স্টারলিংক স্যাটেলাইট আগেই খসে পড়ছে মহাকাশ থেকে
অনলাইন ডেস্ক: বর্তমানে সৌর চক্র ২৫-এর সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে, যার ফলে সৌর ঝড়ের তীব্রতা বেড়েছে। এই ঝড়গুলো পৃথিবীর উচ্চ বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত ও প্রসারিত করে, ফলে স্যাটেলাইটগুলোর ওপর বায়ুগত টান (drag) বৃদ্ধি পায়। এই অতিরিক্ত টানের কারণে ইলন মাস্কের স্টারলিংক স্যাটেলাইটগুলো সময়ের আগেই মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে খসে পড়ছে বলে সতর্ক করেছে নাসা।
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের বিজ্ঞানীরা সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মহাকাশ থেকে সময়ের আগেই স্টারলিংক স্যাটেলাইট খসে পড়ার বিষয়টি বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এর পেছনে প্রধানত দুটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে: তীব্র সৌর ঝড় এবং পুরনো স্যাটেলাইটগুলোর পরিকল্পিতভাবে কক্ষপথ থেকে সরিয়ে নেওয়া।
গবেষণায় দেখা গেছে, সৌর কার্যকলাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা ও ঘনত্ব বেড়ে যাচ্ছে, ফলে নিম্ন কক্ষপথে থাকা স্যাটেলাইটের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে স্টারলিংকসহ অনেক উপগ্রহ সময়ের আগেই জ্বলে-পুড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কিংবা ঝুঁকিপূর্ণভাবে পৃথিবীর দিকে ছুটে আসছে।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সূর্যের ১১ বছর মেয়াদি চক্রের একটি শীর্ষ পর্যায় এখন চলছে, যাকে বলা হয় ‘সোলার ম্যাক্সিমাম’। এই পর্যায়ে সূর্যের তেজ বেড়ে যাওয়ায় ভূ-চৌম্বকীয় ঝড় এবং সৌরঝড়ের প্রভাব বাড়ে, যা স্যাটেলাইটের স্বাভাবিক কক্ষপথ ব্যাহত করে।
গবেষণায় আরও বলা হয়, যেসব স্যাটেলাইট ৩০০ কিলোমিটারের নিচে অবস্থান করে, তারা ধারণার চেয়ে অন্তত ১০ দিন আগেই বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে জ্বলে পড়ে যাচ্ছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে এমন একটি ঘটনায় ফ্যালকন ৯ রকেট থেকে উৎক্ষেপিত ৪৯টি স্টারলিংক স্যাটেলাইটের বেশিরভাগই ক্যারিবিয়ান সাগরে পতিত হয়েছিল, যার জন্য স্পেসএক্স ছোট ভূ-চৌম্বকীয় ঝড়কে দায়ী করে।
নাসার গবেষণাপত্রে জানানো হয়, বর্তমানে ৭ হাজারের বেশি স্টারলিংক স্যাটেলাইট পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরছে এবং স্পেসএক্স এই সংখ্যা ৩০ হাজারে উন্নীত করার পরিকল্পনা করছে। তবে এই নতুন সৌরচক্র ও আবহাওয়াজনিত ঝুঁকি সেই পরিকল্পনার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
২০২৪ সালের আগস্টে কানাডার একটি খামারে প্রথমবারের মতো একটি স্টারলিংক স্যাটেলাইটের অংশ মাটিতে পাওয়া যায়—যা মহাকাশ প্রযুক্তির নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।
এই গবেষণাটি “ট্র্যাকিং রিএন্টারিং অফ স্টারলিংক স্যাটেলাইটস ডিউরিং দ্য রাইজিং ফেইজ অফ সোলার সাইকেল ২৫” শিরোনামে ‘আরসিভ’-এ প্রকাশিত হয়েছে।
বিআলো/