হাদিস বিশেষজ্ঞ হজরত শাহ আবদুল গনী দেহলভী (র:)’র কর্ম ও অবদান
হজরত শাহ আবদুল গনী মুহাদ্দিস দেহলভী একজন প্রখ্যাত ইসলামী পণ্ডিত ও হাদিস বিশারদ। উপমহাদেশে নববী জ্ঞানপ্রচার ও প্রসারে তার অবদান অনস্বীকার্য। তিনি হজরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভীর কনিষ্ঠ পুত্র। ১৮৫৮ সালের দিকে ভারতের দিল্লিতে তার জন্ম। এ মহান খ্যাতিমান পুরুষ, জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা হজরত শাহ আবদুল আজিজ মুহাদ্দিস দেহলভীর কাছে ইলমে নববীর পূর্ণ জ্ঞান হাসিল করেন। দিল্লির মাদরাসা রাহিমিয়া ছিল তার শিক্ষা ও পাঠদানের মূল কেন্দ্র। যা তার পূর্বপুরুষ শাহ ওয়ালি উল্লাহ দেহলভী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পিতার প্রতিষ্ঠিত রাহিমিয়ায় মাদ্রাসা এবং বিভিন্ন ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্রে শিক্ষকতা করেছেন।তিনি দীর্ঘকাল হাদীস, তাফসীর, ফিকহসহ বিভিন্ন বিষয়ের দারস (পাঠ) দেন। তার পাঠদান ও রচনার ভাষা ছিল সহজ ও প্রাঞ্জল। তিনি ইলমে হাদীসের বিভিন্ন সমস্যা ও মতপার্থক্যের ব্যাখ্যা করেছেন। তার কাজগুলোতে দিল্লির দারুল হাদীসের প্রভাব লক্ষণীয়। যেহেতু তিনি মূলত শিক্ষক ছিলেন। তার মৌখিক পাঠ-ভাষ্য ও ছাত্রদের নিকট হাদীস-ব্যাখ্যার মাধ্যমেই তার জ্ঞান ছড়িয়ে পড়ে। শাহ আবদুল গনীর ছাত্ররা ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা, হাদীস বিশ্লেষণ, ইসলামী আইন, রাজনীতি ও আত্মশুদ্ধি সহ সর্বক্ষেত্রে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন। তাদের মাধ্যমে উপমহাদেশে ইসলামী জ্ঞান ও হাদীস চর্চার এক নতুন অধ্যায় সূচিত হয়। শাহ আবদুল গনী মুহাদ্দিস দেহলভীর শিক্ষাদান পদ্ধতি ও মাদরাসা জীবন ছিল উপমহাদেশে হাদীসশাস্ত্রের পুনর্জাগরণের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তিনি শুধু একজন আলেম নন বরং একজন আদর্শ শিক্ষকও ছিলেন। যিনি তার ছাত্রদের জ্ঞানের পাশাপাশি তাক্বওয়া ও আখলাক শেখাতে অগ্রণী ছিলেন। তিনি দরস নিয়ে সবসময় ব্যস্ত থাকতেন এজন্য গ্রন্থ রচনায় তেমন মনোনিবশে করতে পারেননি। তার কয়েকটি রচনাবলী:-১. আত-তালিকাত আলা হাশিয়াতিল ইসাবা (ইবন হাজরের বিখ্যাত গ্রন্থ আল-ইসাবা ফি তামইয আস-সাহাবার উপর সংযোজন বা টীকা। সাহাবায়ে কেরামের জীবনী নিয়ে এই বইয়ে তিনি মন্তব্য ও সংশোধন যুক্ত করেন), ২.আল-আসারুস সুনানিয়া (এটি হাদীস সংকলনের কাজ, যেখানে তিনি হাদীসের সূত্র ও শব্দচয়ন বিষয়ে ব্যাখ্যা করেন), ৩. আল-মাকালাতুল হাদীসিয়া’ (হাদীস ব্যাখ্যা এবং মুহাদ্দিসদের মতামত নিয়ে ছোট আকারের একটি টীকামূলক সংকলন), ৪. হাদীস পাঠদানের জন্য ব্যবহৃত প্রধান কিতাবগুলোর ব্যাখ্যা (তিনি সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ, ও অন্যান্য হাদীস গ্রন্থের পাঠদানের সময় মৌখিক ব্যাখ্যার পাশাপাশি লিখিত টীকাও তৈরি করতেন)। বালাকোট যুদ্ধের মহান সিপাহসালার হজরত শাহ ইসমাঈল শহীদ দেহলভী (র.)’র ছিলেন তার পিতা। এ মহান আলেমেদ্বীন ১৯০২ সালে ইন্তেকাল করেন।
লেখক : কায়ছার উদ্দীন আল-মালেকী
(কলামিস্ট ও ব্যাংকার)
বিআলো/তুরাগ