হামাস ও ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করতে সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে বাইডেন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় প্রায় আট মাস ধরে যুদ্ধ চলছে। যুদ্ধের প্রথম মাসে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হলেও আর কোনো চুক্তি আলোর মুখ দেখেনি। তবে আশা ছাড়েননি মধ্যস্থতাকারীরা।
দুপক্ষের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা অব্যাহত রেখেছেন তারা। কয়েক সপ্তাহে আগে যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময় আলোচনায় অগ্রগতিও হয়। যদিও শেষ পর্যন্ত তা আর চুক্তিতে রূপ নেয়নি। তবে এখন হামাস ও ইসরায়েলকে চুক্তিবদ্ধ করতে সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে এগিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, গত সপ্তাহে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি একটি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের কথা জনসম্মুখে প্রচার করেন বাইডেন। এমনকি সেটি তিনি হামাসের কাছে পর্যন্ত পাঠিয়েছেন। তবে এটা করার জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কাছ থেকে তিনি কোনো অনুমতি গ্রহণ করেননি। এ বিষয়ে জানাশোনা আছে এমন তিনজন মার্কিন কর্মকর্তা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, বাইডেন ইচ্ছে করে একতরফাভাবে প্রস্তাবটি ঘোষণা করেছেন। যদিও মিত্রদের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সচরাচর এমন সিদ্ধান্ত নেয় না। মূলত চুক্তি থেকে ইসরায়েল বা হামাসের সরে যাওয়ার জায়গাটা সংকুচিত করতেই এমনটা করা।
একজন সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, আমরা প্রস্তাবটি ঘোষণা করার আগে অনুমতি চাইনি। আমরা ইসরায়েলিদের জানিয়েছিলাম যে আমরা গাজার পরিস্থিতি নিয়ে একটি বক্তব্য দিব। তবে কী বিষয়ে, তা আমরা বিস্তারিতভাবে জানাইনি।
গত শুক্রবার ইসরায়েলের পক্ষে গাজায় তিন ধাপে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে একটি প্রস্তাব দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বাইডেন বলেন, ‘এ যুদ্ধ শেষ হওয়ার সময় এসেছে’। এ সময় তিনি গাজায় যুদ্ধ বন্ধে ইসরায়েলের নতুন প্রস্তাব মেনে নিতে হামাসের প্রতি আহ্বান জানান।
টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও জনবিষয়ক অধ্যাপক জেরেমি সুরি বলেছেন, বাইডেনের ঘোষণা এবং ইসরায়েল প্রস্তাব করেছে, এমনভাবে উপস্থাপনের উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধবিরতির আশা জাগানো এবং নেতানিয়াহুর ওপর চাপ সৃষ্টি করা। নেতানিয়াহুকে প্রস্তাবটি গ্রহণে বাধ্য করার চেষ্টা করছেন বাইডেন।
বাইডেনের ঘোষণা নেতানিয়াহুর ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেন, হামাস ও এর শাসন ক্ষমতা ধ্বংস করা থেকে ইসরায়েলকে কেউ ঠেকাতে পারবে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেন, ইসরায়েলকে তার জাতীয় স্বার্থের বিপরীতে কাজ করতে বাধ্য করবে এমন ধারণা বোকামি। হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করা উচিত।
প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে প্রবেশ করে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে ১২০০ ইসরায়েলিকে হত্যা ছাড়াও প্রায় ২৫০ জন ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিককে বন্দী করে গাজায় নিয়ে আসে হামাস। একই দিন থেকে হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে গাজায় নির্বিচারে বোমা হামলা করে আসছে ইসরায়েল। ইতোমধ্যে ছোট্ট এই উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলায় ৩৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
গত নভেম্বরে কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে সাতদিনের একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছিল। চুক্তির আওতায় হামাস শতাধিক ইসরায়েলি বন্দীকে মুক্তিও দেয়। তবে এখনো তাদের হাতে শতাধিক ইসরায়েলি বন্দী রয়েছে। এসব বন্দীর মুক্তি নিশ্চিত করতে নেতানিয়াহু সরকারের ওপর দিনকে দিন চাপ বেড়েই চলেছে।
বিআলো/শিলি