সংঘর্ষে আহত বাঘা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের মৃত্যু
নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজশাহীর বাঘায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে পৌর মেয়রের সমর্থকদের হামলায় আহত বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল (৫৫) মারা গেছেন।
২৬ জুন, বুধবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
আইসিইউ ইনচার্জ ডা. গোলাম মোস্তফা বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মাথায় গুরুতর জখম নিয়ে ২২ জুন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল আশরাফুল ইসলাম বাবুলকে। ২৩ জুন চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচার করেন। এরপর থেকে আইসিইউতে ছিলেন বাবুল। বুধবার দুপুর থেকে তার অবস্থার অবনতি হতে থাকে। বিকাল ৪টার দিকে তিনি মারা যান।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইউসিইউ ইনচার্জ ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, মাথায় আঘাত পান বাবুল। পরে তার ইনফেকশন হয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানান, গত শনিবার (২২ জুন) সকালে বাঘা পৌর এলাকায় সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলমের গ্রুপের নেতাকর্মীরা মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে। বাঘা পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আক্কাছ আলীর অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির প্রতিবাদে এ মানববন্ধনের ডাক দেন তারা। উপজেলা পরিষদের প্রধান ফটকে আয়োজিত মানববন্ধনে নেতৃত্ব দেন সদ্য সমাপ্ত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১০৬ ভোটে পরাজিত রোকনুজ্জামান রিন্টু ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবলু। উপজেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
অন্যদিকে, সচেতন নাগরিকবৃন্দের ব্যানারে বাঘা সাব রেজিস্টার অফিসের দলিক লেখক সমিতির নামে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ডাক দেয় উপজেলা চেয়ারম্যান লায়েভ উদ্দিন লাভলু সমর্থিত স্থানীয় আওয়ামী লীগের আরেক গ্রুপ। মেয়র আক্কাছ আলীর নেতৃত্বে পৌরসভার সামনে থেকে এ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি অপর গ্রুপের মানববন্ধন অতিক্রমের সময় উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
প্রথম থেকেই পুলিশ সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে অতিরিক্ত পুলিশ এসে প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে টিয়ারগ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। এরপর উপজেলার মধ্যে ফাঁকা মাঠে পড়েছিলেন বাবুল। তাকে পুলিশ সদস্যরা উদ্ধার করেন। গুরুতর আহত বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুলকে ওইদিনই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সংঘর্ষের ঘটনায় পরদিন ২৩ জুন দুপুরে উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহিনুর রহমান বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় বাঘা পৌরসভার মেয়র আক্কাছ আলী, জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পাকুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল মোকাদ্দেসসহ ৪৬ জনের নাম উল্লেখ ও ২০০-৩০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
ওই মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে- জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পাকুড়িয়া ইউপির চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম (৩৪), জেলা ছাত্রলীগের আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক মারুফ হাসান (৩২), চক ছাতারীর গোলাম মোস্তফা (৩৮), বানিয়াপাড়ার মতিউর রহমান (৩০), উত্তর মিলিক বাঘা গ্রামের তরঙ্গকে (২৩) ও নাসির ইসলাম (২৮) এবং জেলা যুবলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক শাহজামাল সরকার।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, শনিবার (২২ জুন) সকাল ১০টার দিকে বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের ডাকে উপজেলা পরিষদের সামনে পৌরসভার দুর্নীতির বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন চলছিল। এ সময় আসামিরা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। সেখানে কয়েকটি পিস্তলের গুলিবর্ষণ করা হয়। আতঙ্কে তারা মানববন্ধন ছেড়ে উপজেলা চত্বরের ভেতরে পালাতে গেলে আসামিরা এলোপাতাড়ি ইটপাটকেল ও পাথর ছোড়েন। এ অবস্থায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম উপজেলা অডিটরিয়ামের সামনে পড়ে গেলে তাকে চায়নিজ কুড়াল দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথার বাঁ পাশে আঘাত করেন আক্কাছ আলী। ২ নম্বর আসামি মেরাজুল ইসলাম তার হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আশরাফুল ইসলামের ঘাড়ে আঘাত করেন। আসামিদের ইটপাটকেল ও পাথরের আঘাতে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের গ্লাস ও কয়েকটি চেয়ার ভাঙচুর করায় আনুমানিক ৪০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়।
এ বিষয়ে বাঘা থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহিনুর রহমান পিন্টু বাদী হয়ে দ্রুতবিচার আইনে একটি মামলা করেন। এ মামলায় ৪৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ২০০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুর রহমান জানান, আগে মারামারি ও সংঘর্ষের মামলা হয়েছিল। এখন সেটি হত্যা মামলায় রূপান্তর হবে। এ পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত অন্যদের গ্রেফতারে পুলিশ তৎপরতা চালাচ্ছে। এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. চিন্ময় কান্তি দাস জানান, বাবুলের লাশ পুলিশ হেফাজতে ময়নাতদন্তের জন্য নেয়া হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এরপর পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জানাজার উদ্যোগ নেয়া হবে।
বিআলো/শিলি