ্র শ্রমশক্তিকে বিবেচনায় নিতে হবে।
সভায় অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন পক্ষ মনে করেন, খসড়া সংশোধনী কার্যকর করতে হলে প্রমাণভিত্তিক সুপারিশ, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও নিয়মিত পর্যবেক্ষণ জরুরি। সলিডারিটি সেন্টার বাংলাদেশে শ্রম অধিকার উন্নয়নে ত্রিপক্ষীয় সংলাপ জোরদারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
বিআলো/এফএইচএস



