সাদিক অ্যাগ্রোকে অগ্রিম দেয়া ১১ লাখ টাকার দাবি ছেড়ে দিলেন ইফাত
নিজস্ব প্রতিবেদক: কোরবানির ঈদের আগে ছাগলকাণ্ডে আলোচিত সাদিক অ্যাগ্রো থেকে ১২ লাখ টাকায় একটি ছাগল, ১১ লাখ টাকায় একটি গরু এবং দুই লাখ টাকার একটি ভুট্টি কেনার জন্য ১১ লাখ টাকা অগ্রিম দিয়েছিলেন ইফাত। সেই অগ্রিম দেয়া টাকার মধ্যে ছাগলের জন্য এক লাখ, গরুর জন্য ৯ লাখ ৫০ হাজার এবং ভুট্টির জন্য ৫০ হাজার টাকা ছিল বলে জানান সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক মোহাম্মদ ইমরান হোসেন।
তবে অগ্রিম ১১ লাখ টাকা দিলেও গত ১৭ জুন মেসেঞ্জারে সাদিক অ্যাগ্রো কর্তৃপক্ষকে ইফাত জানান, ছাগল নিয়ে তিনি বিপদে পড়েছেন। যে কারণে এবার গরু-ছাগল নেবেন না। অগ্রিম দেয়া ১১ লাখ টাকার দাবিও তিনি ছেড়ে দিয়েছেন।
যদিও সাদিক অ্যাগ্রো কর্তৃপক্ষ জানায়, ইফাতের বায়না করা গরু-ছাগল বিক্রি করা হয়নি। অর্থাৎ বায়না দিলেও ইফাত নেননি। আর এভাবে দাবি ছেড়ে দেয়া সমাধান নয়। সে এসে আমাদের সঙ্গে বসতে হবে। যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারলে, তার টাকা ফেরত দেয়া হবে। আর প্রতারণা করলে, আমাদের যে ব্যবাসায়ীক ক্ষতি হয়েছে তার দায়ভার ইফাতকে নিতে হবে।
প্রসঙ্গত, ১৫ লাখ টাকায় ছাগল কিনে এবার ঈদের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হন ইফাত। এর পর থেকে তার বিলাসী জীবনযাপনের নানা তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে। ইফাতের বাবা মতিউর রহমান এনবিআরের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালেরও প্রেসিডেন্ট ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য। । একজন সরকারি চাকরিজীবীর কলেজপড়ুয়া ছেলে কীভাবে এত বিলাসী জীবনযাপন করতে পারেন, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। ফেসবুকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে ইফাতের বাবা তাৎক্ষণিকভাবে ছেলেটি তার নয় বলে দাবি করেন।
তবে ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দীন হাজারী জানান, ইফাত তার মামাতো বোনের ছেলে এবং রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমানই ইফাতের জন্মদাতা পিতা। তিনি হয় তো রাগ করে ছেলেকে অস্বীকার করেছেন। এমনকি মতিউর রহমান ফেনীতে পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে প্রায় আসা-যাওয়া করেন বলেও দাবি করেন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা নিজাম উদ্দীন হাজারী।
অন্যদিকে, ইফাতের পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা জানান, ইফাতের মা শাম্মী আখতার ওরফে শিবু মতিউর রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রী। শাম্মীর বাবার বাড়ি ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামে। শাম্মী ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দীন হাজারীর আত্মীয়।
এদিকে, মা শাম্মী আখতার ও ভাই ইরফানকে নিয়ে দেশত্যাগ করেছেন ছাগলকাণ্ডে আলোচিত তরুণ মুশফিকুর রহমান ইফাত। বুধবার (১৯ জুন) চট্টগ্রাম হয়ে কুয়ালালামপুরের উদ্দেশ্যে দেশত্যাগ করেন তারা। তবে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে গা-ঢাকা দিয়েছেন এনবিআর কর্মকর্তা মতিউরও।
সম্প্রতি ইফাতকে সন্তান হিসেবে বাবার অস্বীকৃতি কারণে পারিবারিক টানাপড়েন চরমে ওঠে। সন্তান ইফাত রাগ-অভিমানে চেষ্টা চালান আত্মহননের। এক পর্যায়ে পরিবারের সম্মিলিত সিদ্ধান্তেই দ্বিতীয়পক্ষের স্ত্রী শাম্মী আখতার শিভলী, ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত ও ইরফান দেশত্যাগ করে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছেন।
শুক্রবার (২১ জুন) রাজধানীর ধানমন্ডির ৮ নম্বর রোডে ৪১/২ নম্বর ইম্পেরিয়াল সুলতানা ভবনের পাঁচতলায় গিয়ে জানা যায়, ইফাতের পরিবার সেখানে নেই। বাসার মূল ফটক বন্ধ, খুলে রাখা হয়েছে নেমপ্লেটও। এই ভবনের পাঁচ তলার পুরো ফ্লোর মতিউর রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতারের নামে কিনে দামি আসবাব দিয়ে সাজানো হয়েছে বলে জানা যায়।
আর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ৭/এ নম্বর রোডের ৩৮৪ নম্বর বাড়িতে ৫ কাঠা আয়তনের প্লটে তৈরি করা সাততলা ভবনের এক ফ্লোরে বাস করেন মতিউর রহমান ও তার প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকি। এই বাড়িতে মতিউর, তার স্ত্রী ও ছেলের ৫টি গাড়ি রাখা। কিন্তু গতকাল এই বাসায় মতিউর রহমানকে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
বিআলো/শিলি