সহায়তার অভাবে বিকশিত হচ্ছে না দেশীয় কসমেটিকস খাত
অর্থনৈতিক প্রতিবেদক: আমদানির বিকল্প ও ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকার পরও দেশীয় কসমেটিকস শিল্পে উল্টো নীতি গ্রহণ রহস্যজনক।কসমেটিকস শিল্পখাতে নীতি সহায়তার পরিবর্তে বাড়তি শুল্ক ও ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এতে নতুন উদ্যোগগুলো আরো বেশি অসম প্রতিযোগীতার মধ্যে পড়ছে বলে মনে করছেন এই খাতের উদ্যোক্তারা।
এদিকে কসমেটিকস শিল্প খাতের গুরুত্ব অনুধাবণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশন এই শিল্পের নীতি প্রণয়নে ৪ দফার জোরালো সুপারিশ করেছে। কিন্তু রহস্যজনক কারনে সহায়তার নীতি গ্রহণ করা হচ্ছে না। সেই সুপারিশ আমলে নেয়া হচ্ছে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই খাতের ব্যাপক গুরুত্ব দিয়ে নীতি সহায়তা দেয়া হচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশে সম্ভাবনাময় এই খাতটিতে উল্টো নীতি গ্রহণ নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের কোন মহলের ভূমিকা রহস্যজনক এবং দেশীয় শিল্প বিরোধী। যার কারনে স্থানীয় বিনিয়োগ প্রবল অসম প্রতিযোগীতা ও ঝুঁকির মুখোমুখি হয়েছে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, কোন কোন মহলের শিল্পায়ন বিরোধী মনোভাব কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে বর্তমান সরকারের যে অগ্রাধিকার নীতি রয়েছে তার পরিপন্থি।
এ খাতের বাণিজ্য সংগঠন এসোসিয়েশন অব স্কিন কেয়ার এন্ড বিউটি প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স বাংলাদেশ (এএসবিএমইবি) এর কার্যকরী সদস্য মো. মনির হোসেন বলেন, এই খাতে এখনই লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে। শুধুমাত্র সরকারের নীতি সহায়তার অভাবে শিল্পের আকার ও ব্যাপকতা আটকে আছে। আমদানি বিকল্প দেশিয় শিল্পের বিকাশ ঘটলে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হয়। কর্মসংস্থান ছাড়াও উপরন্তু, রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যায়। তাই নীতিনির্ধারণে অগ্রাধিকার তালিকায় শীর্ষে থাকা উচিত স্থানীয় বিনিয়োগ সুরক্ষা।
তিনি বলেন, বর্তমানে কতিপয় মানহীন ও ভেজাল পণ্যের ছড়াছড়ির খবর প্রায়শই দেখা যায়। এসব ভেজাল পণ্য ব্যবহার করে ক্রেতারা প্রতারিত হচ্ছেন। পড়ে যাচ্ছেন বড় ধরণের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। তাই স্থানীয় উৎপাদনকে নীতি সহায়তা দিয়ে মানসম্মত পণ্য ক্রেতাদের জন্য সুলভ করা জরুরী।
ট্যারিফ কমিশন তাদের সুপারিশে উল্লেখ করেছে যে, একজন স্থানীয় উৎপাদনকারীকে প্রতি পিসের একক মূল্যের উপর ১০ শতাংশ হারে সম্পুরক শূল্ক প্রদান করতে হয়। যার ফলে স্থানীয় উৎপাদনকারীর উপর সম্পূরক শুল্কের প্রভাব অনেক বেশি। কারণ আমদানিকৃত পণ্যের শুল্কায়ন মূল্যেও চেয়ে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের সম্পূরক শুল্ক আরোপযোগ্য মূল্য অনেক বেশি।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও এনবিইআর এর চেয়ারম্যান প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ বলেন, প্রায় ৩শ’ কোটি ডলারের কসমেটিকস বাজারের শিল্পে বিদ্যমান সম্পুরক শুল্ক ও ভ্যাট স্থানীয় উদ্যোক্তাদের জন্য বৈষম্যের কারণ হবে। কারণ এই শিল্পের বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধির হার সাড়ে ১২ শতাংশ। তাই দেশীয় শিল্পে বিনিয়োগ আকর্ষণে নীতি সহায়তা জরুরী।
বাংলাদেশে কসমেটিকস ও স্কিনকেয়ার সামগ্রীর বার্ষিক বাজার ২১ হাজার কোটি টাকার ওপরে। এই খাত দেশের সম্ভাবনাময় একটি খাত হলেও আমদানী নির্ভর বিদেশি পণ্যের ভিড়ে দেশি কম্পানির পণ্যগুলো অনেকটা চ্যালেঞ্জের মুখে।
দেশীয় পণ্য উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামালের শুল্ক হ্রাস, বিদেশি পণ্য আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধি, অবৈধ পথে বাজারে আসা পণ্য ঠেকানো, নকল পণ্য রোধ ইত্যাদি বিষয়ে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিলে বাংলাদেশে কসমেটিকস শিল্প খাতের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
বিআলো/তুরাগ