• যোগাযোগ
  • সংবাদ দিন
  • ই-পেপার
    • ঢাকা, বাংলাদেশ

    “হেলমেটধারীরা গুলি করে আমার বাবাকে মারে : নিহত মাসুদের ছেলে” 

     dailybangla 
    03rd Aug 2024 11:57 am  |  অনলাইন সংস্করণ

    ইবনে ফরহাদ তুরাগঃ দিনটি ছিলো ১৯ জুলাই বিকেল ৩টা। ঐদিন জুমার নামাজের পর কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা রায়েরবাগ বিশ্বরোড থেকে তাদের অবস্থান সরিয়ে কদমতলী থানা ঘেরাও করতে আসে। এর পরিপেক্ষিতে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও এলাকাবাসীর বাধার সম্মুখীন হয়ে আন্দোলনকারীরা মুজাহিদনগর ও মেরাজনগর আবাসিক এলাকায় ঢুকে পড়ে। যার ফলে এলাকাবাসীর জন্য নেমে আসে বিরাট বিপর্যয়। এ সময় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় রায়েরবাগ আবাসিক এলাকা।

    এক পর্যায়ে কোটাবিরোধীদের নৈরাজ্য ঠেকাতে মাঠে নামেন যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। শুরু হয় দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ। প্রায় ২ ঘণ্টা সংঘর্ষের পর এ সময় আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেয় মেরাজনগর বি-ব্লক শান্তি নিবাস ভবনের নিচে।

    তখন বিকাল ৫টা। এবার শুরু হয় গোলাগুলির শব্দ। এ সময় শান্তি নিবাস- ২ ভবনের ৮ তলার বারান্দা দিয়ে প্রবেশ করা দুর্বৃত্তদের করা একটি গুলিতে প্রাণ হারান ৪ বছরের ছেলে আহাদ। একই সময় দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হয় আসরের নামাজ আদায় করতে যাওয়া মাসুদ (৪৪) নামে একজন স্থানীয় ব্যক্তি। এলাকাবাসী জানান, সংঘর্ষের সময় মাসুদের মাথায় গুলি করার পরও ক্ষান্ত হয়নি দুর্বৃত্তরা। দ্বিতীয় ধাপে তারা আবার কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে।

    মোবাইল ফোনে গোপনে ধারণকৃত একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ২ যুবক শাস্তি নিবাস ভবনের নিচ থেকে ভবনের আশপাশে ও শাহী মসজিদের দিকে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ছে। এর মধ্যে ১ যুবক মুখে লাল রুমাল বেঁধে সামনে থেকে গুলি করছে। এ সময় তাদেরকে গুলি চালাতে নির্দেশনা দিচ্ছে কয়েকজন হেলমেটধারী, অনেকের হাতে ছিলো দেশীয় অস্ত্র।

    নিহত মাসুদের স্ত্রী হেনা দৈনিক বাংলাদেশের আলো-কে বলেন, ‘হামলাকারীদের কিছু লোক মাথায় হেলমেট পরা ছিলো, তারা আমার স্বামীকে নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় ধরেছে, ঐ মুহূর্তেই তাকে গুলি করেছে, গুলি করার পর আমার ভাসুরের ছেলে ও বাড়িওয়ালার ছেলে আনতে গেছে, ওনাদেরকে চাপাতি নিয়া দৌড়াইয়া কেচি গেটের ভেতর ঢুকাইয়া দিয়া, যাওয়ার টাইমে আবার মাথার ভেতর কোপ মারছে।’ “আমার বড় ছেলে মাহফুজ (১১) তখন সেই রাস্তার পাশে একটা বাসার ছাদে বসে সংঘর্ষ দেখছিলো। সেখান থেকে রাস্তায় নেমে এসে বলে ‘আমার আব্বু ঐটা। আমার আব্বুকে মেরে ফেলসে’। মাহফুজ বলে, ‘তাদের মাথায় হেলমেট পড়া ছিলো, হাতে একটা লাঠি ছিলো, আর পিস্তল। হেলমেটধারীরা গুলি করে আমার বাবাকে মারে।’

    শান্তি নিবাস ভবনের একাধিক দারোয়ান জানান, সেদিন জুমার নামাজের পর থেকেই তিন রাস্তার মোড় হতে শান্তি নিবাস ভবনের নিচে অবস্থান নেয় হামলাকারীরা। তারা অনেকক্ষণ গুলি করছে, এক সেকেন্ডের জন্য বন্ধ নাই, কিছু গুলি এখনো ভবনের দেয়ালে আটকে আছে। যারা হেলমেট পরা এদের তো চেহারাই দেখা যায় না, এভাবে কারো হাতে বন্দুক ছিলো, কারো ২টা কারও ১টা কারও হাতে রানদাও।

    আশপাশের বাড়ি ও ভবন থেকে দেখা প্রতিবেশীরা জানান, ‘সংঘর্ষের সময় ঘটনাস্থলে ছিলো না কোনো পুলিশ। প্রথমে প্রায় ১ ঘণ্টা ধরে তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। হঠাৎ একপর্যায়ে ২টি অটো দিয়ে নিয়ে আসা হয় রামদা, ছুড়ি, চাপাতি। এরপর শুরু হয় গুলি তারা ছিলো হেলমেট পরা কিছু লোক, সিভিলে কিছু লোক, তারা মাসুদকে গুলি করার পরও মৃত্যু নিশ্চিত করছে, মাথায় কোপাইছে।’

    হামলার পর তারা দেখতে পান মাসুদ পড়ে আছেন, তার মাথা থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে, সেই রক্তের দাগ লেগে আছে রাস্তায়। গুলিটি তার কপাল দিয়ে ঢুকেছে। এই অবস্থায়ই এলাকার লোকজনের সহযোগিতায় মাসুদকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়।

    প্যারাডাইস স্কুলের পাশের ভবনে থাকা রাকিব জানান, ঘটনাস্থলে লাশ রেখেও তারা লাশটিকে টেনে হিঁচড়ে গলিতে নিয়ে যায়। আর বলে, ‘তোরা বাসা থেকে নাম, একটারে ফালাইয়া দিছি, এসে নিয়ে যা। আমরা দাঁড়ালাম।’

    ঘটনার সময় সেই রাস্তার পথচারী জামাল বলেন, ‘৩ জনের হাতে পিস্তল ছিলো, কয়েকজনের মাথায় হেলমেট ছিলো, তারা তখন এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ছিলো। সেই রাস্তায় আশিক (১৮) নামে আরেকজনকে পিঠে কোপায় হামলাকারীরা, তার গায়ে ১৬টা শিলি লেগেছে। সে এখনো ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। এর আগে ৫০ বছর বয়সী একজন বৃদ্ধকে এই রাস্তায় কোপায় একই বাহিনী। সেই বৃদ্ধ পরদিন সকালে মারা যান।’ যার ফুটেজ আশপাশের ভবনের সিসি ক্যামেরায় দেখলে পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।

    নিহত মাসুদের বড় ভাই কবির বলেন, ‘ঘটনার ৫ মিনিটের মধ্যে খবর পাই আমার ভাই মাসুদকে গুলি করে ও কুপিয়ে মেরেছে। এখানে পুলিশ আসে নাই, পুলিশ কিন্তু ঘটনার ৩ দিন পরও আসে নাই। আমরা তাদের চিনতে পারি নাই, আমরা তাদের চিনতে পারলেও কিছু বলতে পারবো না।’

    অনুসন্ধানে জানা যায়, মাসুদ নিহত হওয়ার ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে এখনো তুমুল উত্তেজনা বিরাজ করছে এটা কোটাবিরোধীর সংঘর্ষ নাকি ব্যক্তিগত আক্রোশে পরিকল্পিত হত্যা এই বিষয় নিয়ে সংশয়ে আছে এলাকাবাসী। এই ঘটনায় অস্ত্র দিয়ে গুলি করা ব্যক্তিদের দলীয় পরিচয় রয়েছে বলে জানায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু স্থানীয়রা। তাদের দাবি আশপাশের সব সিসি টিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে খুনিদের শনাক্ত করার ও আইনের আওতায় নিয়ে আসার।

    কদমতলী থানার ওসি আবুল কালাম এই ঘটনা নিশ্চিত করে বলেন, ‘মাসুদ নিহত হওয়ার ঘটনা জানতে পেরেছি। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে কদমতলী থানায় একটি মামলা দায়ের করে। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই জুলহাস। এই মামলার অগ্রগতির বিষয়ে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টার থেকে বলা হবে। আপাতত আমরা কিছু বলতে পারছি না।’

    বিআলো/নিউজ

    এই বিভাগের আরও খবর
     

    ফরহাদ হত্যার প্রতিবাদে লাশ নিয়ে থানার সামনে বিক্ষোভ

    Jugantor Logo
    ফজর ৫:০৫
    জোহর ১১:৪৬
    আসর ৪:০৮
    মাগরিব ৫:১১
    ইশা ৬:২৬
    সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১

    আর্কাইভ

    July 2025
    M T W T F S S
     123456
    78910111213
    14151617181920
    21222324252627
    28293031