সাবেক ৪১ মন্ত্রী-এমপির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
বিআলো প্রতিবেদক: বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী ৪১ জন মন্ত্রী-এমপির শত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
৪ সেপ্টেম্বর, বুধবার ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ এ নিষেধাজ্ঞা দেন। ৪১ জন মন্ত্রী-এমপির মধ্যে অনেকে বর্তমানে জেলে রয়েছেন। অনেকে পলাতক, আবার অনেকে এরমধ্যে দেশ ছেড়ে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। তবে যারা এখনও গ্রেপ্তার হননি সেই সব মন্ত্রী-এমপি কিংবা তাদের পরিবার যাতে দেশত্যাগ করতে না পারে সেই উদ্যোগ নিয়েছে দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তারা।
দীর্ঘ তালিকার মন্ত্রী-এমপি কিংবা আমলা এবং তাদের পরিবারের সদস্য যাতে বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারে সে কারণে ধাপে ধাপে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
প্রথম ধাপে ১৪ মন্ত্রী-এমপিকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর আরও ২৭ জন মন্ত্রী ও এমপিদের এবং তাদের পরিবারের সদস্যসহ অন্তত ৬০ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞায় কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করেন দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তারা। পৃথক পৃথক তিনটি আবেদনে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিতে চিঠি দেওয়া হয়।
দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে একই দিনই সাবেক ৪১ মন্ত্রী-এমপির দুর্নীতি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর তিনটি পৃথক টিম গঠন করে কমিশন। তিনজন উপপরিচালকের নেতৃত্বে গঠিত ওই টিম ইতোমধ্যে নথিপত্র তলব করে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে চিঠি দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে। পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকজন হেভিয়েট দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ভিআইপিরা যাতে দেশত্যাগ করতে না পারে সে কারণেই তাদের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন রয়েছে।
তিনি বলেন, দুদকের গোয়েন্দা অনুসন্ধানে দেখা গেছে আওয়ামী লীগ সরকারের তৎকালীন মন্ত্রী-এমপিরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কেউ কেউ গ্রেপ্তার হয়েছেন। তবে গ্রেপ্তার হোক বা না হোক আমাদের লক্ষ্য যাতে কেউই দেশত্যাগ করতে পারে। সে কারণে বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। কমিশন অনুমোদন দিলেই তালিকা আদালতে পাঠানো হবে। আদালতে আদেশ দেশের সব স্থল ও বিমানবন্দরে পাঠানো হবে।
দুদক উপপরিচালক মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি টিম ১৩ জন সাবেক মন্ত্রী-এমপির দুর্নীতির অনুসন্ধান করছে। ওই টিম সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ, সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ, সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, প্রাথমিক ও মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, কুষ্টিয়া-১ আসনের সাবেক এমপি সরওয়ার জাহান, মহিলা ও শিশু-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, যশোর-১ আসনের সাবেক এমপি শেখ আফিল উদ্দীন, রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সাবেক এমপি এনামুল হক, জয়পুরহাট-২ আসনের সাবেক এমপি আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ও বাগেরহাট-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ হেলালের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে গত সপ্তাহে কমিশনে আবেদন করেছেন।
অন্যদিকে দুদকের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে অপর একটি অনুসন্ধান টিম আরও ১৩ সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ নিয়ে কাজ করছে। এই টিম যাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে কমিশনে আবেদন করেছে তারা হলেন- সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, ধর্ম বিষয়ক সাবেক মন্ত্রী ফরিদুল হক খান, সাবেক মন্ত্রী ও জাতীয় পার্টি নেতা আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, জাসদ নেতা ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, ঢাকা-২০ আসনের সাবেক এমপি বেনজীর আহমেদ, যশোর-৩ আসনের সাবেক এমপি কাজী নাবিল আহমেদ, পটুয়াখালী-৪ আসনের সাবেক এমপি মহিববুর রহমান এবং নাটোর-১ আসনের সাবেক এমপি শহিদুল ইসলাম বকুল।
আর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল, তার ছেলে শাফি মোদাচ্ছের খান, মন্ত্রীর সাবেক পিএস অতিরিক্ত সচিব হারুন অর রশিদ বিশ্বাস, যুগ্মসচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোল্লা ইব্রাহিম হোসেন, সহকারী একান্ত সচিব মনির হোসেন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপুসহ ১০ ব্যক্তির বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কমিশন বরাবর আবেদন করেছে উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে পৃথক অপর টিম।
এর আগে গত ২৯ আগস্ট দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ থেকে ১৪ সাবেক মন্ত্রী ও এমপিদের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ওই ১৪ জন ভিআইপিদের দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে দুদকের উপ-পরিচালক আবু হেনা আশিকুর রহমানের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের টিম কাজ করছে।
বিআলো/শিলি