• যোগাযোগ
  • অভিযোগ
  • ই-পেপার
    • ঢাকা, বাংলাদেশ
    • যোগাযোগ
    • অভিযোগ
    • ই-পেপার

    ১৫ বছরে ৩ বার বন্ধ হয় মালয়েশিয়ার শ্রম বাজার 

     dailybangla 
    16th Oct 2024 11:46 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

    মো. ইব্রাহীম হোসেন: সিন্ডিকেটের সীমাহীন দুর্নীতিতে মালয়েশিয়ার আকর্ষণীয় শ্রমবাজার বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য শোষণের ফাঁদে পরিণত হয়েছিল। ওই ফাঁদে পড়ে অনেকেই সর্বস্বান্ত হয়েছেন। সরকার অভিবাসন খরচ ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা নির্ধারণ করলেও কর্মীরা জনপ্রতি সাড়ে ৪ লাখ থেকে সাড়ে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত দিয়েছেন। প্রতিটি ভিসা ন্যূনতম ৬ হাজার রিঙ্গিতে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো থেকে কিনতে হয়েছে। এছাড়া শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রণকারী সিন্ডিকেটের মূল হোতাদের কর্মীপ্রতি এক লাখ ৪২ হাজার টাকা করে চাঁদাও দিতে হয়েছে। এভাবে কয়েক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে দুই দেশের সিন্ডিকেট।

    সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু সিন্ডিকেটের দুর্নীতি নয়, এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের গাফিলতি। আর এসব সিন্ডিকেট-অনিয়মে ১৫ বছরে তিবার বন্ধ হয় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। এই সিন্ডিকেট-অনিয়মের মূল হোতা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মালয়েশিয়ার নাগরিক আমিনুল ইসলাম ওরফে দাতো শ্রী আমিন। তার সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন রুহুল আমিন স্বপন।

    এছাড়া সিন্ডিকেটে থাকার অভিযোগ রয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের চার সংসদ সদ্যস্যের বিরুদ্ধেও। তবে নিজেদের শ্রমবাজারে বিদেশে শ্রমিক নিতে এই সিন্ডিকেট তৈরির সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে খোদ মালয়েশিয়ার বিরুদ্ধে।

    তথ্য সূত্র মতে, গুটিকয়েক রিক্রুটিং এজেন্সির সিন্ডিকেট ও দুর্নীতির কারণে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে মালয়েশিয়া শ্রমবাজার বন্ধ করে দেয়। দুই দেশের মধ্যে অনেক আলোচনার পর ২০২২ সালের আগস্টে আবারও শ্রমবাজার খুলে দেয় মালয়েশিয়া সরকার। কিন্তু সেই সিন্ডিকেটের প্রভাব বলয় থেকে বের হতে পারেনি দুই দেশই।

    অভিযোগ রয়েছে, ১৪টি দেশ থেকে শ্রমিক নেয় মালয়েশিয়া। অন্য কোনো দেশ থেকে কর্মী নেওয়ার ক্ষেত্রে এজেন্সি ঠিক করে দেয় না দেশটি। ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই। নিজেদের মধ্যে স্বাক্ষর করা সমঝোতা স্মারকেও বাংলাদেশ সরকারই মালয়েশিয়াকে বাংলাদেশি এজেন্সি বেছে নেওয়ার সুযোগ করে দেন। বাংলাদেশ ১৫২০টি এজেন্সির তালিকা দিলেও মালয়েশিয়া কয়েকটি ধাপে বেছে নেয় মাত্র ১০১টি এজেন্সিকে। কিন্তু এই এজেন্সিকে চূড়ান্ত করার কোনো মানদণ্ড ছিল না।

    মালয়েশিয়ার কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েছেন পুরো সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণকারী মূলহোতা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মালয়েশিয়ার নাগরিক আমিনুল ইসলাম ওরফে দাতো শ্রী আমিন। দুই দেশের ব্যবসায়ীরা তাকে দাতো আমীন নামেই চেনেন। মালয়েশিয়ায় থেকেই তার প্রতিষ্ঠান বেস্টিনেটের মাধ্যমে দুই দেশের রিক্রুটিং ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন এই দাতো শ্রী আমিন। বাংলাদেশে এই সিন্ডিকেট সামলান বায়রার সাবেক মহাসচিব রুহুল আমীন স্বপন। তারাই ঠিক করেন কোন কোন এজেন্সি থাকবে এই সিন্ডিকেটে।

    একজন শ্রমিকের মালয়েশিয়া যাওয়ার খরচের হিসাব ধরা হয়েছিল ৭৮ হাজার ৯০০ টাকা। অভিযোগ রয়েছে, এই দফায় প্রতিজনের বিপরীতে শুধু সিন্ডিকেট ফি দিতে হয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকারও বেশি। যার বড় অংশটিই গেছে আমিনুল ইসলাম ওরফে দাতো শ্রী আমীন আর বায়রার সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপনের পকেটে। ফলে অভিবাসন ব্যয় গিয়ে দাঁড়ায় সাড়ে ৪ লাখ থেকে ৬ লাখ টাকায়।

    জনশক্তি পাঠানোর খাতকে সিন্ডিকেটমুক্ত করার দাবি ও সিন্ডিকেটের মূল হোতা এবং জড়িত সকলের শাস্তি দাবি করে বায়রা যুগ্ম-মহাসচিব ফখরুল ইসলাম বলেন, বিগত স্বৈরাচার সরকারের আমলে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে সিন্ডিকেট সৃষ্টি করা হয়। যার মূল হোতা ছিলেন বায়রার সাবেক সভাপতি রুহুল আমীন ও কাজী মফিজুর রহমান। এই হোতাদের সহযোগিতা করতেন মন্ত্রী-এমপি, আওয়ামী লীগের নেতারা। সিন্ডিকেটে রহুল আমীনের সঙ্গে ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম হাজারী, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন আহমেদ।

    তিনি আরো বলেন, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সেই সময় ৫০ হাজার শ্রমিকের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। তাদের প্রত্যকের কাছ থেকে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে। ফলে এই সেক্টরের উদ্যোক্তারা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সরকারের মাধ্যমে সম্পাদিত এমওইউতে বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সির সিলেকশন করার জন্য মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো প্রকার ক্রাইটেরিয়া ছাড়াই ঘুষের মাধ্যমে রুহুল আমিন স্বপন ও তার মালয়েশিয়ান পার্টনার দাতো শ্রী আমিন নিজেদের পছন্দমতো রিক্রুটিং এজেন্সি সিলেকশন করেন।

    ফখরুল ইসলাম আরো বলেন, সিন্ডিকেটের মূল হোতা রুহুল আমিন স্বপন ও তার মালয়েশিয়ান পার্টনার দাতো শ্রী আমিন নিয়ন্ত্রণকারী, জড়িত সকলকে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে। এছাড়াও দুই দেশের এমওইউ সন্নিবেশিত বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সি মালয়েশিয়া সরকার সিলেকশন করার সুযোগ বাতিল করতে হবে। রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি সিলেকশন করবে নিয়োগকর্তা। সিন্ডিকেট মুক্ত সকল এজেন্সি কম খরচে বা বিনা খরচে কর্মী পাঠানোর জন্য মন্ত্রণালয় পক্ষ থেকে সেন্ট্রাল অনলাইন পদ্ধতিসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নেপালসহ অন্যান্য ১৩টি দেশ থেকে মালয়েশিয়া যে প্রক্রিয়ায় কর্মী গ্রহণ করে ঠিক বাংলাদেশ থেকেও একই পক্রিয়ার শ্রমিক প্রেরণের দাবি জানাচ্ছি।

    বায়রা’র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, বিগত স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদি সরকারের আমলে যে অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের এমপি-মন্ত্রীদেরকে দিয়ে যেভাবে সিন্ডিকেট করে এই জনশক্তি রপ্তানি খাতকে দুর্ভিতায়ন করা হয়েছে। আমরা মনে করি এই সেক্টরে আর কোনো প্রকার সিন্ডিকেটকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসের বিশ্ব ব্যাপি খ্যাতি আছেন এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল তিনিও একজন স্বচ্ছ ব্যাক্তি। আমরা চাইনা যে তাদের সময়, তাদের আমলে নতুন বাংলাদেশে আর কোনো প্রকার সিন্ডিকেট হোক।

    ফখরুল ইসলাম আরো বলেন, বিশেষ করে মালয়েশিয়ার শ্রম বাজার যেন সকলের জন্য উন্মুক্ত হয় এবং কর্মীরা যেন কম খরচে মালয়েশিয়া যেতে পারে। আমাদের সেই ব্যবস্থা করতে হবে। আর যিনি সিন্ডিকেটের মূল হোতা বেস্টিনেটের এফডব্লিউসিএমএইচ তারা যে এই সেক্টরে অনিয়ম-সিন্ডিকেট, দুর্নীতি করেছে, এই এফডব্লিউসিএমএইচের কার্যকারিতা বাতিল করতে হবে এবং ম্যান্যুয়াল পদ্ধতি অথবা অন্য কোনো পদ্ধতির মাধ্যমে শ্রমিক পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এই পদ্ধতির মাধ্যমেই কর্মীর প্রতি যেই ১ লক্ষ ৭ হাজার করে টাকা দিতে হয়েছে তা চরম রকমের দূর্ভিতয়ন হয়েছে। এই চাঁদাবাজির বিচার হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।

    তিনি বলেন, সিন্ডিকেটের কারণে অনিয়ম হয়েছে, দুর্নীতি হয়েছে এবং অতিরিক্ত চাঁদা দিতে হয়েছিলো। সেই কারণে দেশের শুনাম নষ্ট হয়েছে। সেই সঙ্গে মালয়েশিয়ার সরকারেরও শুনাম নষ্ট হয়েছে। আমাদের কর্মীরা প্রতারিত হয়েছে। দেশের ২ হাজার ৫০০ এর বেশি রিক্রুটিং এজেন্সির মধ্যে ৯৫% এজেন্সি বৈষম্যর শিকার হয়েছে। আমরা মনে করি এই সিন্ডিকেটদের আর সুযোগ দেওয়া যাবে না।

    মালয়েশিয়ায় মূল হোতা দাতো শ্রী আমিনের কাছে এই বিপুল অংকের টাকা অবৈধ উপায়ে পাঠানো হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। চক্র ফি হিসেবে কর্মীপ্রতি এক লাখ টাকা করে পাচার হয়েছে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। ভিসা বাণিজ্যের নামে পাচার হয়েছে আরও ৩ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে পাচারের পরিমাণ দাঁড়াবে অন্তত ৮ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা।

    জনশক্তি বিশ্লেষকরা বলেছেন, মালয়েশিয়ায় বাধ্য হয়েছে এই সিন্ডিকেটকে অনুমোদন করার এবং ব্যপারটি এমনভাবে দেখানো হয়েছে যে সিন্ডিকেট না হলে যেন কোনো ভাবেই বাংলাদেশ থেকে কর্মী প্রেরণ করা সম্ভব না। আমাদের দেশ থেকে যে পরিমাণ টাকা খরচ করে কর্মী পাঠানো হয়েছে অন্য দেশের কর্মীরা তার ধারে কাছেও এই পরিমাণ টাকা খরচ করে মালয়েশিয়া যায়নি। তাই দুই দেশের সরকারকেই এই সিন্ডিকেট সমস্যা সমাধান করতে হবে।

    প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, আমি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একটি বৈঠক করেছি, বৈঠকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তিনটি বিষয়ে আলোচনা করেছি। এর একটি হচ্ছে, মালয়েশিয়ার বন্ধ শ্রমবাজার পুনরায় চালু করা। পাশাপাশি রিক্রুটমেন্ট প্রসেসে যে ১০০ রিক্রুটিং এজেন্সির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল তা উন্মুক্ত করে দেওয়া। সব রিক্রুটিং এজেন্সি যাতে কাজ করতে পারে এবং প্রক্রিয়াটি যেন স্বচ্ছ হয় সে বিষয়ে কার্যকর প্রদক্ষেপ নেওয়া। তৃতীয়ত, কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি করা যায় কি না সে বিষয়টি ভেবে দেখতে। আমার কাছে মনে হয় তিনি এটি মানবিক দৃষ্টি থেকে বিবেচনায় নিয়েছেন।

    উল্লেখ্য এর আগে ২০০৯, ২০১৬ ও ২০১৮ সালে বন্ধ হয়েছিল মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার এই সিন্ডিকেটের কারণেই।

    বিআলো/তুরাগ

    এই বিভাগের আরও খবর
     
    Jugantor Logo
    ফজর ৫:০৫
    জোহর ১১:৪৬
    আসর ৪:০৮
    মাগরিব ৫:১১
    ইশা ৬:২৬
    সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১

    আর্কাইভ

    March 2025
    M T W T F S S
     12
    3456789
    10111213141516
    17181920212223
    24252627282930
    31