স্বামীর কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন মতিয়া চৌধুরী
নিজস্ব প্রতিবেদক: বৃহস্পতিবার বিকেলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর দাফন সম্পন্ন হয়। দুই দফা জানাজা শেষে তাকে মিরপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁর স্বামী বজলুর রহমানের কবরে শায়িত করা হয়। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাস যাকে মনে রাখবে ‘অগ্নিকন্যা’ হিসেবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হিসাবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করার কথা থাকলেও তার কোনও জানাজাতেই রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার দেয়ার কোনও আয়োজন ছিল না। জানাজায় ছিলেন না দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কেউ।
বুধবার ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। বৃহস্পতিবার সকালে তার মরদেহ রমনায় তার বাসায় নিয়ে যাওয়া হলে ভক্ত, অনুসারী ও স্বজনরা সেখানে ভিড় করেন।
মতিয়া চৌধুরীর ভাই মাসুদুল ইসলাম চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, আজ সকাল ১০টার দিকে মরদেহ হাসপাতাল থেকে রমনায় তার বাসভবনে নেয়া হয়। এখানে প্রথম জানাজা শেষে গুলশানের আজাদ মসজিদে দ্বিতীয় দফায় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে মরদেহ মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে দাফন করা হয়।
তিনি বলেন, মতিয়া চৌধুরীর কবরের জন্য জায়গা চেয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কাছে আবেদন করা হয় গতকাল বেলা ১১টার দিকে।
তারা আমাদের কথা শুনে জানাল, কবরস্থানে জায়গা দেয়ার বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে দেখভাল করা হয়। তারা সেখানে অনুমতির জন্য বলবেন। অনুমতি পাওয়া গেলে তারাই আমাদের জানাবেন। কিন্তু আমরা সিটি করপোরেশনের কাছে থেকে কোনো সাড়া পাইনি। জায়গা না পাওয়ায় তাঁর স্বামী প্রয়াত সাংবাদিক বজলুর রহমানের কবরে তাঁকে দাফন করা হয়।
এই বীর মুক্তিযোদ্ধার অন্তিম বেলায় তাঁকে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানো হয়নি। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত্যুর পর স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ‘গার্ড অব অনার’ দেয়ার নিয়ম থাকলেও মতিয়া চৌধুরীর ক্ষেত্রে তা হয়নি।
এ প্রসঙ্গে মাসুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, মতিয়া চৌধুরী তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তাঁর পরিচয় সবাই জানে। কিন্তু তাঁকে কোনো গার্ড অব অনার জানানো হয়নি। কবরস্থানে দেখলাম কিছু পুলিশ ঘোরাঘুরি করছে। হয়তো এত লোকজন দেখেই তারা এসেছিল। কিন্তু তাঁকে গার্ড অব অনার দিতে কেউ আসেনি।
ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমান আতা, সাবেক ছাত্র নেতা সৈয়দ আবু তোহা, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, সাবেক ছাত্রনেতা ও আওয়ামী লীগের উপ কমিটির সদস্য প্রকৌশলী গৌতম দাস, প্রকৌশলী মো. সঞ্জীব ইসলাম আফেন্দী, কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বশিরুল আলম নিয়াজি, মোর্শেদুজ্জামান সেলিম, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আনোয়ারুল আজীম সাদেক, কাজী শহীদুল্লাহ লিটন, আনোয়ার হোসেন টিংকু, তাওহিদুর রহমান, জহিরুল ইসলাম ইসহাক, তাহিদুর রহমান সেলিমসহ নেতাকর্মীরা জানাজায় অংশ নেন।
বনানী থানা আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের পক্ষ থেকেও আলাদাভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিবার, মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর, দৈনিক সংবাদ পরিবার, মণি সিংহ ফরহাদ স্মৃতি ট্রাস্ট, বিশেষ গেরিলা বাহিনীসহ পরিবারের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয় প্রয়াত নেতার কফিনে।
সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী ও মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল এসেছিলেন মতিয়া চৌধুরীর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে।
সকালে রমনায় তার বাসায় প্রথম জানাযাতেও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। সেসসময় তাকে শেষবারের মতো দেখতে ভিড় জমান রাজনৈতিক সহকর্মী, অনুসারী ও স্বজনরা। সেখানে হয় প্রথম জানাযা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দারুস সলাম থানার ওসি রকিবুল হোসেন বলেন, ‘আমাদের মতিয়া চৌধুরীর গার্ড অব অনারের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। জানাজাসহ যাবাতীয় কার্যক্রম শেষ করে আমাদের এখানে শুধু দাফন করা হয়েছে। সাধারণত যেখানে জানাজা পড়ানো হয় সেখানেই গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।’
গুলশানে জানাযা হলেও এই থানার ওসি তৌহিদ আহমেদ বলছেন, মতিয়া চৌধুরিকে গার্ড অব অনার দেওয়ার বিষয়ে তাদের কোনও নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
শেষ বিদায়ের সময় মতিয়া চৌধুরীর বোন মাহমুদা চৌধুরী বলেন, ‘তার সারাজীবন ত্যাগ আর সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে কেটেছে, তিনি মানুষের জন্য করে গেছেন।’
মতিয়া চৌধুরীর জন্ম পিরোজপুরে, ১৯৪২ সালের ৩০ জুন। তাঁর বাবা মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা এবং মা নুরজাহান বেগম ছিলেন গৃহিণী। ১৯৬৪ সালের ১৮ জুন খ্যাতিমান সাংবাদিক বজলুর রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন মতিয়া চৌধুরী।
মতিয়া চৌধুরী শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী) আসন থেকে ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯৬ ও ২০০৯ এবং ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন মতিয়া চৌধুরী। ২০২৩ সালের ১২ জানুয়ারি থেকে তিনি জাতীয় সংসদের সংসদ উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরও তিনি এই দায়িত্বে ছিলেন।
বিআলো/শিলি