সোশ্যাল মিডিয়ায় গড়ে উঠছে নারীদের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা জগৎ
নিজস্ব প্রতিবেদক: ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব কিংবা টিকটক এই প্ল্যাটফর্মগুলো এখন আর কেবল বিনোদনের মাধ্যম নয়। এগুলো হয়ে উঠেছে আয়ের উৎস, বিশেষ করে নারীদের জন্য একটি সম্ভাবনাময় ডিজিটাল ক্ষেত্র। স্মার্টফোন আর ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই আজ অনেকে গড়ে তুলছেন ঘরভিত্তিক ছোট ব্যবসা, তৈরি করছেন নিজেদের স্বপ্নের ব্র্যান্ড।
সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে রান্নার রেসিপি, হস্তশিল্প, কসমেটিকস কিংবা বুটিক পণ্যের ছবি ও ভিডিও পোস্ট করে নারীরা সংগ্রহ করছেন অর্ডার, চালাচ্ছেন বিক্রি। এতে বিনিয়োগ কম হলেও লাভের সম্ভাবনা অনেক।
বিশেষ করে নারীদের মধ্যে এই ধারা উল্লেখযোগ্যভাবে বিস্তৃত হয়েছে। ঘর সামলানো, সন্তান লালন-পালনের পাশাপাশি তাঁরা চালাচ্ছেন ব্যবসাও। কেউ রান্নার ভিডিও দিয়ে ইউটিউব থেকে আয় করছেন, কেউ ফেসবুকে কসমেটিকস বা শাড়ির ব্যবসা করছেন, কেউ বা ইনস্টাগ্রামে হ্যান্ডমেড জুয়েলারি বিক্রি করছেন।
সোশ্যাল মিডিয়া উদ্যোক্তাদের অন্যতম সুবিধা হলো-শুরুতে বড় মূলধনের প্রয়োজন হয় না। একটি স্মার্টফোন, কিছু ছবি আর একটি আইডিয়া—এই সম্বলেই শুরু করা যায় পথচলা। এক ক্লিকেই ছবি পোস্ট, কাস্টমারের সঙ্গে বার্তা আদান-প্রদান এবং বিক্রি-সব কিছু সম্ভব একটি মোবাইলেই।
পণ্যের প্রচারে অনেকে বানাচ্ছেন ছোট ভিডিও বা রিলস। যেমন-পণ্যের প্যাকেজিং কিভাবে হয়, কাস্টমার রিভিউ, পণ্যের ব্যবহারের টিপস-এসব বিষয় তুলে ধরে তৈরি করা হচ্ছে ‘ভ্যালু অ্যাডেড কনটেন্ট। এতে কাস্টমারের মধ্যে বিশ্বাস জন্মায়, এবং বিক্রিও বাড়ে।
লাইভ সেলিংও এখন দারুণ জনপ্রিয়। বিক্রেতা সরাসরি লাইভে এসে পণ্যের বর্ণনা দেন, দর্শকরা তা দেখে কমেন্ট বা ইনবক্সে অর্ডার করেন। এক ধরনের ভার্চুয়াল দোকান যেন খুলে যায় কয়েক মিনিটের জন্য।
তবে পথচলা একেবারেই মসৃণ নয়। অনেক নারী উদ্যোক্তা ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও দিলে অপ্রীতিকর ইনবক্স, কটুক্তি বা অনলাইনে হয়রানির শিকার হন। এছাড়া ডিজিটাল মার্কেটিং বা কনটেন্ট স্ট্র্যাটেজির ঘাটতির কারণে অনেকে ভালো পণ্য থাকা সত্ত্বেও পিছিয়ে পড়েন।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশে সোশ্যাল মিডিয়া কমার্স সেক্টর কয়েক হাজার কোটি টাকার বাজারে রূপ নিতে পারে। এই ক্ষেত্র হোম বেইজড ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য এক বিশাল সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে।
বর্তমানে কিছু এনজিও ও বেসরকারি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ ও দিকনির্দেশনা দিচ্ছে। তবে সরকারি পর্যায়ে আরও বিস্তৃত সহযোগিতা, প্রশিক্ষণ ও অনলাইন ব্যবসার আইনগত কাঠামো তৈরি করা দরকার।
এই খাতকে যুব উন্নয়ন, নারী উদ্যোক্তা সহায়তা ও ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রকল্পের আওতায় আনলে তরুণরা প্রযুক্তিনির্ভর আত্মকর্মসংস্থানে আরও বেশি সম্পৃক্ত হবে।
সোশ্যাল মিডিয়া হয়ে উঠছে শুধুই বিনোদনের জায়গা নয়, বরং জীবিকা, স্বপ্ন এবং নিজের পরিচয় গড়ার এক শক্তিশালী ডিজিটাল আশ্রয়স্থল-বিশেষ করে নারীদের জন্য।
বিআলো/সবুজ