সেবার জন্য সদিচ্ছাই যথেষ্ট লায়ন মোহাম্মদ আবু ইমরান
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ধনী, দরিদ্র, উঁচু, নিচু, শিক্ষিত, অশিক্ষিত যে কোনো অবস্থান বা পরিবেশ থেকে ভালো কাজ করা সম্ভব। মানুষ বা সমাজের সেবা করা সম্ভব। টাকা পয়সার মালিক না হলে সেবা করা যায় না এমন ধারণা একেবারেই অমূলক। শুধু টাকা দিয়ে নয় টাকা ছাড়াও মানুষের সেবা করা সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন কেবল সদিচ্ছা। একটু ত্যাগ আর একটুখানি শ্রম দিয়েও সেবা করা যায়। যার মূল্য অসীম বা অপরিমেয়। পথহারা পথিককে পথ দেখিয়ে দেওয়া, তৃষ্ণার্তকে পানি পান করানো, শিশু কিংবা প্রবীণ ব্যক্তিকে রাস্তা পার করে দেওয়া-এসব করতে তো আর অর্থের প্রয়োজন হয় না। প্রয়োজন হয় সদিচ্ছা, দায়িত্বশীলতা, সচেতনতা মানবতা ও মমত্ববোধের। অর্থ থাকলেও অনেকে সেবক হতে পারেন না। বিত্তবান ব্যক্তিকে তার সেই বিত্ত ব্যয়ের সদিচ্ছাটুকু থাকতে হবে।
আগেই বলা হয়েছে একটুখানি সদিচ্ছা এবং একটুখানি ত্যাগ স্বীকার করলেই গুরুত্বপূর্ণ সেবা বা পরোপকার করা সম্ভব। যেমন : ধরা যাক একজন ধূমপায়ী রিকশাচালক দিনে ৮-১০টি সিগারেটের ধূমপান করে থাকেন। যার প্রতিটি সিগারেটের দাম কম বেশি ২০ টাকা। তিনি যদি প্রতিদিন একটি করে সিগারেট কম ব্যবহার করেন তবে প্রতি তিন দিন পর পর একজন ক্ষুধার্ত মানুষকে পেট ভরে এক বেলা ভাত খাওয়াতে পারেন। যারা চা পান করেন তারা প্রতিদিন বেশ কয়েক কাপ চা পান করে থাকেন। অথচ প্রতিদিন এক কাপ চা কম পান করলে চা-পায়ীর কোনো সমস্যা বা ক্ষতি হবে না। কিন্তু প্রতিদিন এক কাপ চা কম পান করলে ওই টাকা দিয়ে তিনি খুব সহজে প্রতি তিন দিন পর পর একজন ক্ষুধার্ত মানুষকে পেট ভরে একবেলা ভাত খাওয়াতে পারেন।
এমন হাজারো দৃষ্টান্ত রয়েছে আমাদের চারপাশে দৈনন্দিন জীবনে। একটু ত্যাগ স্বীকার করতে পারলে, একটু মিতব্যয়ী হলে একক কিংবা সম্মিলিতভাবে অনেক মানুষের অনেক উপকার করা সম্ভব। প্রয়োজন শুধু সদিচ্ছার। আর এই সদিচ্ছা আসে নৈতিক শিক্ষা ও মানবিক মূল্যবোধ থেকে। যিনি তার নিজের দায়িত্ব এবং অন্যের অধিকার সম্পর্কে সচেতন। মানবিক চেতনা যাকে তাড়িত করে তিনি মানবসেবা বা সমাজের কল্যাণ না করে বসে থাকতে পারেন না। একটি বিশেষ চেতনা মানুষকে ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করে। মন্দ কাজ থেকে তাকে বিরত রাখে। অন্যের হক বা অধিকার সম্পর্কে তাকে সচেতন করে, উচিত অনুচিত বুঝতে শেখায়, মানব কল্যাণে অনুপ্রাণিত করে। এই চেতনা আসে নৈতিক শিক্ষা থেকে। নৈতিক শিক্ষা থেকেই তৈরি হয় মানবিক মূল্যবোধ।
আমাদের চারপাশে অপছন্দনীয়, নিন্দনীয়, নীতিবিবর্জিত যা কিছু দৃশ্যমান তার সবকিছুই নীতি- নৈতিকতার অবক্ষয়ের ফসল। কাজেই একথা পুরোপুরি যুক্তিযুক্ত যে, সব ধরনের অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা, দুর্নীতি, অনৈতিক কর্মকাণ্ড ঠেকাবার জন্য নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধ হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী ও কার্যকারী প্রতিরোধ প্রাচীর। আমাদের জীবনে অর্জিত সবটুকু সম্পদ কেবল মাত্র নিজের জন্য নয়। এর মধ্যে অন্যেরও হক বা অধিকার রয়েছে। সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে মানুষরূপে কেন সৃষ্টি করেছেন আসুন আমরা সেই বিষয়টি গভীরভাবে ভেবে দেখি। আসুন আমরা সবাই নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়াই। তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেই। মানুষ ও সমাজের কল্যাণ করে মানুষ হিসেবে জন্ম নেওয়ার আসল উদ্দেশ্যকে সফল করি।
লেখক: সমাজসেবক, রিজিয়ন চেয়ারপার্সন, লায়ন্স ক্লাব ইন্টা:, ডিস্ট্রিক্ট ৩১৫বি২
বিআলো/তুরাগ