• যোগাযোগ
  • অভিযোগ
  • ই-পেপার
    • ঢাকা, বাংলাদেশ
    • যোগাযোগ
    • অভিযোগ
    • ই-পেপার

    সৈয়দ সুফি ফতেহ আলী ওয়াইসি (র.)’র জীবন ও কর্ম 

     dailybangla 
    22nd Nov 2024 7:02 am  |  অনলাইন সংস্করণ

    স্মৃতিচারণ করছি- আধ্যাত্ম জগতের এক জীবন্ত কিংবদন্তিকে। যার ত্যাগ, মহিমা ও অবদানের বদৌলতে বিশ্বের অগণিত মানুষ পেয়েছে সত্য পথের সন্ধান। আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে অসংখ্য খোদাপ্রেমী ও নবীপ্রেমীরা আল্লাহ ও তার প্রিয় রাসূল হজরত মুহম্মদ (দ.)’র রেজামন্দি হাসিল করতে সক্ষম হয়েছেন। এ মহান খ্যাতিমান সুফির নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। এ মহান অলিকুল শিরোমণির নাম-হজরতুল্লামা শাহসুফি সৈয়দ ফতেহ আলী ওয়াইসি বর্ধমানী (রহ.)। এ মহান জ্ঞানতাপস- একাধারে ছিলেন, মুফাচ্ছিরে কুরআন, শায়খুল হাদিস, ফিকাহ শাস্ত্রবিদ, খোদাতত্ত্ববিদ, আধ্যাত্মত্মবিদ, ধর্মতত্ত্ববিদ, ভাষাবিদ, ধর্মপ্রচারক, দার্শনিক, কবি-সাহিত্যিক, তর্কশাস্ত্রবিদ, অলঙ্কারশাস্ত্রবিদ, রাজনীতিবিদ, চিকিৎসাবিদ, মনোবিজ্ঞানী, দানবীর, মানবতার মূর্ত প্রতীক। বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী এ মহান সাহিত্যরত্নেরশব্দগত দক্ষতা, ভাষাগত দক্ষতা, ব্যাকরণগত দক্ষতা, ভাষার মাধুর্যতা ও ছন্দময় শব্দচয়নের যোগ্যতা ছিলো অনন্য উচ্চ মাত্রার। প্রতিটি শব্দচয়ন, শব্দশৈলী, শব্দগঠন, শব্দ বিন্যাস ছিলো খুবই নান্দনিক ও শ্রুতিমধুর। এশিয়া মহাদেশের ফারসি কবিদের মাঝে তিনি ছিলেনএক ও অদ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব। নবীপ্রেমের জীবন্ত কবি, সুফি ফতেহ আলী (র.)- তাসাউফ পন্থীদের কাছে পরম শ্রদ্ধা আর ভক্তি জায়গা। আত্মশুদ্ধিমূলক জ্ঞান প্রচার-প্রসারের দিক দিয়ে তিনি ছিলেন ভারতবর্ষের পীর-আউলিয়াদের মাঝে অগ্রগামী। এ ক্ষণাজন্মা মহাপু- রুষ ১৮২৫ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া থানার আমিরাবাদ ইউনিয়নের মল্লিক সোবহান গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা- সৈয়দ মাওলানা শহীদ ওয়ারেস আলী (র.)। শ্রদ্ধেয় পিতা- একাধারে ছিলেন ধর্মশিক্ষক, ধর্মপ্রচারক, ধর্মযোদ্ধা। ১৮৩১ সালে বালাকোট যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ের পান্‌জতারের যুদ্ধে সৈয়দ ওয়ারেস আলী (র.) শাহাদাত বরণ করেন। ৬/৭ বছরের মাথায় পিতা-মাতা দু’জনে জান্নাতবাসী হন। ভারতের কয়েকটি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনে করে সর্বশেষ ‘কলকাতা আলীয়া মাদ্রাসা’ থেকে উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করে শিক্ষাজীবন ইতি টানেন। খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করেন- (১) চট্টগ্রাম সাতকানিয়া মাদ্রাসা, (২) কলকাতা আলীয়া মাদ্রাসা। চাকুরী করেন- (১) কলকাতার দমদমের গোরা বাজার একটি গবেষণা কেন্দ্রে, (২) পলিটিক্যাল পেনশান অফিসের সুপারিনটেনডেন্ট, (৩) কলিকাতা নগর দেওয়ানী আদালত রেজিস্ট্রেশন বিভাগের প্রধান রেজিস্ট্রার, (৪) মেটিয়াবুরুজের নবাব ওয়াজেদ আলী শাহ’র একান্ত সচিব। তার জ্ঞানের বিশালতা ছিল আকাশচুম্বী। আরবি, ফারসি, ইংরেজি, হিন্দি, উর্দু, বাংলাভাষায় তিনি যথেষ্ট পারদর্শী ছিলেন। আল্লাহ পাক তাকে অসংখ্য ধারার ঐশ্বরিক জ্ঞান করেছিলেন। এ জ্ঞানকে আরবিতে ইলমে লাদুন্নি বলা হয়। এ জ্ঞান অত্যন্ত দুলর্ভ। আল্লাহ পাক যাকে অত্যধিক ভালবাসেন তাকে এ জ্ঞান দান করে থাকেন। এ বরেণ্য শিক্ষাবিদ- কিছুকাল চাকুরী জীবনের মধ্যে কাটান। পরে আধ্যাত্মিক উপলব্ধির কারণে নিজেকে তাসাওফের সাধনায় নিয়োজিত করেন। তিনি চাকুরী করলেও হৃদয়ের আনন্দিত উপলব্ধিকে অন্য জগতের কাজে ব্যয় করতেন। এ জগৎ হলো- আধ্যাত্মিক জগত। মন-প্রাণকে তিনি তাসাওফের সাধনায় নিয়োজিত রাখতেন। তিনি তার পীর ও মুর্শিদ- শায়খুল হাদিস, হযরত সুফি নুর মোহাম্মদ নিজামপুরী (রহ.)’র শিষ্যত্ব গ্রহণের পর থেকে আল্লাহ পাকের জিকিরে নিজেকে নিমগ্ন রাখতেন। তিনি যখন ধীরে ধীরে তাসাওফের সাধনায় নিজেকে সমর্পণ করেন তখন চাকুরী ছাড়তে বাধ্য হন। চাকুরী ত্যাগ করে আল্লাহ ও রাসূল’র আরাধনায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। সংসারী হয়েও বেশির ভাগ সময় আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থাকতেন। কঠোর সাধনার মধ্যদিয়ে তরিকৃতের খেলাফত লাভ করেন।

    হযরত শায়খ আহমদ সারহিন্দী মুজাদ্দিদ-ই-আল-ফেছানী (র.) পর্যন্ত পীর পরম্পরা বা সিলসিলা হচ্ছে সূফী ফতেহ আলী (র)’র পীর সূফী নূর মুহাম্মদ নিযামপুরী (র.), তার পীর হযরত সায়্যিদ আহমদ শহীদ ব্রেলভী (র.), তার পীর মাওলানা শাহ আবদুল আযীয দেহলবী (র.), তার পীর মাওলানা শাহ ওয়ালী উল্লাহ দেহলভী (র.), তার পীর শায়খ আবদুর রহীম দেহলভী (র.), তার পীর হযরত সায়্যিদ আবদুল্লাহ আকবরাবাদী (র.), তার পীর আদম বিন্নুরী (র.), তার পীর শায়খ আহমদ সারহিন্দী মুজাদ্দিদ-ই-আলফে ছানী (র.)। পীরভাইদের নাম সমূহ- (১) মাওলানা গোলাম কাদির আব্বাসী, মৌলভী হামিদুল্লাহ খাঁন বাহাদুর, মৌলভী আনওয়ারুল্লাহ ইসলামাবাদী, মৌলভী আকরম আলী নিজামপুরী (তিনি পীর সাহেবের জানাযার ইমামতি করেন), মুন্সী আবদুল করিম, মৌলভী হাজী আবদুল্লাহ (পোষ্যপুত্র ও মুরিদ খাদেম), আবদুল্লাহ চাটগামী, ওসিউর আলী (রাজশাহী), এনয়েত আলী, মাওলানা আবদুল্লাহ (ঢাকা), হাফেজ ক্বারী ইব্রাহীম, মুন্সী মেহেরুল্লাহ, মাওলানা তৈয়ব (প্রতিষ্ঠাতা- কলকাতা মিরীগঞ্জ নির্মিত মসজিদ-ই তৈয়ব, এ মসজিদে নিজামপুরী (র.)- ইবাদাত-বান্দেগী করতেন, সৈয়দ ফতেহ আলী ওয়াইসিসহ অন্যান্যরা এখান থেকে ফয়যাত হাসিল করতেন), মৌলভী মোহেব আলী, সৈয়দ সূফী ফতেহ আলী ওয়াইসি প্রমুখ। কলকাতা আলীয়া মাদ্রাসার অধ্যাপক মাওলানা গোলাম সালমানী আব্বাসি (র.) হতে বর্ণিত, একদিন সুফি ফতেহ আলী (র.) হাজেরানে মজলিশের সামনে একটি হাদীসের বয়ান করছিলেন। বর্ণনাকৃত হাদিসটি সহিহ নয় বলে আপত্তি জানান, তৎকালীন সময়ের কলকাতা আলীয়া মাদ্রাসার শিক্ষক- মাওলানা ছায়াদত হোসেন। এমতাবস্থায় সুফি ফতেহ আলী (র.) হঠাৎ অচৈতন্য হয়ে মাওলানা গোলাম সালমানী (র.) কে বললেন, বাবা। তুমি মাওলানার মস্তকে পানি ঢেলে দাও। পানি ঢালার পর মাওলানা সাহেব চৈতন্য লাভ করেন। তৎপর মাওলানা সাহেব বললেন, হাদিসটি সহিহ! মাওলানা সাহেব চলে গেলে সালমানী ছাহেব এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সুফি ফতেহ আলী (র.) বললেন, হাদিসটি সহিহ হওয়ার ব্যাপারে অভিযোগ করার কারণে তার উপর ইস্তিগ্রাকের (ব্যাপ্তি, অন্তর্ভুক্তি, নিমগ্নতা, স্বায়িত্ব) ফয়েজ নিক্ষেপ করে হজরত নবী করিম (দ.)’র জিয়ারত করে দিলাম। নবী করিম (দ.) বললেন, হে ছায়াদত। এটি আমার হাদিস। মাওলানা রুহুল আমিন বসিরহাটি তাঁর ওস্তাদ মাওলানা সুফি আবদুশ শাফী সাহেবের মুখে শুনেছেন যে, “সুফি ফতেহ আলী (র.) মুরিদগণকে নবী (দ.)’র জিয়ারত করে দিতেন, এজন্য তিনি কয়েকবার তার বাসস্থানে মুরিদ হওয়ার উদ্দেশ্যে গমন করলেও ভাগ্যক্রমে দেখা হয়নি”। এজন্য সুফিরা তাকে ‘রাসূলনোমা’ উপাধিতে ভূষিত করেন। অলি-আল্লাহগণের কাশফ সত্য. যদি তা কুরান ও হাদিস সম্মত হয়। এজন্য আল্লাহ তা’আলা সুরা ইনশিরাহ নাযিল করেছেন। জনৈক মুরিদ সুফি ফতেহ আলী (র.)’র নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, “আমি এত পরিশ্রম করা সত্ত্বেও কূলব জারি হচ্ছে না। উত্তরে তিনি বললেন, তুমি সুদখোরের জিয়াফত খাও নাকি? উত্তরে মুরিদ বললেন, হ্যা- আমার জামাতা সুদখোর। সুফি সাহেব (র.) বললেন- এজন্য তোমার কূলব জারি হচ্ছেনা। তৎপর সুফি সাহেব মুরিদকে বললেন, এই বিছানার দিকে দৃষ্টিপাত করো। লোকটি দেখতে পেলেন- সুফি সাহেবের তাওয়াজ্জুহের কারণে বিছানাটি বিকম্পিত হচ্ছে! তারপর সুফি সাহেব বললেন, হারাম আহারের কারণে তোমার হৃদয় এতই কলুষিত যে, কুলব কম্পিত হচ্ছেনা”। কলকাতার ধর্মতলা পাঁচ রাস্তার মোড়ে সুফি ফতেহ আলী (র.) প্রতি বিকেলবেলা জনগণকে হেদায়েতের বাণী শুনাতেন এবং সমধুর কণ্ঠে বক্তব্য রাখতেন। এ কারণে ইংরেজ সরকার- তাকে ১৮ রাউন্ড গুলি করে হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছিলো। পুলিশগণ গুলি ছুড়তে থাকলেও একটা গুলি-ও তার শরীরে লাগেনি। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ইংরেজ সেনারা তার মুবারক হাতে ইসলাম কবুল করেন। তিনি প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত না থাকলে-ও পরোক্ষভাবে ধর্মীয় স্বার্থে রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। সিপাহি বিদ্রোহের মূল রূপকারদের মধ্যে তিনি ছিলেন অগ্রপথিক। তিনি লন্ডনে গোলটেবিল বৈঠকে নবাব ওয়াজিদ আলী শাহের প্রেরিত প্রতিনিধি দলের নায়কত্বে ছিলেন। উপমহাদেশের নানান সমস্যা নিরসনের জন্য- স্যার সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী, শ্রীরামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দের মতো মহান মনীষীগণ সৈয়দ ফতেহ আলী (র.)’র সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতেন। তার কারামাত, চরিত্র, বাগ্মিতা, কবিতা আবৃত্তি, বক্তৃতা, পাঠদান পদ্ধতি, মানবসেবা ও জনসেবামূলক কাজ গুলো ছিলো চোখে পড়ার মত। বিনা দাওয়াতে কারো বাড়ীতে যেতেন না। দাওয়াতও তেমন গ্রহণ করতেন না তবে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে দাওয়াত কবুল করতেন।

    তিনি ফারসি ভাষার উপর অনবদ্য মহাকাব্যগ্রন্থ ‘দিওয়ানে ওয়াইসী’ লিখে ফারসি সাহিত্যকে সমৃদ্ধি করেছেন। তিনি ছিলেন এশিয়া মহাদেশের সর্বপ্রথম ফারসি মহাকবি। উক্ত গ্রন্থে ১৭৯ টি গজল এবং ২৩ টি কবিতা সন্নিবেশিত করা হয়েছে। কাব্যগ্রন্থটি বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দিওয়ানে ওয়াইসির কবিতাংশ-

    মুশরেকে হুব্বে মুহাম্মদ মাতলায়ে দিওয়ান ই মা

    মাতলায়ে খুরশিদে এশকেশ সিনে এ সুযানে মা।

    দার তাহে হার লাফয পেনহান নালেয়ে দেল সুযে মা ওয়া যে বুনে হার হারফ পায়দা অতাশে পেনহানে মা।

    তার প্রিয় খাবার তালিকা- দুধ, আম, বেদানা, লাউ, শাক, গুড়, পান। প্রতিটি সালাতের পর সুনির্দিষ্ট দোয়া-দরুদ, তজবীহ, মুরাক্বাবা-মুশাহেদা নিয়মিত আদায় করতেন। ওয়াক্তিয়া নামাজান্তে মুরিদদের মোরাকাবা করাতেন। বিশেষত- বাদে মাগরিব। প্রত্যেহ তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতেন। প্রায়শ আল্লাহর এবাদত ও নবীয়ে পাকের দরুদে তার জাবান অবিশ্রান্ত থাকতো। অনুকরণীয় চারিত্রিক দিক সমূহ- মিছওয়াক ব্যবহার, অট্টহাসি পরিহার, আড়ম্বর জীবন-যাপন, ঈদ উৎসবে শেওয়ানী পরিধান, চারকলি গোল টুপি পরিধান, নাগড়া জুতা ব্যবহার, আতর ও খুশব ব্যবহার, একশত মোটা দানার তসবিহ গণনা, নিজ হস্তে লিখিত নকল কুরআন শরীফ পাঠ, সাধারণ কাপড়-চোপড় পরিধান, চোখে সুরমা ব্যবহার, মাজার জেয়ারত, ছোটবড় সবাইকে প্রথমে সালাম দেওয়া, পীড়িতদের সান্ত্বনা ও দেখাশুনা করা, মৃতের জানাযায় সানন্দে উপস্থিত হওয়া, মৃতের মাগফিরাত কামনা করা, অশ্রু বিসর্জনে আল্লাহ ও রাসূলের প্রেমে ভক্তি নিবেদন করা, ধীরগতিতে এবং আস্তে আস্তেকথা বলা, গৃহের ও পাড়ার কুকুর-বিড়ালদের আহার করা, কনকনে শীতের সময় সামান্য একখানা পাতনা ফিনফিনে চাদর গায়ে দিয়ে সারারাত মুরাকাবায় নিমগ্ন থাকা, পাখিদের খাবার দেওয়া, প্রাত্যহিক ওয়াক্তিয়া সালাতের ন্যায় সালাতুল তাহাজ্জুদ, এশরাক ও চাশত আদায় করা, অতি গুরুত্বের সাথে রমজানের রোজা, শবে বরাত ও আশুরায় রোজা রাখা, আশুরা-শবে বরাত- শবে মিরাজ-আখেরি চাহার শোম্বা-ফাতেহা-ই-দোয়াজ দাহম-ফাতেহা-ই-ইয়াজ দাহমে বিশাল আয়োজনে মিলাদ মাহফিল উদযাপন করা, নীরবে আল্লাহর ধ্যানে নিমগ্ন থাকা, অত্যধিক মুরাকাবা ও মুশাহেদা করা।সৃষ্টির প্রতি তিনি ভীষণ দরদি ও দয়ালু প্রকৃতির ছিলেন। মানুষের দুঃখ দুর্দশা দেখলে নিজকে স্থির রাখতে পারতেন না। সাধ্যমতে আর্থিক অনুদান ও সহযোগিতা করতেন। মুরিদানের প্রতি যথেষ্ট দয়ালু ছিলেন। মুরিদানের কষ্ট দেখলে হুহু করে কাঁদতেন। মুরিদানদের সার্বিক উন্নতির জন্য আল্লাহর দরবারে অনবরত ফরিয়াদ করতেন। বিপদগ্রস্থ, ঋণগ্রস্থ, অসহায়, হায়, গরীব, ফকির, মিসকিনদের অকাতরে দানখয়রাত করতেন। আর্থিক সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ করতেন না। পাড়ার প্রতিবেশীদের খোঁজ-খবর রাখতেন। হাদিয়া হিসেবে শুধুমাত্র খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করতেন, তবে তা কিন্তু গরীবদের মাঝে বিতরণ করে দিতেন। নগদ অর্থ ও উপহার গ্রহণ করতেন না। কীট-পতঙ্গ যেমন মরিয়া হয়ে আলোক শিখার পানে ধাবিত হয়, তেমনি বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা, মধ্যপ্রদেশ, যুক্তপ্রদেশ, পাঞ্জাব, ভূপাল এমনকি সুদূর বলখ, বাদাখশান, খোরাসান ও মদিনা শরীফ হতে সত্য সন্ধানীরা ছুটে এসে বায়’আত গ্রহণ করতেন। বিশ্বের বহু দেশে তাঁর অসংখ্য অনুসারী ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তাঁর প্রত্যেক মুরিদ সন্তান ও খলিফাদের খোদাপ্রেম এবং নবীপ্রেম ও আধ্যাত্মত্ম জগতের পূর্ণ শিক্ষা-দীক্ষা প্রদান করে পরিপূর্ণ ভাবে কামেল পীরের মর্যাদায় সমাসীন করে নিজনিজ দেশে ধর্মপ্রচারর্থে প্রেরণ করেছিলেন।

    খলিফাদের নাম সমূহ- (১) মাওলানা আবদুল হক, সিজগ্রাম, মুর্শিদাবাদ, (২) মাওলানা আইয়াজউদ্দিন, আলিপুর, কলকাতা, (৩) সুফি নিয়াজ আহমদ, কাতরাপোতা, বর্ধমান, (৪) সুফি একরামুল হক, পুনাশী মুর্শিদাবাদ, (৫) মাওলানা মতিয়র রহমান, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ, (৬) মাওলানা আবুল আজিজ, চন্দ্র জাহানাদাবাদ, আরামবাগ, হুগলি, (৭) হাফেজ মুহাম্মদ ইবরাহিম, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ, (৮) মাওলানা আকবর আলি, সিলেট, বাংলাদেশ, (৯) মাওলানা সৈয়দ আমজাদ আলী কুদমী, মুন্সীগঞ্জ, সিরাজদিখান, ঢাকা, (১০) সুফি মাওলানা আহমদ আলী সুরেশ্বরী, ফরিদপুর, বাংলাদেশ, (১১) শাহ দিদার বক্স, পদ্মপুকুর, আব্দুল, হাওড়া, (১২) শাহ বাকাউল্লাহ, কানপুর, মাধবপুর গ্রাম পঞ্চায়েত, আরামবাগ, হুগলি, (১৩) মাওলানা আবুবকর সিদ্দিকী, মিয়া সাহেব মহল্লা, ফুরফুরা, হুগলি, (১৪) মাওলানা গোলাম সালমানি আব্বাসি, মোল্লাপাড়া, মোল্ল ফুরফুরা, হুগলি, (১৫) মুন্সি গণিমতুল্লাহ, পোলধার, তালতলাহাট, ফুরফুরা, হুগলি, (১৬) মুন্সি সাদাকাতুল্লাহ, পীর ছোটো হুজুর (র.)-এর বাড়ি, ফুরফুরা, হুগলি, (১৭) মুন্সি শারাফাতুল্লাহ, খাতুন, পূর্ব দুর্গাপুর, হুগলি, (১৮) শেখ কুরবান আলি, ১১৯, আব্দুল রোড, বনিয়াতলা, হাওড়া, (১৯) মাওলানা মির্জা আশারাফ আলি, কলকাতা, (২০) সৈয়দ ওয়াজেদ আলি মেহদিবাগ, ৯. রামমোহন লেন, কলকাতা, (২১) মাওলানা গুল হুসেন, খোরসান, আফগানিস্তান, (২২) মাওলানা আতাউর রহমান, ২৪ পরগণা, (২৩) মাওলানা মুফতি মবিনুল্লাহ, মুফতিপাড়া, রামপাড়া, হুগলি, (২৪) সৈয়দ জুলফিকার আলি, চিটাগড়, উঃ ২৪ পরগণা, (২৫) মাওলানা আতায়ে ইলাহি, মঙ্গলকোট, বর্ধমান, (২৬) মুন্সি সোলেমান, বারাসাত, উঃ ২৪ পরগণা, (২৭) মাওলানা নাসিরুদ্দিন, নদিয়া, (২৮) মাওলানা আবদুল কাদির, ফরিদপুর, বাংলাদেশ, (২৯) কাজি খোদা নওয়াজ, ধারসা, হুগলি, (৩০) মাওলানা আবদুল কাদির, বৈদ্যবাটি, হুগলি, (৩১) কাজি ফশাহতুল্লাহ, ২৪ পরগণা, (৩২) শায়খ লাল মুহাম্মদ, চুঁচুড়া, হুগলি, (৩৩) মাওলানা সৈয়দ আজাম হোসেন, মদিনা, সৌদি আরব, (৩৪) মুহাম্মদ সৈয়দ ওবায়দুল্লাহ, শান্তিপুর, নদিয়া, (৩৫) হাফেজ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, পূর্ব কাজিপাড়া, ফুরফুরা, হুগলি, (৩৬) সৈয়দা জোহুরা বিবি, শাহপুর, মুর্শিদাবাদ, (৩৭) মাওলানা আবদুর রহমান, সোদপুর, উঃ ২৪ পরগণা, (৩৮) শাহ তালেবুল্লাহ, বাগবাজার, কলকাতা, (৩৯) গোলাম আবেদ, মোল্লাসিমলা, হুগলি, (৪০) মাওলানা আবদুল মজিদ, চরতী, সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম (৪১) মাওলানা আবদুল মজিদ (কদুরখীল, বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম), (৪২) শাহ মসনদ আলী, ফিরিঙ্গি বাজার, চট্টগ্রাম। সুফি সৈয়দ ফতেহ আলী (র.)- ১৮৮৬ সালের ৬। ডিসেম্বর, রবিবার, বিকাল চার ঘটিকায় বেছালে হক্ লাভ করেন। অন্তিম উপদেশ- সুফি ফতেহ আলী (র.) অন্তিম সময়ে উপদেশ দিয়ে বলে যান-আমার ওফাতের পর সবাই যেন আমার কন্যা সৈয়দা জোহরা খাতুন’র কাছ থেকে নিসবতে জামিয়ার ফায়েজ হাসিল করে। আমি আমার সর্বস্ব তাকে প্রদান করেছি। অতঃপর সুফি আবু বকর সিদ্দিকী ও সুফি আহমদ আলী সুরেশ্বরী (র.) কে গভীর রাতে জিজ্ঞেস করেন মাওলানা গোলাম সালমানী আব্বাসী কোথায়? তাঁর সঙ্গে কিছু আলোচনা ছিল। তিনি তখন তথায় হাজির ছিলেন না। “আল্লাহ” “আল্লাহ” করে “আল্লাহ” পর্যন্ত পৌঁছতে চাইলে আমার স্নেহশীষ রুহানি সন্তান- মাওলানা সৈয়দ আমজাদ আলী’র খেদমতে গিয়ে তার আদেশ ও উপদেশ মতে চললে মনের আশা পূর্ণ হতে দেরী হবে না। কেননা তিনি নতুন একটি তরীক্বার ইমাম। প্রকাশ থাকে যে, সুফি ফতেহ আলী (র.) তার সিলসিলার কর্মধারা গোলাম সালমানী আব্বাসী’র হস্তে অর্পণ করার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। জোহরা খাতুনও একই কথা বলেছেন।

    পীরজাদি সৈয়দা মা জোহরা খাতুনের নিকট নিসবতে জামিয়ার জন্য কেউ উপস্থিত হলে তিনি গোলাম সালমানী আব্বাসী ফুরফুরাবী (র.)’র কাছে পাঠাতেন। নসিহত সমূহ- (১) হজরত রাসূলুল্লাহ (দ.)’র মহব্বতে বিহ্বল হয়ে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করা, (২) যারা হজরত রাসূল (সা.) এর দিদার আকাঙ্ক্ষা করে, তারা যেন জীবনের আরাম, ভোগ বিলাস হারাম করে, (৩) যে জাতি শেষ নবী (দ.)’র সুন্নাত ত্যাগ করেছে, সে জাতি শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে, (৪) মনের মুকুরে হজরত রাসূল (দ.)’র প্রেমের বাগান প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এতেই সিরাতে মুস্তাকিম, (৫) দুনিয়াতে যদি সবার আগে কাউকে আপন রূপে পেতে আকাঙ্ক্ষা হয়, তবে হজরত রাসূল (দ.) কে পেতে হবে, (৬) ব্যক্তি স্বার্থ ও আমিত্বের প্রতিমার বেদি চূর্ণ করে দাঁড়াতে পারলে এই জগতের সব শক্তি তোমার কদমে লুটিয়ে পড়বে, (৭) হজরত মুহাম্মদ (দ.) সারা বিশ্বের চূড়ান্ত নবী। তিনি সাম্যের নবী, সাদা কালোর নবী, (৮) সর্বদা আল্লাহর রহমতের উপর নির্ভর করবে, (৯) যারা সুন্নাতে রাসূল (দ.) (দ.) হতে বিমুখ, তাঁরা হজরত রাসূল (দ.)’র শাফায়াত হতে মাহরুম, (১০) নবী প্রেম পাগল ব্যাধির কোন প্রতিকার নেই। ১৮৮৬ সালের ৯ ডিসেম্বর বুধবার দিবাগত রাতে কলকাতার মানিকতলা লালবাগান মহল্লার ২৪/১, মুন্সিপাড়া লেনের দুই নম্বর দিল্লিওয়ালা কবরস্থানে তাকে শায়িত করা হয়। ভারতের গভর্নর জেনারেল, বৃটিশরাণী, বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর, কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি, দেওবন্দ মাদরাসার প্রিন্সিপাল, দেশের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান, সরকারি আধিকারি প্রমুখ শোক প্রকাশ করেছেন। গ্রন্থপঞ্জী- (১) ফুরফুরার ইতিহাস চহাস ও হজরত আবু বকর সিদ্দিকি (রহঃ)’র বিস্তারিত জীবনী- মোহাম্মদ রুহুল আমীন, (২) গোলাম রসুল মেহের, আহমাদ শহীদ (উর্দু), লাহোর ১৯৫২, (৩) আবদুল জলিল ও এস.এম. মতিউর রহমান নূরী অনু.. শাফায়াত হতে মাহরুম, (১০) নবী প্রেম পাগল ব্যাধির কোন প্রতিকার নেই। ১৮৮৬ সালের ৯ ডিসেম্বর বুধবার দিবাগত রাতে কলকাতার মানিকতলা লালবাগান মহল্লার ২৪/১, মুন্সিপাড়া লেনের দুই নম্বর দিল্লিওয়ালা কবরস্থানে তাকে শায়িত করা হয়। ভারতের গভর্নর জেনারেল, বৃটিশরাণী, বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর, কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি, দেওবন্দ মাদরাসার প্রিন্সিপাল, দেশের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান, সরকারি আধিকারি প্রমুখ শোক প্রকাশ করেছেন।

    গ্রন্থপঞ্জী- (১) ফুরফুরার ইতিহাস ও হজরত আবু বকর সিদ্দিকি (রহঃ)’র বিস্তারিত জীবনী- মোহাম্মদ রুহুল আমীন, (২) গোলাম রসুল মেহের, আহমাদ শহীদ (উর্দু), লাহোর ১৯৫২, (৩) আবদুল জলিল ও এস.এম. মতিউর রহমান নূরী অনু.. হযরত সৈয়দ আহমদ শহীদ (র), ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ঢাকা, (৪) শায়খ মুহাম্মাদ ইকরাম, মওজে কাওছার, ফিরোজ সন্স, লাহোর, ৮ম সংস্করণ ১৯৬৮, (৫) খান বাহাদুর হামিদুল্লাহ খান ইসলামাবাদী, আহাদীছল খাওয়ানীন, ১৮৭১, (৬) মোহাম্মদ আকরম খাঁ, মোছলেম বঙ্গের সামাজিক ইতিহাস, (৭) আবদুল হালিম আরামবাগী, ফুরফুরার পীর কেবলার জীবনী, (৮) ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, ইসলাম প্রসংগ, প্রসংগ, রেনেসাঁস প্রিন্টার্স, ঢাকা, (৯) সাইফুদ্দীন ভূদ্দীন সিদ্দিকী, ফুরফুরার হজরত, (১০) হাজী সেখ মো. গোলাম আলী ও মওলানা মোঃ ওছমান গনি, দ্বারিয়াপুর শরীফের জনাব হজরত পীর ছাহেব কেবলার জীবনী, খুলনা, (১১) মতিউর রহমান, আয়নায়ে ওয়সী, (১২) হাসান আবদুল কাইয়ূম, ফুরফুরার চাঁদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ঢাকা ১৯৯৫, (১৩) ফুরফুরা শরীফের প্রাচীন ইতিহাস- মুহাম্মদ নাসেরউদ্দীন ফুরফুরাবি, (১৪) সীরাতে সৈয়দ ফতেহ আলী ওয়সি (র.)- মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ মিয়া, (১৫) হায়াতে ওয়সী মায়ায়ে নাজ তোহফা- জয়নুল আবেদিন আখতারী ওয়সী, (১৬) Development of Sufism In Bengal, PhD. Thesis, Aligarh Muslim University-Page-320, (১৭) Introduction of some KhalifasSk. Ahmad Ali, P.hd. General Secretary, Waisi Memorial Association. (১৮) ফুরফুরা শরীফের প্রাচীন ইাতহাস- মুহাম্মদ নাসেরউদ্দীন ফুরফুরাবি, (১৯) বঙ্গ ও আসামের পীর আউলিয়অ কাহিনী- রুহুল আমিন বসিরহাটি, (২০) শানে ওয়াইসি- আহমদুল ইসলাম, (২১) ইসলাম প্রসঙ্গ-ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ।

    লেখক: কায়ছার উদ্দীন আল-মালেকী
    গবেষক, বিশ্লেষক, সাহিত্যিক, কলামিস্ট, কর্মকর্তা-ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ পিএলসি, গেন্ডারিয়া, ঢাকা

    বিআলো/তুরাগ

    Jugantor Logo
    ফজর ৫:০৫
    জোহর ১১:৪৬
    আসর ৪:০৮
    মাগরিব ৫:১১
    ইশা ৬:২৬
    সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১

    আর্কাইভ

    December 2024
    M T W T F S S
     1
    2345678
    9101112131415
    16171819202122
    23242526272829
    3031